সুস্থ থাকতে পাতিলেবুর ব্যবহার ও উপকার এর জুড়ি মেলা ভার
আলু (Potatoes) এর তুলনা জগতে মেলেনাপাতিলেবুর অপর নাম কাগজি লেবু, আর এর বৈজ্ঞানিক নাম Citrus Limon (সাইট্রাস লিমন)। পাতিলেবু এবং এর রস বিভিন্নভাবে খেয়ে ও ব্যবহার করে নানান উপকার পাওয়া যায়। কাগজি লেব বা পাতিলেবু একাধিক কাজে লাগে।
সম্মানিত পাঠক, এটি রুপচর্চা থেকে শুরু করে বৈচিত্রময় রোগের চিকিৎসা হিসেবেও প্রয়োগ হয়। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, শরীর বিষমুক্ত করণ, ঠাণ্ডা জনিত সমস্যা দূরীকরণ, রোগ প্রতিরোরধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করণ সহ আরো অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়।
পেজ সূচীপত্রঃবৈজ্ঞানিক মতে পাতিলেবু বা কাগজি লেবুর উপকারিতা
লেবুর টক রসে আছে সাইট্রিক এসিড। লেবুর রস পেটের সব জীবাণু ধ্বংস করে। রক্ত শুদ্ধ করে। এতে আছে প্রোটিন, চর্বি, প্রাকৃতিক লবণ, শর্করা, ক্যালসিয়াম, পটাশ, ফসফরাস এবং লোহা। কাগজি লেবুতে ভিটামিন সি বেশি মাত্রায় রয়েছে। অতএব এটি স্কার্ভি ও রক্তপিত্ত রোগে খুব উপকারী। দাঁত থেকে রক্ত পড়াও বন্ধ করে। এতে ভিটামিন বি ও আছে।
আরো পড়ুনঃ যে সকল রোগের ন্যাচারাল উপকারী হতে পারে কাঁচা আমলকী
সকালবেলা খাওয়ার আগে খালি পেটে একটা পাতি লেবুর রস গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে লিভারের দোষ ও পিত্তের দোষ সারে এবং স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। এক পেয়ালা কড়া চায়ে একটা পাতি লেবুর রস মিশিয়ে খেলে মাথা ধরা সারে ও মন চাঙ্গা হয়ে ওঠে। পাতিলেবুর রস বহুমূত্র রোগে উপকারী। স্কার্ভি ও ও অস্থি সংক্রান্ত রোগের টাটকা লেবুর রসই মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে।
কয়েক ফোটা পাতি লেবুর রস পানিতে মিশিয়ে পান করলে চোখের জ্যোতি বাড়ে। শীতকালে হাত পা জ্বালা করলে ত্বক বা চামড়া ফেটে গেলে গ্লিসারিনের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে মাখলে উপকার পাওয়া যায়। চুলকানিতে, গায়ে সূর্যের বেশি তাপ লেগে গেলে যে কষ্ট হয় তাতে লেবুর রস বেশি উপকারী। বিছে বা বিষাক্ত পোকা যে জায়গায় দংশন করেছে লেবু ঘষলে ঘসলে ঐ জায়গার জ্বালা কমে যায়।
শরীরে কোন জায়গায় কেটে গেলে এক টুকরো কাপড় লেবুর রস ভিজিয়ে সেখানে জড়িয়ে রাখলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। লেবুর টক হলেও অম্লজনক নয়। অল্প পরিমাণে লেবুর রস খেলে অম্লত্ব নষ্ট হয়ে যায় এবং ক্ষারগুন বৃদ্ধি পায়।
পাতিলেবুর বিভিন্ন গুনাগুন ও ব্যবহার
দুই চামচ কাগজি লেবুর রস ও দুই চা চামচ আদার রস মিশিয়ে তাতে একটু চিনি মিশিয়ে খেলে বদহজমজনিত সব রকমের পেট ব্যথা সারে। লেবু আর পিয়াজের রস ঠান্ডা পানিতে গুলে খেলে বদহজমের জন্য যে পেটের অসুখ হয় তাতে উপকার হয়, এমনকি কলেরাতেও উপকার পাওয়া যায়।
শোয়ার সময় গরম পানিতে লেবুর রস গুলে খেলে সর্দি সারে। কিছুদিন ধরে এই ভাবে খেলে পুরনো সর্দিও সেরে যায়। অল্প লেবুর রস মধু সঙ্গে মিশিয়ে চেটে খেলে প্রবল-কাশি সেরে যায়। হাঁপানের আক্রমণ ও তৎক্ষণাৎ থেমে যাওয়ার আরাম পাওয়া যায়। লেবুর রস আঙ্গুলে লাগিয়ে দাঁতের মাড়িতে মালিশ করলে দাঁত থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
লেবুর রসে মধু মিশিয়ে বাচ্চাদের চাটিয়ে দিলে বাচ্চাদের দুধ তোলা বন্ধ হয়। লেবুর রসে চিনি ও পানি মিশিয়ে একমাস ধরে রাতে শোয়ার আগে খেলে বহু পুরনো কোষ্ঠকাঠিন্য সেরে যায়। একটি পাকা পাতিলেবুর রসে অল্প মধু মিশিয়ে চাটলে শরীরের স্থূলতা কমে ও শরীরের স্ফূর্তি আসে।পাকা পাতি লেবুর রসে সমপরিমাণ মধু দিয়ে অল্প গরম পানি মিশিয়ে আহারের পর সঙ্গে সঙ্গে পান করে নিলে ১-২ মাসের মধ্যেই মেদবৃদ্ধি কমে যায় এবং শরীরের বেড়ে যাওয়া মেদও ঝরে যায়। লেবুর রসের সরষের তেল মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। ঠান্ডা হলে ছেঁকে শিশিতে ভরে রাখুন। এবং এটি কানে দু ফোঁটা করে দিলে পুঁজ পড়া, চুলকানি, কানের ব্যথা এমনকি বধিরতার উপশম করে।
লেবুর খোসা লেবুর রসে পিষে পুলটিস তৈরি করে গরম করে বাধলে বা লেবুর রস ঘষলে নানা কারণে ত্বকের যে দাগ পরে তা দূর হয়। লেবু আর সরিষার তেল সমপরিমাণে মাথায় লাগিয়ে, তারপরে টক দই দিয়ে ঘষে মাথা ধুয়ে ফেললে, মাথায় ছোট ছোট ফুসকুড়ি হওয়া ও মাথার চামড়া শক্ত হয়ে যাওয়ার উপকার পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ মসুর ডালের ২৫টি উপকারিতা ও অপকারিতা
লেবুর রস মাথায় ভাল করে ঘষে নিয়ে চুল ধুয়ে ফেললে চুলের ময়লা দূর হয় এবং মাথার চুলকানি সরে। চুল চকচকে আর পরিষ্কার হয়। এক বালতি গরম বা ঠান্ডা পানিতে একটি লেবুর রস দিয়ে সেই পানিতে গোসল করলে চামড়া নরম ও উজ্জ্বল হয়।
কথাগুলো বলেছেন, ডাক্তার সাধন চন্দ্র লাহা (ভারত),সৌমেন দাস যিনি পুষ্টি বিশেষজ্ঞ পশ্চিমবঙ্গ, এবং সাধনা মুখোপাধ্যায়, বি.টি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
লেখকের শেষ মন্তব্য
সুস্থ থাকতে পাতিলেবুর ব্যবহার ও উপকার সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো ফুটিয়ে তুলেছি। সম্মানিত পাঠক, আর্টিকেলটি পড়লে পাতিলেবু বা কাগজি লেবু এবং এর রস কিভাবে খেলে উপকার পাবেন তা বুঝতে পারবেন। বিশেষ করে পাতিলেবুতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় নানান অসুখের প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার হয়। সর্দি-কাশির উপশমে প্রধান প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার হয়।
প্রিয় পাঠক, পাতি বা ছোট লেবু নিজেদের লাইফ স্টাইলে প্রয়োগ নিশ্চিত করুন আর সুস্থতা চর্চা করুন। আরো এমন ব্লগ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ইনশাআল্লাহ।
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url