কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে মহান আল্লাহর অস্তিত্ব
হাদীছ অস্বীকারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসকুরআন ও সুন্নাহের আলোকে মহান আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে আজকের ব্লগ সংকলন করছি। আল্লাহ যে আছেন এবং তার আকার বা আকৃতি বা সুরতও রয়েছে ব্যাপারটি অনেকেই অস্বীকার করে বা বিশ্বাস করে না বা মানে না।
প্রিয়ে পাঠক, আল্লাহ একজন আছেন এবং তার অস্তিত্বও আছে বিষয়টি পানির মত সুষ্টপষ্ট কুরআন ও সুন্নাহ বা হাদীছের আলোকে। নিম্নে যাদের আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে বিশ্বাস নেই, বিশ্বাস কম বা ধারণা নেই তারা আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন ইনশাআল্লাহ তাহলে নিজের ধারণা পালটে যাবে।
পেজ সূচীপত্রঃভূমিকাঃ ঈমান ও আকিদা হচ্ছে আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী যেকোনো মুসলিমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষের আ'মাল, আখলাক, আচার-ব্যবহার তথা জীবনের সকল কর্মকান্ডের উপর ঈমান ও আকিদার রয়েছে বিরাট প্রভাব। তাই তার সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও আন্তরিকতা নিয়ন্ত্রিত হয় মূলত ঈমান ও আকীদার দ্বারা।
আরো পড়ুনঃ বিনয়-নম্রতা সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ও নাবী (সাঃ) এর হাদীছ
তাই একজন মুমিন ব্যক্তির জন্য আকিদার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরী। অতএব, ঈমানদারের আকিদাহ দিবালোকের মতো স্বচ্ছ, সুস্পষ্ট, পরিচ্ছন্ন এবং নির্ভুল থাকা অপরিহার্য। আল্লাহ সম্পর্কে কুরআন ও সুন্নাহ এর আলোকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মৌলিক আকিদা তা এই ব্লগটিতে আলোচনা করছি।
আল্লাহ আরশের উপর রয়েছেন
আল্লাহ তায়ালা আরশের উপর রয়েছেন এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেন, الرحمن على العرش استوى
অর্থাৎ, দয়াময় (আল্লাহ) আরশের ওপরে রয়েছেন। (সূরা ত্ব-হা ২০, আয়াত ৫)।
আরবি অভিধানে, استوى শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে পর্যায়ক্রমে, উপরে উঠা, উঁচু হওয়া, ঊর্ধ্বে আরোহন করা এবং অবস্থান করা ইত্যাদি। প্রত্যেকটি পাশাপাশি অর্থ বহন করছে। এছাড়াও, অন্যত্রে আল্লাহ তা'আলা বলেন, أم أمنتم من في السماء ان يرسل عليكم حاصبا অর্থাৎ তোমরা কি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গেছো যে, যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের উপর প্রচন্ড কংকর বর্ষণকারী এক ঝড় প্রেরণ করেন না? (সুরা মুলক, আয়াত নাম্বার ১৭)।
এছাড়া পবিত্র কোরআনে বহু জায়গায় রয়েছে, আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তা'আলা আরশের উপর রয়েছেন। যেমন সূরা মুলক ১৬ নম্বর আয়াত, সূরা আল মুমিনুন ১১৬ নম্বর আয়াত, সূরা ইউনুসের ৩ নম্বর আয়াত, সূরা আর রা'দ ২ নম্বর আয়াত, সূরা আল ফুরক্বান এর ৫৯ নম্বর আয়াত, সূরা আলিফ লাম মিম সাজদা ৪ নম্বর আয়াত, সূরা আল আ'রাফের ৫৪ নম্বর আয়াত, সূরা হাদীদ এর ৪ নম্বর আয়াত।
এছাড়া, আরো বিভিন্ন সহি হাদিসেও সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে যে আল্লাহ আরশের উপর রয়েছেন ব্যাপারটি।
عن ابي هريره رضي الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ينزل ربنا تبارك وتعالى كل ليلة الى السماء الدنيا حين يبقى ثلث الليل الاخر فيقول من يدعوني فاستجب له من يسالني فاعطيه من يستغفرني فاغفر له
অর্থাৎ, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের রব প্রত্যেক রাতে যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকী থাকে তখন পৃথিবীর আসমানে নেমে আসেন, বলেন কে দোয়া করবে আমি তার দোয়া কবুল করবো, কি আমার কাছে চাইবে আমি তাকে দেব, কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করব। (সহীহ বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ ও মুয়াত্তা মালিক ইত্যাদি)।
সহীহ বুখারীর অন্য এক হাদিসে রয়েছে
যায়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি তার অন্যান্য স্ত্রীদের ওপর গর্ব করে বলতেন যে, তোমাদেরকে তোমাদের পরিবারের লোকেরা আল্লাহর রাসূল সাঃ এর সাথে বিবাহ দিয়েছেন, আর আমাকে স্বয়ং আল্লাহ বিয়ে দিয়েছেন সাত আসমানের উপর থেকে।
আরেক হাদিসে রয়েছে,
আল্লাহর রাসূল সাঃ দাসী কে বললেন, আল্লাহ কোথায়? সে বলল আকাশে। এরপরে নবী বললেন, বলতো আমি কে? দাসী বলল আপনি আল্লাহর রাসূল সাঃ। আল্লাহর রাসূল সাঃ তখন বললেন, হে মুয়াবিয়া ইবনুল হাকাম! তুমি (দাসিটিকে) আজাদ করে দাও, কেননা সে মুমিনাহ নারী।
এছাড়াও, হাদিসের অন্যান্য রেওয়ায়াত বা বর্ণনা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে আল্লাহতালা আরশে আজিমে রয়েছেন। আরো স্পষ্ট হয় মেরাজ বা ইসরার হাদিস দ্বারা, যে হাদিসগুলো প্রায় আমাদের সবার জানা। হাদিসে বলা হয়েছে, রাসূল সাঃ কে প্রথম আকাশ, দ্বিতীয় আকাশ, দ্বিতীয় আকাশ, এভাবে সপ্তম আকাশ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সপ্তম আকাশের ওপর থেকে তাকে আরো উপরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যা রয়েছে বুখারী, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ সহ বিভিন্ন হাদিসের গ্রন্থে।
আহনাফদের মতামত
ইমাম মালিক বলেন, মহান আল্লাহ আরশে আছেন, কিন্তু তার জ্ঞান সর্বত্র বিরাজমান। (ইমাম আবু দাউদ এর মাসায়েলে ইমাম আহমাদ ২৩৬ পৃষ্ঠা, আত তামহীদ সপ্তম খন্ড ১৩৭ পৃষ্ঠা)।
ইমাম শাফিয়ী বলেন, সুন্নাত ভিত্তিক কথা হল যে আল্লাহ তার আরশে আছেন, আর তার আরশ আকাশের উপরে রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তার দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন তিনি যেভাবে চান। (ইজতেমাউল জুয়ূশিল ইসলামিয়া 156 পৃষ্ঠা)।
ইমাম আবু হানিফা রহিঃ কে এক মহিলা মহান আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে বলেন, মহান আল্লাহ আরশে আজিম হতে সব কিছু দেখেন শুনেন। আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান নন, বরং তার জ্ঞান সর্বত্র বিরাজমান। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, তাহলে আপনি কোরআনের এ বাণী সম্পর্কে কিছু বলুন, "তিনি (আল্লাহ) তোমাদের সাথেই আছেন" (সূরা হাদীদ, আয়াত নং ৪)।
জবাবে ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ বলেন, যখন তুমি তোমার কোন বন্ধুর কাছে কোন চিঠি লিখে বলে থাকো চিন্তা করিও না আমি তোমার সাথেই আছি, অথচ তুমি থাকো এক দেশে তোমার বন্ধু থাকে আর এক দেশে; অর্থাৎ তুমি তার সাথে আছো সাহায্য সহযোগিতায়। ঠিক তেমনি মহান আল্লাহ তাআলার জ্ঞান এবং তার সাহায্য সহযোগিতায় তোমার সাথে আছেন। (ফিকরুল আকবার, ইমাম বায়হাকির আসমা ওয়াস সিফাত ৪২৯ পৃষ্ঠা)।
এক জায়গায়, ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি বলে আল্লাহ তায়ালা আকাশে না জমিনে আমি তা জানি না, সে ব্যক্তি কাফির। কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেছেন যে, তিনি আসমানে আছেন। তা সত্ত্বেও সে অস্বীকার করল। (শরহে আকিদা আত তহাবিয়া, আল ফিরকাতুন নাজিয়া ২১-২২ পৃষ্ঠা)।
উল্লেখিত কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে আল্লাহ তায়ালা আরশের উপর আছেন কিন্তু যারা বলছে আল্লাহ সর্বব্যাপী বিরাজমান তাদের কথা উক্ত কুরআন সুন্নাহর মাধ্যমে ভুল প্রমাণিত হলো।
আল্লাহ নিরাকার নন
আল্লাহর নিরাকার নন এর পক্ষে কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামী উম্মাহর অতীত হক্বপন্থী কোন ইমাম বা আলেমদের সমর্থন নেই। এটি কুরআন সুন্নাহর সমর্থন বর্জিত একটি ভ্রান্ত মত ও বিশ্বাস। আর কুরআনের কোন আয়াত ও হাদিসের কোন সহীহ হাদিস দ্বারা একথার প্রমাণ পাওয়া যায় না যে, আল্লাহ নিরাকার বা তার কোন আকার নেই এ ব্যাপারটি।
কিন্তু এর বিপরীতে, কুরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর হাত, পা এবং চেহারা ও চোখ প্রভৃতি রয়েছে। তবে আল্লাহর এইসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিরূপ তা উদাহরণ দিয়ে বুঝানো যাবে না, মানে তার সাথে কারো তুলনা করা যাবে না।
কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেন, ليس كمثله شيء অর্থাৎ, কোন কিছুই আল্লাহর মত নয়। (সূরা আশ শুরা, আয়াত/১১)।
আল্লাহর যে চেহারা আছে এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর বাণী হলো, كل من عليها فان ويبقى وجه ربك ذو الجلال والاكرام অর্থাৎ, জমিনের উপর যা কিছু আছে সবই ধ্বংসশীল, আর রয়ে যাবে শুধু মহিমা ময় ও মহানুভ আপনার রবের চেহারা। (সূরা আর রহমান, আয়াত/২৬-২৭)।
অন্যত্রে আল্লাহ বলেন, ولا تدع مع الله الها اخر لا اله الا هو كل شيء هالك الا وجهه له الحكم واليه ترجعون অর্থাৎ, আর আপনি আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডাকবেন না, তিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই আর তার চেহারা ছাড়া সব কিছুই ধ্বংসশীল। হুকুম একমাত্র তারই, আর তার কাছেই তোমাদের ফিরে যেতে হবে। (সূরা ক্বসাস, আয়াত/৮৮)।
এছাড়াও, আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন, তোমরা সকলে কিয়ামতের দিন আল্লাহকে দেখতে পাবে। (সহীহ বুখারী, মুসলিম, তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ ইত্যাদি)।
আল্লাহ তাআলা এভাবে কোরআনের ১৪ বার তার চেহারার প্রমাণ দিয়েছেন। উল্লেখিত আলোচনা হতে প্রমাণ হয় যে, মহান আল্লাহর চেহারা আছে আর এর উপর ঈমান আনা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ওয়াজিব বা জরুরী।
আল্লাহর হাত আছে এর দলিল
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, قال يا ابليس ما منعك ان تسجد لما خلقت بيدي استكبرت ان كنت من العالين অর্থাৎ, আল্লাহ বলেন, হে ইবলিস! আমার দু'হাতে আমি যাকে সৃষ্টি করেছি তার প্রতি সিজদাবনত হতে কিসে তোমাকে বাধা দিল? তুমি কি অহংকার করলে নাকি তুমি অধিকতর উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন? (সূরা স্ব-দ, আয়াত/৭৫)।
এছাড়াও, সূরা আলে ইমরান আয়াত ২৬, সুরা ইয়াসিন আয়াত ৮৩, সূরা মুলক আয়াত ১, সূরা মায়েদা আয়াত ৬৪ এবং সূরা জুমার এর 67 নম্বর আয়াতেও সাদৃশ্যশীল অর্থবোধক আয়াত রয়েছে)।
এভাবে মহান আল্লাহ কোরআনের ১৩ টি স্থানে নিজের হাতের প্রমাণ দিয়েছেন।
হাদিস থেকে দলিল
عن ابي هريره رضي الله عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقبض الله الارض ويطوي السماوات بيمينه ثم يقول انا الملك اين ملوك الارض
অর্থাৎ, আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাআলা জমিনকে নিজের হাতের মুঠোয় নিবেন এবং আকাশমন্ডলীকে ভাঁজ করে ডান হাতে নিবেন; অতঃপর বলবেন, আজ আমিই মালিক বা অধিপতি, দুনিয়ার বাদশারা সব কোথায়? (সহীহ বুখারী)।
অন্য হাদিসে আল্লাহর বাম হাতের কথা উল্লেখ রয়েছে, যা রয়েছে সহীহ মুসলিমে। এ সকল কোরআনের আয়াত এবং আল্লাহর রাসূল সাঃ এর সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মহান আল্লাহর হাত রয়েছে, আর এর উপর আমাদের ঈমান রাখতে হবে।
মহান আল্লাহর পা রয়েছে এর দলীল
মহান আল্লাহ বলেন, يوم يكشف عن ساق ويدعون الى السجود فلا يستطيعون অর্থাৎ, যেদিন মহান আল্লাহর পায়ের পিন্ডলি প্রকাশ করা হবে, সেদিন তাদেরকে সিজদা করতে আহ্বান করা হবে, অতঃপর তারা সিজদা করতে সক্ষম হবে না। (সূরা কলাম, আয়াত/৪২)।
পবিত্র কুরআনের সূরা ক্বফের ৩০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, يوم نقول لجهنم هل امتلأت وتقول هل من مزيد অর্থাৎ, যেদিন আমি (আল্লাহ) জাহান্নামকে জিজ্ঞাসা করব, তুমি কি পুর্ণ হয়েছো? তখন জাহান্নাম বলবে, আরো বেশি আছে কি?
এ আয়াতের ব্যাপারে বিশ্ব নবী সাঃ বলেন,
على انس بن مالك رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال يلقي في النار وتقول هل من مزيد حتى يضع قدمه فتقول قط قط অর্থাৎ, আনাস বিন মালেক রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামের মধ্যে পাপীদের নিক্ষেপ করা হবে, আর আল্লাহ বলবেন, ও জাহান্নাম তুমি কি পূর্ণ হয়েছো? যখন জাহান্নাম বলবে হে প্রভু! আরো আছে কি? তখন মহান আল্লাহ তার পা জাহান্নামের মধ্যে রাখবেন। অতঃপর জাহান্নাম বলবে, যথেষ্ট হয়েছে যথেষ্ট হয়েছে। (সহীহ বুখারী)। আল্লাহর পা রয়েছে এর প্রমানে আরো একটি হাদিস বুখারীতে রয়েছে। যেটি রয়েছে আরবী বুখারী দ্বিতীয় খন্ডে, তাফসীর ইবনু কাসির চতুর্থ খন্ড ৫২ পৃষ্ঠা)।
মহান আল্লাহ তাআলার চোখ রয়েছে এর দলিল
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,
واصنع الفلك باعيننا ووحينا অর্থাৎ, (হে নূহ!), তুমি আমার চোখের সামনে আমার নির্দেশ অনুযায়ী একটি নৌকা তৈরি কর। (সূরা হুদ, আয়াত/৩৭)।
মহান আল্লাহ অন্যত্রে বলেন, واصبر لحكم ربك فانك باعيننا অর্থাৎ, আর আপনি আপনার প্রতিপালকের নির্দেশের জন্য ধৈর্য ধারণ করুন, কেননা আপনি আমার চোখের সামনেই আছেন। (সুরা তূর, আয়াত/৪৮)।
মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন,
لا تدركه الابصار وهو يدرك الابصار وهو اللطيف الخبير
অর্থাৎ, তাকে (আল্লাহকে) দুনিয়ার কোন চোখ দেখতে পায় না, বরং তার (আল্লাহর) চোখ সবকিছু দেখতে পায়। ( সূরা আনআম, আয়াত ১০৩)।
আল্লাহর চোখ রয়েছে এর প্রমাণে অসংখ্য সহীহ হাদিস রয়েছে। তোর মধ্যে একটি হাদিস হলো যেটি রয়েছে, সহীহ বুখারি, সহীহ মুসলিম এবং ফাতহুল বারীতে ৭১৩১।
মহান আল্লাহর শ্রবণ ও দর্শন শক্তি আছে
এর প্রমাণে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وهو السميع البصير অর্থাৎ, এবং তিনি (আল্লাহ) সবকিছু শুনেন এবং দেখেন। (আশ শুরা, আয়াত ১১)।
অন্যত্রে মহান আল্লাহ বলেন, وقال ربكم ادعوني استجب لكم অর্থাৎ, আর তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড় দিব। (সূরা আল মুমিন, আয়াত ৬০)।
উক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো তাহলে আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব, তার মানে আল্লাহ আমাদের ডাক শুনতে পান, অতএব আল্লাহ শ্রবণ বা শোনার শক্তি আছে এটি এখানেও প্রমাণিত হলো।
এছাড়াও, সহীহ বুখারী ও মুসলিমে অসংখ্য সহীহ হাদিস রয়েছে এ ব্যাপারে। অনেকে বলেন, আল্লাহর হাত, পা নাকি কুদরতি হাত পা। এর সঠিক সমাধান হলো নিম্নরূপ।
এ সম্পর্কে ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহর মুখমন্ডল ও দেহ রয়েছে। যেমন আল্লাহ কোরআনে বর্ণনা করেছেন, কোরআনের বর্ণনায় আল্লাহ চেহারা, হাত ও দেহের যে বিবরণ দেওয়া রয়েছে, তা আল্লাহর দৈহিক বৈশিষ্ট্য। আমরা তার ওই সকল অঙ্গের বিশদ বিবরণ অবগত নই। আর কেউ যেন আল্লাহর হাতকে কুদরতি হাত না বলে বা তার নেয়ামত না বলে। যারা তার হাতকে কুদরতি হাত বলে তারা কাদরিয়া ও মু'তাজিলা সম্প্রদায়ের লোক।
আরো পড়ুনঃ পরিবারের সলাত ত্যাগকারী লোকদের সাথে মিলেমিশে বসবাস করার বিধান কি?
ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহর ফিক্বহুল আকবার, মোল্লা আলী কারী হানাফী দারুল কুতুব ইসলামিয়া ৫৮-৫৯ পৃষ্ঠায় বিষয়টি স্পষ্ট করেন। উপর উল্লেখিত আলোচনায় প্রতীয়মান হচ্ছে যে, আল্লাহ আরশের উপরই রয়েছেন। আর আল্লাহর হাত, পা, মুখমণ্ডল চোখ এবং কান রয়েছে এবং তিনি কথাও বলেন এগুলো অকাট্যভাবে প্রমাণ করে। এ সমস্ত বিষয়ের প্রতি ঈমান আনা হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'য়াতের আক্বীদাহ।
সমাপনী কথা
ঈমান ও আক্বীদাহ্ যেমন মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি এগুলো জটিল ও কঠিন বিষয় বটে। তাই বর্তমান সময়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাঃ এর বিষয়ে আক্বীদাহর ক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্ব শতধা বিভক্ত। বর্তমান বিশ্বের অনেকেই কুরআন ও সহীহ সুন্নাহকে বাদ দিয়ে জাল ও জয়ীফ হাদিস কে পুঁজি করে কুরআন ও হাদিসের অপব্যাখ্যা করে নিজেদের আকিদাকে দূষিত করেছে।
এক্ষেত্রে, কুরআন ও সহীহ সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরে নিজেদের আকিদাকে পরিশুদ্ধ করাই ঈমানের দাবী। আল্লাহ আমাদের সকলকে সহীহ আকিদার উপর অবিচল থাকার তৌফিক দান করুন, আমীন! আজকের কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে মহান আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে আর্টিকেলটি কেমন লাগল জানাবেন কমেন্ট বক্সে। আরো এমন ব্লগ পেতে সাথেই থাকুন।
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url