হাদিসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
হাদীছ অস্বীকারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসহাদিসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এখানে আজকের ব্লগে লিখতে যাচ্ছি। হাদিস শব্দটিকে বাংলায় হাদীস বা হাদীছ ইত্যাদি বানানে লিখা হয়। হাদীছ মানে কথা বা বাণী। পরিভাষায়, হাদীছ হলো রাসূল (সাঃ) এর কথা, কাজ ও মৌনসম্মতিকে হাদীছ বলা হয়।
সাহাবীদের কথা ও কর্ম কে আছার বলা হয়। যিনি হাদীছ বর্ণনা করেন তাকে আরবীতে রাবী বা বর্ণনা কারী বলা হয়। আর যিনি হাদীস শিক্ষা দেন তাকে মুহাদ্দিছ বা হাদীছ শিক্ষাদাতা রাবী বা হাদীছের শিক্ষক বলা হয়। নিচে ভূমিকার বাকী অংশ ও হাদীছ এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বলছি।
পেজ সূচীপত্রঃভূমিকাঃ
যিনি সহীহ বুখারীর দারস দেন তাঁকে শায়খুল হাদীছ বলা হয়। যারা কুরআন ও হাদীছের অনুসারী তাকে আহলে হাদীছ বলা হয় বা যিনি একাধিক হাদীছ এর সনদ ও মতন নিয়ে জ্ঞান রাখেন তাকে হাদীছবেত্তা বা মুহাদ্দিছ বলা হয়। কুরআনের পর ইসলামী শারীয়তের দ্বিতীয় উৎস বা কুরআনের ব্যখ্যাস্বরুপ হলো এই হাদিছ এই জন্য হাদীছের গুরুত্ব ও অনেক ও এ সম্পর্কে জানার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
আরো পড়ুনঃ শায়েখ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উছাইমিনের সংক্ষিপ্ত জীবনী
ইসলামী শরীয়তের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনা করল বুঝ যায় যে, এখানে হাদিস কে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। শারয়ী বিধান প্রণয়ন এবং মূলনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে হাদিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় উৎস। এখন চলুন বিভিন্নভাবে এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ করি।
আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেন, وما اتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا
১. আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ
হাদিস মেনে চলা হাদিসের অনুসরণ ও অনুশীলন করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং আল্লাহ তাআলা এ নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেছেন, অর্থাৎ আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের যা দেন তোমরা তা গ্রহণ করো তার যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে তোমরা বিরত থাকো। (সূরাঃ আল হাশর/৫৯, আয়াত ৭)
২. শরীয়তের দ্বিতীয় উৎস
হাদিসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার ২য় কারণ হলো, আল কুরআন ইসলামী শরীয়তের প্রথম ও প্রধান উৎস। হাদিস শরীয়তের দ্বিতীয় উৎস তাই। এ হলো পরোক্ষ ওয়াহী যা মহানবী (সাঃ) মানুষের উপযোগী করে নিজস্ব ভাষায় পরিবেশন করেছেন। আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে এরশাদ করেছেন,
وما ينطق عن الهوى ان هو الا وحي يوحى
অর্থাৎ"আর মুহাম্মদ (স.) নিজ প্রবৃত্তি থেকে কোন কথা বলেন না। তার নিকট প্রেরিত ওহী ছাড়া ওগুলো আর কিছুই নয়।
(সূরা ঃ আন-নাজম ৫৩, আয়াত ৩-৪)
এছাড়াও, তার জীবন আদর্শ, বক্তব্য ও জীবন দর্শন, এগুলো বাদ দিয়ে ইসলামিক শরীয়ত গতিহীন ও ব্যর্থ হতে বাধ্য।
৩. আল-কুরআন তাফসীর
হাদিস হলো কুরআনের সংক্ষিপ্ত মূলনীতির ব্যাখ্যা। কুরআন মজিদের ব্যাখ্যা দানের এ দায়িত্ব নিয়েই মহানবী স. আবির্ভূত হয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
وانزلنا اليك الذكر لتبين للناس ما نزل اليهم ولعلهم يتفكرون
অর্থাৎ, আর আমি আপনার নিকট কুরআন নাযিল বা অবতীর্ণ করেছি যেন আপনি মানুষের নিকট সে সকল বিষয়ে বর্ণনা করেন যেগুলো তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে। ( সূরা ঃ আন-নাহল ১৬, আয়াত ৪৪)।
সাহাবা রেজওয়ানুল্লাহ তা'আলা আলাইহিম কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও বিধান সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেছেন। তিনি তার হাদীস দিয়ে জবাব দিয়েছেন। এভাবে হাদিস পরিণত হয়েছে কুরআন মাজীদ এর ব্যাখ্যা গ্রন্থে। সেজন্য হাদিসে সাহায্য ছাড়া কুরআন যথাযথ ব্যাখ্যা, অর্থ এবং এর সঠিক উদ্দেশ্য নিরূপণ করা এক কথায় অসম্ভব।
৪. নাবী (সাঃ) এর প্রবর্তিত বিধান
কুরআন মাজীদে সকল ব্যবহারিক বিষয়ে বিস্তারিত বিধান (বলা) হয়নি। কেবল মূলনীতি পেশ করা হয়েছে। ব্যবহারিক দিকের প্রয়োজনীয় বিধান দেওয়া হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামকে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
يامرهم بالمعروف وينهاهم عن المنكر ويحل لهم الطيبات ويحرم عليهم الخبائث
অর্থাৎ, রাসূল (সা) তাদেরকে ভালো কাজের আদেশ করেন, আর তাদেরকে গর্হিত বা খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করেন। এবং তাদের জন্য ভালো ও উৎকৃষ্ট বস্তু হালাল করেন ও খারাপ কাজ হারাম করেন। (সূরাঃ আল-আ'রাফ ৭, আয়াত ১৫৭)।
নাবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রণীত এসব বিধি-বিধানের প্রামাণ্য দলিল হলো হাদিস। কাজেই তার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
৫. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন আদর্শ
হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা, কাজ এবং মৌন সম্মতি, নিদৃত ও জাগ্রত অবস্থার বিষয়াদী এবং অন্যান্য তৎপরতা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সংকলন করা হয়েছে। এর মধ্যেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন যেন বিস্তৃত বর্ণিত হয়েছে। আর বিশ্ব মানবের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ হলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ তায়ালা এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন, لقد كان لكم في رسول الله اسوة حسنة
অর্থাৎ, তোমাদের জন্য রাসূল (সাঃ) এর মধ্যে রয়েছে সুন্দরতম আদর্শ। ( সূরা ঃ আল-আহযাব ৩৩, আয়াত ২১)।
৬. মহানবী সাঃ এর আনুগত্যের উপায়
রাসূলুল্লাহ সঃ কে আনুগত্য করা বিশ্বের সকল মানুষের জন্য ফরজ বা আবশ্যিক কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে বলেন,
قل اطيعوا الله والرسول فان تولوا فان الله لا يحب الكافرين
অর্থাৎ, হে নবী আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এরআনুগত্য কর, যদি তোমরা এর থেকে বিমুখ হও তাহলে আল্লাহ অবশ্যই কাফেরদের ভালোবাসেন না। (সূরা ঃ আলে ইমরান ৩, আয়াত ৩২)।
কুরআন মাজীদের পাশাপাশি হাদিসের পূর্ণ অনুসরণ ও অনুশীলন হলো রাসূল সাঃ এর এর আনুগত্যের অবিকল্প উপায়। সেজন্য রাসূল সঃ এর আনুগত্যের মাধ্যম হিসেবেও হাদিসের গুরুত্বপূর্ণতা ও প্রয়োজনীয়তা প্রতীয়মান হয়।
৭. হাদিস রিসালাতের অন্যতম উপাদান
মহানবী সাঃ রাসুল সঃ হিসেবে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সকল বিষয় নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন হাদিস তার অন্যতম। আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তাআলা এ প্রসঙ্গে বলেন,
هو الذي بعث في الاميين رسولا منهم يتلوا عليهم اياته ويزكيهم ويعلمهم الكتاب والحكمة
অর্থাৎ, তিনিই সেই সত্তা যিনি নিরক্ষর লোকদের নিকট একজন রাসূল (সঃ) পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের নিকট তিলাওয়াত করে শোনান। তিনি তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমাহ। (সূরাঃ আল জুমুআহ ৬২, আয়াত ২)।
অত্র আয়াতে, হিকমাহ বলে হাদিসের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাই রিসালাতের অন্যতম উপাদান হিসেবে ও হাদিসের গুরুত্বপূর্ণ প্রতীয়মান হয়। হাদিসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা এখানেও ছাবেত হলো।
৮. জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস
রাসূল (সাঃ) নিরক্ষর ছিলেন। কিন্তু তিনি জ্ঞানহীন ছিলেন না, বরং আল্লাহ তায়ালা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী হিসেবে পরিণত করেন। এর সত্যতায়ই আল্লাহ তায়ালার বাণী ঃ তিনি (আল্লাহ) আপনাকে এমন বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না। আর (এটা) আপনার প্রতি আল্লাহর মহান অনুগ্রহ। (সূরা ঃ আন নিছা ৪, আয়াত ১১৩)।
যে জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী তথা হাদীছ মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের প্রয়োজনীয়তা জ্ঞানের নির্ভরযোগ্য উৎস।
৯. ইসলাম পূর্ণতার দলীল
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহ তায়ালা এর পূর্ণতা ঘোষণা করে বলেছেন,
اليوم اكملت لكم دينكم
অর্থাৎ, আজকে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম। (সূরা আল মায়িদাহ ৫, আয়াত ৩)।
আরো পড়ুনঃ ইমাম ত্বহাবী (রহ.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী জানুন
হাদিস হলো ইসলাম পূর্ণতার দৃষ্টান্ত। গতিশীল মানব জীবনে প্রতিনিয়ত উদ্ভুত নানা সমস্যার যৌক্তিক সমাধানের পথ উন্মুক্ত রেখে হাদিসি ইসলামকে পরিপূর্ণতার মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে।
লেখকের শেষ মন্তব্য
হাদিসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা মূলত অনস্বীকার্য। হাদীছের গুরুত্ব নিয়ে একটি কথা রয়েছে, আর তাহলো আসমানের নিচে যমীনের উপর কুরআনের পর যে বিষয়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে সেটি হলো সহীহুল বুখারী মানে হাদীছ। কুরআনের ব্যাখ্যা করা বা অস্পষ্ট বিষয়কে স্পষ্ট করার জন্য হাদীছই হলো জটিল ও কঠিনভাবে গুরুত্ব রাখে।
হাদিস হলো এমন ব্যাপার যা বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সনদ এর মাধ্যমে ইমামদের হাদীছ পর্যন্ত এসে সংকলিত হয়েছে এবং এটি রাসূলের ওয়াহীয়ে গায়রে মাতলূ কথা ও কাজ, অর্থাৎ যার শব্দ নবীজির নিজের কিন্ত ভাব বা অর্থ হলো রাসূলের। তো হাদীস হলো এমন বাণী যা তিনি নিজে বানিয়ে বলেননি (সূরা আন-নাজম)। যদি তিনি (রাসূল সা) বানিয়ে বলতেন তাহলে তার হুলকুমে হাত দিয়ে তার গলা চেপে ধরতেন, ভাবার্থ। সূরা হাক্কাহ্ ও ওয়াক্বিয়া। আরো এমন বিষয় পেতে সাথেই থাকুন।
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url