হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) এর জীবনী (পর্ব-১)

চরিত্রই সম্পদ সম্পর্কে রচনাহযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) এর জীবনী ১ম পর্বে আপনাকে আহলান সাহলান। আবু বকর (রা) ছিলেন মক্কার একজন খুব নামীদামী ও বিশ্বস্ত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) এর খুব কাছের ও হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। 

হযরত-আবু-বকর-সিদ্দীক-(রা)-এর-জীবনী

প্রিয় পাঠক, বিশেষ করে তিনি দুনিয়াতেই জান্নাতের শুভ সংবাদ প্রাপ্ত একজন রাসুলুল্লাহ (স) এর সাহাবী বা সাথী ছিলেন। তিনি একাধারে নবীজী (সা) এর বাল্যকালীন বন্ধ, যৌবনকালীন ব্যবসায়ীক সঙ্গী, মধ্যবসয়সে শশুর এবং শেষ বয়সে ইসলামের মহান ও প্রথম খলীফা ছিলেন। নিম্নে বিস্তারিত।

পেজ সূচীপত্রঃ

ভূমিকাঃ

হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) এর জীবনী এক আর্টিকেলে লিখা সম্ভব নয়, প্রিয়গণ! কারণ, যেহেতু ইতিহাস সম্পৃক্ত বিষয় তাই পর্ব আকারে লিখব। প্রথম পর্বে তাঁর পরিচিতি ও ইসলাম গ্রহণ নিয়ে থাকবে। এগুলো ইতিহাসের বিষয় হওয়ার ফলে লেখাগুলো লম্বা হবে, তবে আপনি একজন ইতিহাস কৌতুহলী বা জানার আগ্রহী ব্যক্তি হলে জেনে খুব মজা পাবেন ইনশাআল্লাহ। তো চলুন দেরি না করে পড়া শুরুন!

আবু বকর সিদ্দীক রাযিয়াল্লাহু আনহুর পরিচিতি

হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) এর জীবনীর পরিচয় এখানে তুলে ধরছি। প্রিয় প্রিয়ে, জান্নাতের ১০ জন সুসংবাদপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি হলেন হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা)। তিনি রাসূলুল্লাহ (স.) এর জন্মের দুই বছর তিন মাস পর পবিত্র মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম আব্দুল্লাহ, তাঁর কুনিয়াত বা উপনাম ছিল আবু বকর। ইসলাম গ্রহণের পর রাসূলুল্লাহ (স.) তাকে সিদ্দীক বা অধিক সত্যবাদী, এবং আতীক বা আযাদ কিংবা স্বাধীন লকব বা উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।

আরো পড়ুনঃ ইমাম বুখারী সংক্ষিপ্ত জীবনী জেনে নিন কয়েক সেকেন্ডে

সময়ের ব্যবধানে তিনি সিদ্দীকে আকবর এবং আবু বকর এই দুই নামেই প্রসিদ্ধি লাভ করেন। এমনকি তার প্রকৃত নাম যে আব্দুল্লাহ অনেকেরই তা অজানা। তার পিতার নাম ছিল ওসমান ইবনে আমের, যার কুনিয়াত ছিল আবু কুহাফা, এবং আবু কুহাফা নামেই তিনি মানুষজনের কাছে পরিচিত ছিল। মায়ের নাম ছিল সালমা, কিন্তু তিনি উম্মুল খায়ের নামেই সুপরিচিত ছিলেন। 

বাবা-মা উভয়ের দিক থেকে হযরত আবু বকর এর বংশ তালিকা ঊর্ধ্বতন সপ্তম পুরুষ মুররা ইবনে কা'বে গিয়ে রাসুলে আকরাম স. এর বংশের সাথে মিলিত হয়। বাবার দিক হতে হযরত আবু বকরের নসবনামা বা বংশ পরম্পরা ছিল এরূপ: আব্দুল্লাহ ইবনে ওসমান ইবনে আমির ইবনে আমর ইবনে কা'ব ইবনে সা'দ ইবনে তামিম ইবনে মুররা ইবনে কা'ব। 

আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর পিতা আবু কুহাফা কুরাইশ বংশের একজন সম্মানিত মানুষ ছিলেন। বয়োবৃদ্ধ হিসেবে একদিক থেকে যেমন ছিলেন সকলের মুরুব্বী তদ্রূপ অগাধ ধান সম্পদের মালিকও ছিলেন তিনি। তিনি শুধু বিখ্যাত একজন ব্যবসায়ী ছিলেন না বরং গুরুত্বপূর্ণ গোত্রীয় ও সামাজিক কার্যকলাপেও তার মতামত ও পরামর্শ খুব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হতো। 

ফতহে মক্কা বা মক্কা বিজয় পর্যন্ত আবু কুহাফা তিনি যদিও ইসলাম গ্রহণ করেননি কিন্তু তার সুযোগ্য সন্তান হযরত আবু বকর রা. এর ইসলাম গ্রহণে তিনি কখনো বাধা সৃষ্টি করেননি। অবশ্যই হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কে দেখে তিনি কয়েকবারই মন্তব্য করেছিলেন যে এই সকল ছেলেরাই আমার ছেলেকে প্ররোচনা দিয়েছে। 

বাবু কুহাফা মক্কা বিজয়ের দিন ইসলাম গ্রহণ করেন। বার্ধক্য জনিত দুর্বলতার কারণে তিনি তার প্রিয় পুত্র হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর সাহায্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হন। এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এভাবে আস্তে দেখে বললেন আপনি আমাদের মুরুব্বী আপনি কেন এত কষ্ট করলেন আমি নিজেই আপনার কাছে যেতে পারতাম। 

এরপর রাসূলুল্লাহ স. এর হাতেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি আনুমানিক একশত বছর বেঁচে ছিলেন। এ ১০০ বর্ষের জীবনে ছেলের ইসলাম গ্রহণ ও ইসলামভিত্তিক জীবন আচরণ তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। ইসলামের পর্যায়ক্রমে উন্নতি এবং প্রবৃদ্ধি দেখেছেন। মক্কা বিজয়ের চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রবাহ প্রত্যক্ষ করেছেন। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকালের পর তার সুযোগ্য সন্তান হযরত আবু বক্কর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু খলিফা হিসাবে এর সংকটকালীন গুরু দায়িত্ব পালন থেকে শুরু করে ইন্তিকালের ঘটনাও তার নিজ চোখের সামনে ঘটেছে। সবচাইতে বড় কথা এটাই যে স্বয়ং তিনিও ইসলামের প্রতি এতদিনকার বৈরী মনোভাব পরিত্যাগ করেন। 

এবং অবশেষে এর সত্য ধর্মের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে পরম তৃপ্তি ও প্রশান্তি লাভ করেছেন। বহুতর ও বিচিত্র তরও অভিজ্ঞতার অধিকারী এ শত বছরের প্রবীণ মানুষটি শেষ বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর খেলাফত আমলের প্রথম বছর তাঁর ইহকাল ত্যাগ হয় মানে মৃত্যুবরণ করেন। 

হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. এর মাতার নাম ছিল উম্মুল খায়ের। উম্মুল খায়ের এর শাব্দিক অর্থ কল্যাণের মাতা। তার জীবন আচার ও চরিত্র গুনে মনে হয় তার সমগ্র জীবন যেন এই নামেরই বিশ্লেষণ ও কার্যকরী রূপান্তর ছিল। তিনি অত্যন্ত সোজা মেজাজে ছিলেন। স্বামী আবু কুহাফার অনেক পূর্বেই অর্থাৎ ইসলামের প্রাথমিক যুগে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। 

তখন পর্যন্ত মাত্র ৩৯ জন ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণও হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এরই ইসলাম প্রচারের ফল। রাসূলুল্লাহ সা নবুয়তের প্রথম পর্যায়ে আরকাম এর ঘরে নবদ্বীক্ষিত মুসলমানদেরকে ইসলামী শিক্ষা প্রদান করতেন, তখন পর্যন্ত তিনি প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার আদেশপ্রাপ্ত হন নাই। 

তখনকার এক সকালে হযরত আবু বকর রা. রাসূলুল্লাহ স এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে পেশ করেন আমার মা এসেছেন তাকে মুসলমান করে নিন। রাসূলুল্লাহ স তখন কালেমা পাঠ করিয়ে তাকে ইসলামে দীক্ষিত করেন। স্বামীর মত তিনিও দীর্ঘ আয়ু লাভ করেন। তিনি 90 বছর বয়সে দীর্ঘ ২৫ বছর ইসলামের ছায়াতলে থেকে সুযোগ্য সন্তান হযরত সিদ্দিকে আকবরের খেলাফত আমলে ইন্তেকাল করেন। ( কাত ইবনে সা'দ, ইসাবা, তারীখুল খিলাফা)। 

হযরত আবু বকর রা পিতা-মাতার অত্যন্ত স্নেহভাজন সন্তান ছিলেন। তিনি অত্যাধিক আদর যত্নের ভেতর দিয়ে লালিত পালিত হয়েছেন। তিনি ছিলেন স্বভাবজাত বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞানের অধিকারী। বয়সের সাথে সাথে তার জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা তীক্ষ্ণতর এবং ধীরে ধীরে তা আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে। শিশুকাল থেকে যৌবনের প্রারম্ভিক সময় অর্থাৎ 20 বছর বয়স পর্যন্ত তিনি পিতার সাথে থেকে ব্যবসা করেন। 

এরপর ব্যবসায়ের সমুদয় দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন। সদ্ব্যবহার, অতুলনীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও মাধুর্য, ব্যবসায়িক সততা, যোগ্যতা এবং দক্ষতার প্রেক্ষিতে সমগ্র মক্কা নগরীতে তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। বাণিজ্যিক দক্ষতা, বিশ্বস্ততা এবং ন্যায়পরায়ণতার কারণে তিনি যে সুখ্যাতি লাভ করেন তা তার পিতা আবু কুহাফার সুখ্যাতিকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ঘরে ঘরে তার সুখ্যাতি আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়। 

সে সময় কুরাইশ বংশের প্রভাব প্রতিপত্তি, ব্যবসায় এবং ধনাঢ্যতার দিক থেকে দেশ-বিদেশে যথেষ্ট খ্যাতির অধিকারী লোকজনের অভাব ছিল না। কিন্তু হযরত আবু বকর রা নিজ ব্যক্তিত্বের দ্বারা এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন যার ফলে কুরাইশ নেতাগণ পর্যন্ত তাকে বিশ্বাস করতেন এবং সম্মানে চোখে দেখতেন। 

যেকোনো গোদ্রীয় এবং সামাজিক কার্যকলাপে হযরত আবু বকর রা এর উপস্থিতি একান্ত অপরিহার্য বলে গণ্য হতো এবং তাঁর মতামত প্রাধান্য লাভ করত। তার উপর কুরাইশদের অগাধ আস্থা ছিল, তাই কোরাইশগণ তার কাছে নিজেদের ধন-সম্পদ গচ্ছিত রাখতে। 

তদানীন্তন কালে আরবে সর্বপ্রকারের পাপাচার পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান ছিল। প্রায় সকলেই সে সকল পাপাচারে অল্পবিস্তর লিপ্ত ছিল বলা যায়, এমন কোন সম্ভাব্য পাপাচার ছিল না যা তাদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল না। এমতাবস্থায় যে কয়জন মুষ্টিমেয় পূণ্য আত্মা এসব পাপাচারকে আন্তরিকভাবে ঘৃণা করতেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হযরত আবু বকর রা.। 

সামগ্রিক পর্যালোচনায় তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, নেক ও নিষ্কলুষ ব্যক্তি। নির্লজ্জতা, মন্দ কথা বলা, কটুক্তি করা, মদ পান ইত্যাদির প্রতি তার আন্তরিক ঘৃণা ছিল। কেউ তাকে মদ পান ইত্যাদির প্রতি আমন্ত্রণ জানালে তিনি বলতেন এ সকল কাজকে আমি নিজের জন্য অবমাননাকর ও অসম্মানজনক বলে মনে করি।  

সুতরাং এ সকল কাজে আমি অংশগ্রহণ করব বলে আপনারা কখনো আশা করবেন না। হযরত সিদ্দিকি আকবর এর প্রতি কুরাইশদের আস্থা বিশ্বাস এত গাঢ় ও গভীর ছিল যে তার উপস্থিতিতে তাকে বাদ দিয়ে অপর কাউকে তারা আস্থাশীল ও বিশ্বাসভাজন বলে চিন্তাই করতে পারত না। জরিমানা এবং রক্ত-পণের টাকা তিনি ব্যতীত অপর কারো কাছে গচ্ছিত রাখার প্রস্তাব উত্থাপিত হলে জনসাধারণের কাছে তা সমর্থন পেতো না। 

রাসূলুল্লাহ সা যেহেতু প্রকৃতিগতভাবে নির্মল চরিত্র সম্পন্ন এবং নিষ্পাপ ছিলেন তাই তার কাছে এমন ধরনের মানুষই বাঞ্চিত ও কাঙ্ক্ষিত ছিল। এজন্যই তিনি হযরত আবু বকর রা কে বাল্যকাল থেকেই অন্তরঙ্গ বন্ধু রূপে মনোনীত করেছিলেন। মক্কা নগরীতে রাসুলুল্লাহ সা এর নিজ বংশের লোক ব্যতীত অপর কোন লোক তার প্রকৃত বন্ধু থাকলে তিনি ছিলেন একমাত্র হযরত আবু বকর রা ই। 

তাদের পরস্পরের হৃদ্যতা এতই প্রগাঢ় ছিল যে ব্যবসা উপলক্ষে বা অন্য কোন কারণে মক্কার বাইরে গেলেও তারা একসাথে থাকতেন। একবার রাসূলুল্লাহ সা তার চাচা আবু তালিবের সাথে বাণিজ্যের কারণে সাম দেশে গেলেন, এসময় তার খিদমতের জন্য আবু বকর নিজের একজন গোলাম তার সাথে পাঠিয়ে ছিলেন। 

হযরত আবু বকর যেহেতু অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী, ভালো প্রকৃতির লোক ছিলেন, তাই তিনিও রাসূলুল্লাহ সা ব্যতীত অপর কাউকে হৃদয় থেকে বন্ধু বলে মনে করতেন না। দুজন বেশিরভাগ সময়ই একসাথে কাটাতেন এবং একে অপরের বাড়িতে যাওয়া আসা করতেন। তাদের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতর। 

হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক রা যদিও মূর্তি পূজার পরিবেশের প্রতিপালিত হয়েছেন, কিন্তু মূর্তি পূজা কি তিনি অন্তরের সাথে ঘৃণা করতেন। গরিবের প্রতি দয়া প্রদর্শন তার স্বভাবগণ বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল। শত্রুর সাহায্য করতেও তিনি কোন সময় কুণ্ঠিত হতেন না। 

যে সময় মজলিসে কোন রকমের অনাচার অপকর্ম কিংবা মদ পান ইত্যাদির সম্ভাবনা থাকতো সে সমস্ত মজলিসে তিনি কখনো যোগদান করতেন না। এসব বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে শ্রেষ্ঠ সুহৃদ হিসেবে মনোনীত করেছিলেন।

হযরত আবু বকর (রা) এর ইসলাম গ্রহণ 

সর্বপ্রথম কে ইসলাম গ্রহণ করেন এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন মতামত সম্বলিত চারটি বর্ণনা রয়েছে। যে সমস্ত বর্ণনায় ঐতিহাসিকদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত রয়েছে তা হল যে চারজন মহৎ ব্যক্তি প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। মহিলাদের মধ্যে হযরত খাদিজাতুল কুবরা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা, অল্প বয়স্ক বালকদের মধ্যে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, গোলামদের মধ্যে হযরত জায়েদ বিন হারিসা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, এবং বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু। 

হযরত ইমাম হাসান ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, আমার বাবা বলেছেন, হযরত আবু বকর রা চারটি বিষয়ে আমার চাইতে অধিকতর অগ্রগামী ছিলেন। এক নম্বর, তিনি প্রকাশ্যে নিজ ইসলাম গ্রহণের কথা ঘোষণা করেছিলেন। অথচ তখন কাফিরদের ভয়ে মুসলমানদেরকে নিজেদের ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন রাখতে হতো। 

কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও হযরত আবু বকর সব রকমের বিপদ-আপদ, নিগ্রহ-লাঞ্ছনার ঝুঁকি গ্রহণপূর্বক নিজের ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন। দুই নম্বর, ইসলাম গ্রহণের পর তিনিই প্রথম প্রকাশ্যে নামাজ পড়েছিলেন যা তখনকার সময়ে এক দুঃসাহসিক কাজ ছিল। তিন নাম্বার, তিনি আমার আগেই হিজরত করেছেন। 4 নম্বর, হিজরত কালে তিনি সাওর গুহায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সাথে থাকার সৌভাগ্য অর্জন করেন। (মাদারেজুন নবুওয়াত)। 

হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর ইসলাম গ্রহণ প্রসঙ্গে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি যার কাছেই ইসলামের দাওয়াত উত্থাপন করেছি, সে ইসলাম গ্রহণের পূর্বে নিজে নিজে বিবেচনা করেছে, একটু চিন্তিত হয়েছে কিংবা আমার নবুয়তের প্রমাণ চেয়েছে। 

কিন্তু হযরত আবু বকরকে ইসলামের দাওয়াত উত্থাপন করার সাথে সাথে কোন প্রকারের নিজস্ব চিন্তাভাবনা ব্যতীতই তিনি তা গ্রহণ করেছেন। এর একমাত্র কারণ, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাম কে বাল্যকাল থেকেই সত্যবাদী বলে জানতেন এবং তার মধ্যে নবুয়তের লক্ষণ ও প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তাই ইসলাম গ্রহণ করতে তাকে এতটুকুও দ্বিধাগ্রস্থ হতে হয় নাই। (তারিখুল ইসলাম)।

সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী এ চার জন মহৎ ব্যাক্তিদের মধ্যে কে প্রথম ঈমান আনয়ন করেছেন এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে বিভিন্ন মতামত পরিলক্ষিত হয়। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক একমতে পৌঁছেছেন যে প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী চার জনের মধ্যে উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা প্রথম এবং হযরত আবু বক্কর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ছিলেন সর্বশেষ ব্যক্তি। 

কেননা হযরত খাদিযা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর প্রিয় সহধর্মিনী। সব সময় তিনি রাসুল স এর সুখ-দুঃখের সমান অংশীদার ছিলেন। এমনকি প্রথম ওহী নাযিল হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ স এর মধ্যে যে অভূতপূর্ব ও অসাধারণ পরিবর্তন তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন তা ওপর কেউই করেন নাই। 

শেষ পর্যন্ত ওরাকা ইবনে নাওফেলের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কে তিনি নিয়ে গেছিলেন এবং সেখানেই তিনি নামূসে আকবর বা হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালামের কথা অবগত হয়েছিলেন। তাই তিনিই প্রথম ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন করেন। দ্বিতীয় ইসলাম গ্রহণকারী হিসেবে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর নাম উল্লেখ করা হয়, কারণ তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর আপন চাচাতো ভাই। 

উপরন্তু তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর ঘরেই লালিত পালিত হয়েছেন। তৃতীয় ইসলাম গ্রহণকারী হিসেবে নাম উল্লেখ করা হয় হযরত সাঈদ ইবনে হারেসা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর, কারণ তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর গোলাম। অর্থাৎ এই মহৎ ব্যক্তি ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাম এর পরিবারেরই সদস্য। 

আরো পড়ুনঃ কে এই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ - মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের জীবন বৃত্তান্ত

অতএব, তাদের ইসলাম গ্রহণ অপরাপর সকলের আগে হওয়ার এই ঘটনা প্রবাহের তেমন কোন অস্বাভাবিকতা নেই। অবশ্য রাসূল সা এর পরিবারের বাইরে দৃষ্টিপাত করলে সর্বপ্রথম হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নামই আসে। কারণ তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ স এর অন্তরঙ্গ বন্ধু মানুষ ও অত্যন্ত আপনজন। এই হিসেবে হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক রাসুল সা এর পরিবারের সদস্যবাদের পর সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী একজন মর্যাদাবান ব্যক্তি ছিলেন।

লেখকের শেষ কথা

হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) এর জীবনী এই আর্টিকেলে লিখতে গিয়ে শুধু তাঁর পরিচিতি ও ইসলাম গ্রহণ পূর্বক বিভিন্ন কথা ইতিহাসের বিভিন্ন বই থেকে সংকলন করেছি। প্রিয় পাঠক, এক পর্বে আবু বকর (রা) এর জীবন বৃত্তান্ত, পিতা-মাতা কে ছিলেন, নসবনামা বা বংশ পরম্পরা কেমন ছিল, তিনি মক্কা নগরীর সেই সময়ে কেমন মানুষ ছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে তাঁর কেমন সম্পর্ক ছিল ইত্যাদি বিষয়গুলো ফুটে উঠেছে বলে বিশ্বাস করছি। সামনের পর্বগুলোতে অন্যান্য বিষয় নিয়ে হাজির হব ইনশাআল্লাহ তায়ালা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url