ইমাম ত্বহাবী (রহ.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী জানুন
ইমাম বুখারী সংক্ষিপ্ত জীবনীইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহর সংক্ষিপ্ত জীবনী অনেকের জানার ইচ্ছা হয়, বিশেষ
করে যারা জীবন থেকে জ্ঞান নিয়ে নিজেদের জীবনে প্রতিফলনের প্রবল আগ্রহ থাকে
তারা। তো ইমাম আবু জা'ফর আত-ত্বহাবী একজন অত্যন্ত বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন।
প্রিয় পাঠক, তিনি প্রথম দিকে যদিও শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন, কিন্ত
পরবর্তীতে হানাফী মাযহাবের সত্যিকার ও একনিষ্ঠ অনুসারে হয়ে যান। তবে তিনি আবু
হানীফা (রহ) এর তাকলীদ বা অন্ধ অনুসরণ করতেন না। নিম্নে বিস্তারিত ও সংক্ষেপে তার
সম্পর্কে লিখছি তার কিতাবের এক ব্যখ্যা গ্রন্থ থেকে।
আত-ত্বহাবী রহি. এর পরিচিতি
তিনি হলেন আবু জা'ফর আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে সালামা আল আজদী আত-ত্বহাবী
রহিমাহুল্লাহ। তিনি ছিলেন হাদিসের হাফেজ, ইমাম, ফক্বীহ, প্রখ্যাত মুহাদ্দিস এবং
মিশরের হানাফী ফক্বীহদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আলেম। ঐতিহাসিকদের বিশুদ্ধ মতে ২৪৯
হিজরী অনুসারে ৫৫৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি মিশরের ত্বহা নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ
করেন।
তার পূর্বপুরুষগণ যেহেতু ইয়ামানের প্রখ্যাত আজদ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তাই
তাকে আজদিও বলা হয়। আর তিনি যেহেতু মিশরের ত্বহা নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তাই
তার জন্মস্থানের দিকে সম্বন্ধ করে তাকে ত্বহাবী বলা হয়।
জন্ম ও শৈশব
দিনদার ও আলেম পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন তিনি, সে হিসাবে তিনি শৈশবকাল থেকে দ্বীনি
পরিবেশে লালিত পালিত হন। শিশুকাল থেকেই তার মধ্যে এলেম অর্জনের প্রতি অসাধারণ
অনুরাগ পরিলক্ষিত হয়। প্রথমত তিনি তার পিতা মুহাম্মদ ইবনে সালামার নিকট থেকে
শাফেয়ী ফিক্বহের মূলনীতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন।
আরো পড়ুনঃ হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) এর জীবনী (পর্ব-১)
সে সময় তার মামা আবু ইব্রাহিম আল মুযানী ইমাম শাফেয়ী এর সবচেয়ে বড় শিষ্য এবং
শাফিয়ী মাযহাবের সবচেয়ে বিচক্ষণ ফকিহ ছিলেন। তার পরিবারের অন্যান্যরাও শাফেঈ
ফিফহের অনুসারী ছিলেন। তাই তিনি ও প্রথম জীবনে শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন।
কিন্তু পরবর্তীতে তিনি শাফেয়ী মাযহাব পরিত্যাগ করে হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয়ে
যান।
শিক্ষালাভ
লেখাপড়ার বয়সে উপনীত হওয়ার সাথে সাথে তিনি জ্ঞান অর্জন শুরু করেন। তার শিক্ষা
জীবনের সূচনা হয় তার মামা আবু ইব্রাহিম ইসমাইল ইবনে ইয়াহিয়া আল মুজানি
রহিমাহুল্লাহ নিকট। তার মামা আবু ইব্রাহিম ছিলেন ইমাম শাফি রহমাতুল্লাহর ছাত্রদের
মধ্যে সবচেয়ে বড় ফকিহ এবং ইমাম শাফিঈর এলমের ভান্ডার।
তার মামার নিকট থেকে সর্বপ্রথম জ্ঞানচর্চা শুরু করলেও জ্ঞানপিপাসা নিবারণ করার
মানসে স্বীয় আবাসস্থল থেকে মিশরে আসেন। এছাড়াও তিনি জ্ঞান আহরণের জন্য অনেক
জায়গা সফর করেন। যেখানেই কোন জ্ঞান তাপসের সন্ধান পেতেন তিনি সেখানে গিয়ে
উপস্থিত হতেন এবং জ্ঞান পিপাসা নিবারণ করতেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি ২৬৮ হিজরীতে
সিরিয়া গমন করেন।
তা ছাড়া বায়তুল মুকাদ্দাস, আসকালান ইত্যাদি স্থানে সফর করে বিভিন্ন মনিষী থেকে
হাদিস ও অন্যান্য বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। ফিকহ শাস্ত্রে তার জ্ঞানের সীমা
প্রশস্ত হওয়ার সাথে সাথে তিনি অনেক ফিকহী মাসআলার ক্ষেত্রে দিশেহারা হতে লাগলেন।
তার মামার নিকট এসব মাসআলার কোন সমাধান খুঁজে পেতেন না।
এসব মাসআলার সমাধানের ক্ষেত্রে তিনি তার মামার আচরণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে
লাগলেন। তিনি দেখলেন তার মামা আশ শাফেয়ী মাযহাবের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে এসবের কোন
সমাধান না পেয়ে ইমাম আবু হানিফার ছাত্রদের কিতাব সমূহের প্রতি প্রায়ই ইঙ্গিত
করেছেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই তিনি ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ মতকে প্রাধান্য দিতে
লাগলেন।
তার মামা ইসমাইল আল মোজানি হানাফী মাযহাবের যেসব মাসআলা গ্রহণ করেছেন তা তিনি
"মুখতাসারুল মুজানি" নামক কিতাবের সংকলন করেছেন।
ইমাম ত্বহাবী রহ. এর মাযহাব পরিবর্তন
প্রথম জীবনে তিনি শাফিয়ী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু তার বোধশক্তি বৃদ্ধি
যতই বাড়তে থাকে তার সামনে জ্ঞান অর্জন ও গবেষণার দ্বার ততোই উন্মুক্ত হতে থাকে।
এ সময় হানাফী মাযহাবের প্রতি তার মামার আগ্রহ দেখে ইমাম তহাবি রহিমাহুল্লাহ
হানাফী মাযহাবের কিতাব গুলোর প্রতি গভীর দৃষ্টি দিতে লাগলেন এবং দ্বীনের মূলনীতি
ও শাখা মাসালা সমূহের ক্ষেত্রে তাদের পদ্ধতি গুলো অধ্যায়ন করতে লাগলেন।
বলা হয়ে থাকে যে, তাকে যখন মাজহাব পরিবর্তন করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলো
জবাবই তিনি বলেছেন আমার মামা মুজানি হানাফী মাযহাবের গ্রন্থ সমূহ অধিক অধ্যায়ন
করতেন, তাই আমিও মামার অনুসরণ করে হানাফী মাযহাবের কিতাবগুলো অধ্যায়ন করা শুরু
করি। আমার কাছে শাফিঈ মাযহাবের তুলনায় হানাফী মাযহাবের দলিল প্রমাণ গুলো অধিক
মজবুত ও অকাট্য বলে মনে হলো। তাই আমি শাফেয়ী মাযহাব ছেড়ে হানাফি মাজহাব গ্রহণ
করি।
অতএব ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহুর মাযহাব সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করার
পর তিনি তার মাযহাব পরিবর্তন করলেন এবং শাফিয়ী মাযহাব ছেড়ে হানাফি মাযহাবের
অনুসারী হলেন। তবে হানাফী মাযহাব গ্রহণ তাকে কতিপয় মাসালায় ইমাম আবু হানিফা
রহিমাহুল্লাহর মতের বিরোধিতা করতে এবং অন্যান্য ইমামের মতকে প্রাধান্য দিতে মোটেই
বাধা দিতে পারেনি।
মূলত তিনি ইমাম আবু হানিফার অন্ধ অনুসরণকারী ছিলেন না। অন্যান্য গবেষক আলিম এর
মতই তিনি সুস্পষ্ট দলিলের অনুসরণ এবং ইমামের কথার বিপরীত হলেও তিনি দলিলকে
প্রাধান্য দিতেন। তিনি শুধু মনে করতেন যে ফিকহের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফা
রহমাতুল্লাহি এর পদ্ধতি সর্বোত্তম। তাই তিনি এ ধারাতেই চলতেন এবং তাকে অনুসরণ
করতেন।
এজন্যই আপনি দেখবেন যে, তার হাদিসের কিতাব "শারহু মায়ানিল আছার" এর অনেক স্থানেই
ইমাম আবু হানিফার মতের বিপরীত মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
ইবনে জাউলাক রহিমাহুল্লাহ এর উক্তিতে আমাদের কথার সমর্থন রয়েছে। তিনি বলেন, আমি
শাইখের ছেলে আবুল হাসান আলী ইবনে আবু জাফর ত্বহাবী রহমাতুল্লাকে বলতে শুনেছি,
কাজী আবু ওবাইদ হারবুওয়াই এর ফজিলত ও বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে আলোচনা করার সময়
আমার বাবাকে বলতে শুনেছি, কাজী আবু ওবায়দ আমাকে বিভিন্ন মাসয়ালা সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করতেন।
একদা তিনি আমাকে একটি মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আমি তার জবাব দিলাম। আবু
ওবাইদ হারবুওয়াই বললেন, এটি ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ এর মত নয়। আমি তাকে
বললাম, হে কাজী আবু ওবায়েদ! আবু হানিফার যা বলেছেন আমিও কি তা বলতে বাধ্য? তিনি
বললেন আমি তো তোমাকে ইমামের মুকাল্লিদ মনে করতাম।
আমি বললাম গোঁড়া ও পক্ষপাতী লোক ব্যতীত অন্য কেউ তাকলীদ (অন্ধ অনুসরণ) করতে
পারেনা। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন নির্বোধ লোকেরাই তাকলীদ করে। অতঃপর কাজী আবু
ওবাইদ ও ইমাম ত্বহাবির মধ্যকার এ বিতর্কটি মিশরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লো এবং একটি
দৃষ্টান্ত স্বরূপ হয়ে গেল। পরবর্তীতে লোকেরা এটি মুখস্থ করে রেখেছে। এ বিতর্কটি
ইমাম তহাবীর সত্যান্বেষী হওয়া প্রমাণ করে।
ইমাম আবু হানিফার মাযহাব গ্রহণ এবং তার মাযহাব বর্জন সম্পর্কে ইবনে খাল্লিকান
বলেন, একদা তার মামা মুজানি সম্ভবত রাগান্বিত হয়ে তাকে বললেন আল্লাহর কসম! তোমার
মধ্যে আমি ভালো কিছু দেখছি না। এতে ইমাম তহবি রাগান্বিত হয়ে মামার মজলিস ত্যাগ
করে আবু জাফর ইবনে আবু ইমরান হানাফীর দরসে যোগদান করে হানাফী ফিকহে পান্ডিত্য
অর্জন করলেন এবং সমসাময়িক আলেমদের চেয়েও উচ্চ মাকামে উন্নীত হলেন।
ইমাম ত্বহাবী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি এর আকিদা-বিশ্বাস
যদিও তিনি ফেকহি মাসালা হানাফী ছিলেন, কিন্তু আকিদার মাসআলা আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামাত, আহলে হাদিস ও আছারের অনুসারী ছিলেন। তবে আকিদার কতিপয় মাসালায়
মুরজিয়া ফকিহদের মত পোষণ করেছেন। তার রচিত আল আকিদা আত তহাবিয়া এর মধ্যে
তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা গুলো অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীল ভাষায়
উপস্থাপন করেছেন।
সকল মাযহাবের মুসলিমদের নিকট আকিদা সংক্রান্ত এটি একটি প্রামাণ্য পুস্তিকা।
রয়েছে ছোট-বড় অনেক ব্যাখ্যা গ্রন্থ। আমরা সেগুলো থেকে আল্লামা ইমাম ইবনে আবিল
ইয রহিমা উল্লাহ কর্তৃক সংকলিত শারহুল আকিদা আত তহাবিয়া ব্যাখ্যা গ্রন্থটি থেকে
তাঁর জীবন চরিত লিখার চেষ্টা করেছি।
ইমাম আত তাহাবী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি এর শিক্ষকগণ
তার মামা মুজানি এবং আবু জাফর আল হানাফী ছাড়াও আরো অনেক ওস্তাদ বা শিক্ষকের নিকট
থেকে তিনি জ্ঞান অর্জন করেন। 268 হিজরিতে সিরিয়ায় তিনি কাজী আবু হাজেম এর সাথে
সাক্ষাৎ করেন, তার ও সেখানকার অন্যান্য আলেম বা বিদ্বানদের নিকট থেকে শিক্ষা
গ্রহণ করেন। কথিত আছে যে, তার 3 শতাধিক ওস্তাদ বা শিক্ষক ছিল।
ছাত্র জীবনের শুরু থেকেই ইলিম বা জ্ঞানার্জনের তার অত্যাধিক আগ্রহ ছিল। মিশরের
ওস্তাদের নিকট থেকে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি সে সময় বিভিন্ন ইসলামী অঞ্চল থেকে
মিশরের কোন আলেমের আগমনের সংবাদ শুনলেই তিনি তার সার্বক্ষণিক শিষ্যত্ব গ্রহণ
করতেন এবং তার ইলমি ভান্ডারের সাথে অন্যান্য আলেমদের ইলম একত্রিত করতেন। তার
ওস্তাদ বা শিক্ষকগণের মধ্যে রয়েছেন,
- হাদিসের ইমাম আহমদ ইবনে শুয়াইব ইবনে আলী আন-নাসায়ী, যার মৃত্যু ৩০৩ হিজরী সনে।
- নির্ভরযোগ্য বিশিষ্ট আলেম আহমাদ ইবনে আবু ইমরান আল কাজী, যার মৃত্যুর সন ২৮০ হিজরি।
- ইসহাক ইবনে ইব্রাহিম ইবনে ইউনুস আল বাগদাদী, যার মৃত্যু হয়েছে ৩০৪ হিজরি সনে।
- তার মামা প্রখ্যাত ফক্বীহ ইসমাইল ইবনে ইয়াহিয়া আল মুযানী, যার মৃত্যু ২৬০ হিজরী সনে।
- ইমাম শাফেয়ীদ প্রসিদ্ধ ছাত্র বাহার ইবনে নসর আল খাওলানি, যিনি মৃত্যুবরণ করেছেন ২৬৭ হিজরী সনে।
ইমাম ত্বহাবী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি এর ছাত্রগণ
ইমাম আত্মহাবি তার যুগে এলমের বিভিন্ন শাখায় পাণ্ডিত্য অর্জনের প্রসিদ্ধ হয়ে
ওঠেন। বিভিন্ন মাসআলার তাহকীক বা বিশ্লেষণ এবং দলিল বা প্রমাণের সূক্ষ্ম
মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তার সুনাম সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। তাই
তার ইলমের ভান্ডার থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য বিভিন্ন ইসলামী অঞ্চল থেকে ছাত্রগণ দলে
দলে এসে তার মজলিসে ভিড় জমাতে থাকে। ছাত্রগণ তাকে অত্যন্ত সম্মান দিতেন। তার
সুযোগ্য ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন,
- মিশরের কাজী আহমদ ইবনে ইব্রাহিম ইবনে হাম্মাদ, যার মৃত্যু ৩২৯ হিজরী সনে।
- ঐতিহাসিক আব্দুর রহমান ইবনে আহমাদ, যার মৃত্যু ৩৪৭ হিজরি সনে।
- সুলাইমান ইবনে আহমাদ ইবনে আইয়ুব আত তাবারী, যার মৃত্যু ৩৬০ হিজরী সনে।
- "আল কামেল ফিল জারহে ওয়াত তা'দীল" গ্রন্থের সম্মানিত লেখক আব্দুল্লাহ বিন আদি আল জুরজানি, যিনি মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৬৫ হিজরী সনে।
- ইসলামীক আলেম বা বিজ্ঞ বিদ্যানদের দৃষ্টিতে ইমাম আত্ ত্বহাবী রহ.
অনেক আলেম ইমাম তহাবীর প্রশংসা করেছেন। তারা বলেছেন, তিনি ছিলেন নির্ভরযোগ্য,
সুদৃঢ়, ফক্বীহ, বিচক্ষণ, হাদিসের হাফেজ এবং ধর্মভীরু আলেম। ফিক্বহ এবং হাদিস
শাস্ত্রে তার গভীর জ্ঞান ছিল।
ইবনে ইউনুস বলেন, ইমাম তহাবি ছিলেন নির্ভরযোগ্য, জ্ঞানে সুপ্রতিষ্ঠিত, মজবুত,
ফক্বীহ এবং বিচক্ষণ আলেম। তার জামানায় তার সমকক্ষ আর কেউ ছিল না।
ইমাম ইবনে কাসির রহিমাহুল্লাহ বিদায়া ও নেহায়া গ্রন্থে বলেন, তিনি ছিলেন
নির্ভরযোগ্য, জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত এবং হাদিসের সুদক্ষ হাফেজদের অন্যতম। ইমাম ইবনে
কাসীর রহমাতুল্লাহ আরো বলেন, তিনি ছিলেন হানাফী ফক্বীহ, প্রচুর কল্যাণকর ও
মূল্যবান পন্থের লেখক।
জামাল উদ্দিন আবুল মহাসিন ইউসুফ ইবনুল আমীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন, তিনি ছিলেন
ফিক্বহ, হাদিস, আলেমদের মতভেদ, আরবি ভাষা, নাহু-সরফ, ব্যাকরণ ইত্যাদি শাস্ত্রের
ইমাম।
ইমাম আত্ ত্বহাবী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি এর ইলমী খিদমত
সঠিক তথ্য উদঘাটন, সংকলন, সংগ্রহ, সুন্দর ও সাবলীল উপস্থাপনার দিক থেকে তার
লেখনীগুলো অনন্য এবং অতুলনীয়। তিনি যেসব মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন তার মধ্যে
রয়েছে,
১) আহকামুল কুরআনুল কারীম
২) ইখতিলাফুল ওলামা
৩) শারহু মাআনিল আ-ছার।
আর এই গ্রন্থে তিনি দলিলসহ ফিকহের মাসয়ালা সমূহ আলোচনা করেছেন। এতে তিনি
মতভেদপূর্ণ ফিকহী মাসালা গুলো উল্লেখ করার সাথে সাথে দলিলগুলো উল্লেখ করেছেন।
মাসআলা ও দলিলগুলো উল্লেখ করার পর সেগুলো পর্যালোচনা ও যাচাই বাছাই করে তার কাছে
যেটি সুস্পষ্ট হয়েছে সেটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এই কিতাবটি ছাত্রদেরকে গভীর
জ্ঞান অর্জনের প্রশিক্ষণ দেয়, ফিকহী মাসআলাগুলোতে আলেমদের মতভেদের কারণ
সম্পর্কেও অবগত করে এবং দলিল থেকে হুকুম-আহকাম বের করার যোগ্যতা বৃদ্ধি করে। এর
মাধ্যমে ছাত্রদের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ও যোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।
৪) সহীহুল আছার
৫) আস সুনানুল মাছুরাহ
৬) মুশকিলুল আছার
যেসব হাদিস বাহ্যিক দৃষ্টিতে পরস্পর সাংঘর্ষিক মনে হয় মুশকিলুল আছার গ্রন্থে
তিনি সেসব হাদিস উল্লেখ করে বৈপরীত্য ও অসংগতি দূর করেছেন এবং তা থেকে বিভিন্ন
হুকুম আহকাম বের করেছেন।
৭) আল আক্বীদাতুত ত্বহাবিয়্যাহ।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদাগুলো এতে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এই গ্রন্থটি
আলেমদের নিকট আকীদার একটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাব। এর বহু ব্যাখ্যা গ্রন্থ রয়েছে।
মূল কিতাবটি যেভাবে সকল মাযহাবের অনুসারীগণ কবুল করে নিয়েছেন, ঠিক তেমনি এর
ব্যাখ্যা গ্রন্থগুলোও সেভাবে গৃহীত হয়েছে। সমগ্র মুসলিম বিশ্বে এটি বিশেষভাবে
সমাদৃত এবং সর্বজন স্বীকৃত হয়ে আসছে।
৮) শারহুল জামে আল কাবির
৯) শারহুল জামে আস সাগীর
১০) কিতাবুশ শুরুত
১১) আন নাওয়াদের আল ফিকহিয়্যাহ
১২) আর রদ্দু আলা আবি উবায়েদ (আবু উবায়েদের প্রতিবাদ)।
১৩) আর রদ্দু আলা ঈসা ইবনে আবান(ইসা ইবনে আবানের প্রতিবাদ)।
এছাড়াও রয়েছে তার আরো অনেক মূল্যবান গ্রন্থ, যা দ্বারা মুসলিম জাতি কিয়ামত
পর্যন্ত উপকৃত হতে থাকবে এবং সদকায়ে জারিয়া হিসেবে তার কবরে সওয়াব পৌঁছতে
থাকবে।
ইমাম আত-ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহর ইন্তেকাল বা মৃত্যু
ইবনে খাল্লিকান ওফায়েতুল আইয়ান গ্রন্থে ইমাম ত্বহাবীর রাহিমাহুল্লাহ এর ওফাত বা
মৃত্যু সম্পর্কে বলেন যে, যুগ শ্রেষ্ঠ ফক্বীহ, সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী
জ্ঞান তাপস আল্লামা আবু জা'ফর তহাবি ৩২১ হিজরি মোতাবেক ৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ৮২ বছর
বয়সে জিলকদ মাসের বৃহস্পতিবার রাতে মিশরে ইন্তেকাল করেন, এবং সেখানকার
গোরস্থানেই তাকে দাফন করা হয়।
আরো পড়ুনঃ কে এই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ - মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের জীবন বৃত্তান্ত
হে আল্লাহ! তুমি তাকে নাবী, সিদ্দীক, শহীদ, এবং সৎ কর্মশীলের সাথে জান্নাতুল
ফেরদাউসে স্থান দিও। আমাদের সকলকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা, আমীন। (বিঃদ্রঃ জীবনীটি শারহুল আক্বিদাতুত ত্বহাবিয়্যাহ থেকে নেওয়া হয়েছে।)
লেখকের শেষ মন্তব্য
ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহর সংক্ষিপ্ত জীবনী এই আর্টিকেলে সুস্পষ্টরুপে তুলে ধরা
হয়েছে। প্রিয় পাঠক, ইমাম ত্বহাবী একজন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব ও খুব অসাধারণ মেধার
অধিকার ছিলেন এতে সন্দেহ কোনো অবকাশ নেই। তার হাদীসে পুস্তকে এক অসামান্য অবদান
রেখেছেন তিনি, বিশেষত ফিক্বহ শাস্ত্রে তার হুকুম আহকাম বের করার বিষয় দুনিয়ার
সবাই পছন্দ করে। আরো এমন সুন্দর সুন্দর জীবন সংক্রান্ত আর্টিকেল পেতে সাথেই থাকুন
ইনশাআল্লাহ।
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url