মেয়েদের যে অসুখে যে ফল খাবেন
নানা রকম শারীরিক গন্ডগোলে ফলের ব্যবহারমেয়েদের যে অসুখে যে ফল খাবেন সম্পর্কে আজকে ব্লগ সংকলন করতে চলেছি। প্রাকৃতিক একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।বিশেষ করে মেয়েদের জন্য বিভিন্ন রোগে নির্দিষ্ট ফল খাওয়া উপকারী হতে পারে।
এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ভেতর থেকে সুস্থ রাখে। তবে সঠিক রোগে সঠিক ফল নির্বাচন করতে জ্ঞান থাকা জরুরী। কারণ প্রতিটি ফলে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন পুষ্টিগুণ যা নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তো চলুন ব্লগটি পড়া শুরু করি।
পেজ সূচীপত্রঃযেসব মহিলারা কাজকর্ম বিশেষ করে না এবং আরামে থাকেন তাদের হজম শক্তি কমে যায় এবং তাদের লিভার মন্থরগতিতে কাজ করে। এর থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয় এবং পাকস্থলীতে হজম না হওয়া পদার্থ জমতে থাকে। এইসব পদার্থের পচনের ফলে শরীরের নানা রকম ব্যথা যন্ত্রণা শুরু হয়, পেট ভার হয়, মাথা ব্যথা করে সবসময়ই একটা ঝিমুনি ভাব আসে।
আরো পড়ুনঃ সুস্থ থাকতে পাতিলেবুর ব্যবহার ও উপকার এর জুড়ি মেলা ভার
যারা এই সব ধরনের অসুখে ভুগছেন তারা যদি কম করে এক সপ্তাহ ফলের চিকিৎসা করে দেখেন এবং তার সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পানি খান তাহলে তাদের বদহজম এবং তৎ সংক্রান্ত যে অসুখ গুলো রয়েছে সেগুলো সেরে যাবে এবং পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে যে ফল সহজে পাওয়া যায় এবং খেলে সহ্য হয় সে ফলই খাবেন।
অনিয়মিত মাসিক
যেসব মহিলাদের নিয়মিত মাসিক হয় না তারা আঙ্গুরের রস খাবেন, এটা টনিক হিসেবেও কাজ করবে এবং এতে মাসিকও নিয়মিত হবে।
গর্ভবতী মহিলা
গর্ভবতী মহিলারা যদি নিয়মিত যথেষ্ট পরিমাণে আঙ্গুরের রস খান তাহলে তাদের বমি ভাব, মাথা ঘোরা ও মাথা ধরা কমবে। কোষ্ঠকাঠিন্য হবে না। তারা সুস্থ-সবল শিশু প্রসব করবেন এবং প্রসবের সময় কোন অসুবিধা হবে না। আঙ্গুরের রসের সঙ্গে যদি কিসমিস মিশিয়ে খাওয়া যায় তাহলে আরো বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
গর্ভের নয় মাসের শুরু থেকে প্রসবের দিন পর্যন্ত যদি প্রতিদিন সকালবেলা এক চা চামচ করে কাশ্মীরি বাদামের তেল বা পানি ভিজানো আট দশটি বাদাম খোসা ছাড়িয়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন তাহলে প্রসব বেদনা একেবারেই হবে না।
প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলা
মহিলারা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে বেশি ভোগেন এবং কোষ্ঠকাঠিন্যই যত স্ত্রী রোগের উৎপত্তির কারণ। মহিলারা স্বভাবতই একটু কোমল প্রকৃতির। প্রকৃতি মানুষকে অনেক রোগের হাত থেকে বাঁচায়। ফল প্রকৃতিরই দান। নিয়মিত ফল খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে নানাবিধ স্ত্রীর রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সম্মানিত পাঠক/পাঠিকা, প্রচুর পরিমাণ ফল খেয়ে ১২ মাসে কোষ্ঠকাঠিন্য কমানো এবং পেট পরিষ্কার রাখতে পারবেন।
কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা
প্রতিদিন দশ থেকে বারোটা করে কিসমিস দুধে ফুটিয়ে নিতে হবে তারপরে দুধের সঙ্গে কিসমিস গুলো খেয়ে নিন। দেখে দিতে হবে কিসমিসের রং যেন কালো হয় কিন্তু কিসমিস গুলো যেন পচা না হয়।
খাবারের তালিকায় বেশিরভাগ যেন শাকসবজি থাকে, ভাত ডাল কম খেলেই ভাল। আমলকির মোরব্বা এবং পেঁপের তরকারি খেলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। পেয়ারাও প্রচুর খাবেন। শাক সবজির মধ্যে বাঁধাকপি বেশি করে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।
পাকা আঙ্গুর আর পাকা পেঁপে যেন খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন থাকে। শীতের সময় শালগম পাওয়া যায়, শালগমের তরকারি খেলেও ভালো ফল পাওয়া যাবে। রাতের খাবারের তালিকা সেদ্ধ দালিয়া (গমের দানা ছোট ছোট করে ভাঙ্গা), পালং শাকের তরকারি, নাশপাতি ও পাকা ডুমুরের (আনজির) সালাদ খাবেন।
প্রতি রাতে দুটো করে পাকা কলা ও একটি পাকা পেয়ারা খেতে পারলে আরো ভালো। শুধু কলা যেন খাবেন না, তাতে কোষ্ঠকাঠিন্য আরো বাড়বে। আঙ্গুর খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে খুবই ভালো, আত্মা যদি না পারা যায় তাহলে তার বদলে নাশপাতি, আতা, পেয়ারা, কলা, পাকা পেঁপে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমবে এবং অনেক স্ত্রী রোগের হাত থেকে বাঁচা যাবে।
লিউকোরিয়া বা শ্বেত প্রদর রোগে বেল ও অন্যান্য ফল
মেয়েরা অনেকেই এই অসুখে ভোগেন। এতে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। এ অসুখের প্রধানত দুটি কারণ আছে, যার মাঝে একটি হলো নিয়মিত খাওয়া দাওয়া না করা এবং আরেকটি হলো অসংযত জীবন যাপন করা। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারলে ও সংযত জীবন যাপন করতে পারলে এই রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৬০ গ্রাম মতো (৪ টেবিল চামচ শাঁস) পাকা বেল দিনে তিন থেকে চারবার খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে শ্বেত-স্রাব অব্যর্থভাবে সেরে যায়। এই বেল যে কদিন খাবেন সে কদিন ডাল ভাত না খাওয়াই ভালো। আপেলের জ্যাম, আমলকির মোরব্বা নিয়মিত খেলেও এই রোগ সেরে যেতে পারে।
সকালে বিকালে এক টেবিল চামচ করে আঙ্গুরের রস খেলেও এই উপকার পাওয়া যাবে। গায়ের রঙের ফ্যাকাসে ভাব কমতে পারে এবং জরায়ুর দ্বার থেকে অনবরত জলীয় পদার্থ বেরোনো এতে কমে যাবে।
হিস্টিরিয়া
মাসিকের গন্ডগোল হলে অনেক সময় হিস্টিরিয়া রোগ দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে আঙ্গুরের রসের চিকিৎসায় বিশেষ উপকার পাওয়া যাবে।
অনিয়মিত মাসিক ও বহুদিন ধরে মাসিক চলতে থাকা
বেশি দিন ধরে মাসিক চলতে থাকলে শরীরের অনেক রক্ত বেরিয়ে যায় এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। নানাবিদ চিকিৎসায় যদি এ অসুখ না সারে তাহলে ফলের চিকিৎসা করে দেখুন।
পাকা কলার চিকিৎসা
সারাদিনের ৬-৭ টা পাকা কলা (যার যেমন সহ্য হবে) ছোট এলাচের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে। এই চিকিৎসা চলার সময় খাওয়া-দাওয়া একেবারে হালকা মানের করতে হবে। ভাজাভুজি একেবারেই খাওয়া যাবেনা। রান্নায় ঝাল মসলাও বাদ দেবেন।
নারিকেলের পানি, আখের রস, ফলসার রস, এছাড়া খেজুর, কাঁচা পানি ফল, কিসমিস এবং আঙ্গুর খেতে পারলে এইসব অসুখের উপশম হয়।
গর্ভাবস্থায় দুর্বলতা
অনেকেই গর্ভবতী হওয়ার পর খুবই দুর্বলতা বোধ করেন এবং তার সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গও দেখা দেয়। যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন তাদের কিন্তু এই দুর্বলতার ভাবটা অপেক্ষাকৃত কমই থাকে। ওষুধপত্রে যদি কাজ না হয় তাহলে দুর্বলতা দূর করতে যতটা পরিমাণে সহ্য হবে দুধ এবং ফল খাবেন এবং সংযত ভাবে জীবন যাপন করবেন।
মাখনের সঙ্গে মিশ্রি মিশিয়ে যতটা সহ্য হয় ততটা পরিমাণে খাবেন। এতে উপকার পাওয়া যাবে। দুধ এবং পাকা কলা উপকার দেবে, এক্ষেত্রে দুধের সঙ্গে একটু চিনি মিশিয়ে খাবেন। যাদের পক্ষে সম্ভব তারা কিসমিস বা তাজা আঙ্গুর খাবেন, তাছাড়া আপেল এবং আমলকি খেলেও দুর্বলতা কমে।
প্রসবের পর নানাবিধ উপসর্গ দেখা যায়। শরীরের দুর্বলতা বেশি হলে একটু আদার রস সামান্য গরম করে মধু মিশিয়ে খেলে ভালো হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয় সেই রকম খাবার খেতে হবে। দুধে ১০ থেকে ১২ টা কিসমিস ফুটিয়ে একটা একটা করে খেয়ে দুধটা পান করে নেবেন। যদি সহ্য হয় তাহলে দিনে দুবার করে খেতে পারলে ভালো হয়।
হার্টের অসুখে ফল
বিশেষ করে বিত্তবান বাড়ির মেয়েদের হাটের অসুখের কথা বেশি শোনা যায়। কারণ তারা বেশি মশলাপাতি দেওয়া ও ঘি দেওয়া দামি দামি খাবার খান। অনেকে আবার অনিয়মিত জীবন যাপন করেন। তাদের বুক ধড়ফড়ানি, বুকে ব্যথা এসব অসুখ প্রাই হয়। ওষুধ পত্রে কাজ না হলে ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে হার্টের উন্নতি হবে।
আরো পড়ুনঃ আলু (Potatoes) এর তুলনা জগতে মেলেনা
নারিকেল, নাশপাতি, আপেল, পানিফল, আমলকির মোরব্বা ও ফলসা ইত্যাদি নিয়মিত খেলে উপকার পাবেন। নারিকেলের পানি কিংবা ডাব ও হাটের অসুখে খুবই উপকারী। কথাগুলো ইন্ডিয়ান কয়েকজন বিশেষজ্ঞ, পুষ্টিবিদ এবং সুচিকিৎসকের। যাদের নামগুলো যথাক্রমে, সাধন চন্দ্র লাহা, সৌমেন দাস এবং সাধনা মুখোপাধ্যায়।
লেখকের শেষ মন্তব্য
মেয়েদের যে অসুখে যে ফল খাবেন সম্পর্কিত বিষয়ে আর্টিকেলটি সংকলন করেছি। প্রিয় পাঠক, মেয়েদের স্বাস্থ্যের ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। সঠিক সময়ে সঠিক ফল পাওয়ার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব। প্রাকৃতিক এই খাবারগুলো কেবল রোগ প্রতিরোধ নয়, শরীর ও ত্বককে উজ্জ্বল ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফল যোগ করার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের অংশ হিসেবে ফল হতে পারে আপনার নিত্যদিনের সঙ্গী। আরো এমন আর্টিকেল পেতে সাথেই থাকুন ইনশাআল্লাহ।
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url