পরিবারের সলাত ত্যাগকারী লোকদের সাথে মিলেমিশে বসবাস করার বিধান কি?
সালাতের গুরত্ব ও মাহাত্ম্য ব্যাপারেপরিবারের সলাত ত্যাগকারী লোকদের সাথে মিলেমিশে বসবাস করার বিধান কি এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট প্রশ্ন ও উত্তরটি আজকের আর্টিকেল হিসাবে লিপিবদ্ধ করছি। সলাত বা স্বলাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক ইবাদাহ এর নাম। যার সালাত নাই তার ঈমান নাই স্পষ্ট হাদীস।
প্রিয় পাঠক, একজন মু'মিন ও কাফির ও মুশরিকের মাঝে পার্থক্য হচ্ছে সলাত বা নামাজ। কেউ গাফিলতি করে বা শয়তানের ওয়াসওয়াসায় নামাজ না পড়লে সে কাবীরাহ গোনাহগার এবং তার ভিতর নেফাক্বী রয়েছে। (আল-কুরআন)। তবে, ইচ্ছাকৃতভাবে যে সলাত ছেড়ে দেয় সে কুফরী করল। (আল-হাদীস)। নিম্নে প্রশ্নালোকে সলাত নিয়ে বলা হলো।
পেজ সূচীপত্রঃপ্রশ্ন ঃ জনৈক ব্যক্তি পরিবারের লোকদেরকে সালাতের আদেশ করছে। কিন্তু কেউ তার কথা শোনে না। এ অবস্থায় সে কি করবে? সে কি তাদের সাথে মিলেমিশে বসবাস করবে নাকি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবে?
উত্তরঃ পরিবারের এই লোকেরা যদি একেবারেই সালাত আদায় না করে তবে তারা কাফির ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত মুরতাদ। তাদের সাথে মিলেমিশে বসবাস করা জায়েজ নয়। কিন্তু তার ওপর আবশ্যক হচ্ছে তাদেরকে দাওয়াত দিবে।
আরো পড়ুনঃ সিজদার ক্ষমতা কতটুকু - সিজদার ফজিলত
বারবার অনুরোধ করবে, হতে পারে আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত করবেন। কেননা সালাত পরিত্যাগকারী কাফির, নাউজুবিল্লাহ। কোরআন,সুন্নাহ, সাহাবায়ে কেরাম ও বিশুদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গির দলিল।
যারা সলাত ত্যাগকারীকে কাফির বলার পক্ষপতি নয় তাদের দলিলগুলো চারটি অবস্থার বাইরে নয়।
ক. মূলত উত্তর দলিল সমূহে তাদের মতের পক্ষে দলিল নেই।
খ. সেগুলো এমন গুণ সম্পন্ন যে তা বিদ্যমান থাকা অবস্থায় সালাত পরিত্যাগ অসম্ভব।
গ. অথবা এমন কিছু ওজর ও অবস্থা উল্লেখ করা হয়েছে যে অবস্থায় সালাত পরিত্যাগ করা মার্জনীয়।
ঘ. অথবা উক্ত দলিল সমূহ আম বা ব্যাপক অর্থবোধক। সালাত পরিত্যাগকারী কাফের হওয়ার দলিলগুলো দ্বারা তা খাস বা বিশিষ্ট করা হয়েছে। সালাত পরিত্যাগকারী মু'মিন বা সে জান্নাতে প্রবেশ করবে বা সে জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে কোরআন-সুন্নাহর উক্তি সমূহে এরকম কথা উল্লেখ নেই। সুতরাং সালাত পরিত্যাগ করা কুফরি এ ব্যাপারে যে দলিল সমূহ উপস্থাপিত হয়েছে তা নিয়ামতের কুফরী বা ছোট কুফরি এরকম ব্যাখ্যা করার কোন অবকাশ নেই।
যখন কিনা সুস্পষ্ট হলো সালাত পরিত্যাগকারী কাফির মুরতাদ, তখন তার ব্যাপারে নিম্নলিখিত বিধানসমূহ প্রযোজ্য হবে।
প্রথমতঃ মুসলিম নারীর সাথে তার বিবাহ সম্পন্ন করা বৈধ হবে না। বিবাহের আক্বদ হয়ে গেলেও তা বাতিল বলে গণ্য হবে এবং তার জন্য উক্ত স্ত্রী হালাল হবে না। কেননা আল্লাহ মুহাজির নারীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, "যদি তোমরা জানো যে, তারা ঈমানদার, তবে আর তাদেরকে কাফিরদের কাছে ফেরত পাঠিও না। এরা কাফিরদের হালাল নয় এবং কাফিররা এদের জন্য হালাল নয়।" (সূরা মুমতাহিনা-১০)।
দ্বিতীয়তঃ বিবাহের বন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর যদি সালাত পরিত্যাগ শুরু করে তবে উক্ত বন্ধন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, স্ত্রী ব্যবহার তার জন্য হালাল হবে না। পূর্বে লিখিত আয়াত এর দলিল।
তৃতীয়তঃ সালাত পরিত্যাগকারীর যবেহ করা প্রাণীর গোশত খাওয়া জায়েজ হবে না। কেননা তা হারাম। ইয়াহুদী বা খ্রিস্টানের জবেহ করা প্রাণের গোশত খাওয়া আমাদের জন্য বৈধ। কেননা আল্লাহ আমাদের জন্য হালাল করেছেন। দেখুন সূরা মায়েদা 5 নম্বর আয়াত। অতএব সালাত পরিত্যাগকারীর যবেহ করা গোশত ইয়াহুদী-খ্রিস্টানের চাইতে অধিক নিকৃষ্ট।
চতুর্থতঃ সলাত ত্যাগকারীর জন্য বৈধ নয়, মক্কা বা তার হারাম সীমানায় প্রবেশ করা। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, "হে ঈমানদারগণ! মুশরিকগণ তো নাপাক। সুতরাং তারা যেন এ বছরের পর আর মসজিদে হারামে প্রবেশ না করে।" (সূরা তাওবা ২৮ নম্বর আয়াতের অংশবিশেষ)।
পঞ্চমতঃ সোলার ত্যাগকারীর কোন নিকট আত্মীয় মারা গেলে সে তাদের মিরাস লাভ করবে না। যেমন কোন সালাত আদায়কারী ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল, রেখে গেল একজন ছেলে এবং এক চাচাতো ভাই। কিন্তু ছেলে সালাত ত্যাগকারী আর চাচাতো ভাই সালাত আদায়কারী। এই অবস্থায় দূরের সেই চাচাতো ভাই মিরাস পাবে ছেলে পাবে না। কেননা ওসমান রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে, নাভী সাঃ বলেন,
"কোন মুসলিম কাফেরের মিরাস লাভ করতে পারবে না। কোন কাফের ও কোন মুসলিমের মিরাস লাভ করতে পারবে না।" (বুখারী ও মুসলিম)।
তিনি আরো বলেন, "ফারায়েয তথা মিরাস সমূহ তার অধিকারীদের মাঝে বন্টন করে দাও। কিছু অবশিষ্ট থাকলে মৃত ব্যক্তির নিকটতম পুরুষের জন্য নির্ধারিত হবে।" (বুখারী ও মুসলিম)। এ উদাহরণ প্রযোজ্য হবে সমস্ত ওয়ারিশদের ক্ষেত্রে।
ষষ্ঠতঃ সালাত ত্যাগকারী মৃত্যুবরণ করলে তাকে গোসল দেওয়া যাবে
না, কাফন পরানো যাবে না, যারা সালাত আদায় করা যাবে না, মুসলিমদের
গোরস্থানে তাকে দাফন করা যাবে না। তাকে কি করতে হবে? মাঠে-ময়দানে গর্ত
খনন করে পরিহিত কাপড়েই পুঁতে ফেলতে হবে। কেননা তার কোনই মর্যাদা
নেই।
এ ভিত্তিতে কোন লোক যদি মৃত্যুবরণ করে, আর তার সম্পর্কে জানা যায় যে সে সলাত
ত্যাগকারী, তবে জানাজা পড়ার জন্য তার লাশকে মুসলিমদের সামনে উপস্থিত করা বৈধ হবে
না।
সপ্তমতঃ কিয়ামত দিবসের সালাত ত্যাগকারীর হাশর-নাশর হবে ফেরআওন, হামান, ক্বারুন, এবং উবাই ইবনে খলফ এর সাথে। এরা হচ্ছে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কাফের, জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তাই সলাত ত্যাগকারী পরিবারের পক্ষ থেকে তার জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দোয়াও করা জায়েজ নয়। কেননা কাফের কোন দোয়া পাওয়ার উপযুক্ত নয়।
আল্লাহ বলেন, " নবী ও ঈমানদারের জন্য সমীচীন নয়, যে তারা কোন মুশফিকের জন্য
ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদিও তারা তাদের নিকট আত্মীয় হয় না কেন? যখন কিনা
প্রমাণিত হয় যে তারা জাহান্নামের অধিবাসী।"
আরো পড়ুনঃ শায়েখ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উছাইমিনের সংক্ষিপ্ত জীবনী
সুতরাং বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ানক। কিন্তু আফসোস মানুষ বর্তমানে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে। নিজেদের গৃহে এমন লোকদের স্থান দিচ্ছে যারা সলাত আদায় করে। অথচ এটা মোটেও ঠিক নয়। (আল্লাহই অধিক জ্ঞান রাখেন। ) মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাইমিনের বাংলা ফাতওয়া আরকানুল ইসলাম থেকে নেওয়া হয়েছে বিষয়টি, (পৃষ্ঠা ৩১০-৩১৩)।
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url