ভাবসম্প্রসারণঃ অর্থই অনর্থের মূল (৫টি)
ভোগে সুখ নাই ত্যাগেই প্রকৃত সুখঅর্থই অনর্থের মূল ব্যাপারটি সত্যিই ভাবনা এবং চিন্তার বিষয়। প্রিয় পাঠক, অর্থ
কেন অনর্থের মূলে রয়েছে এ বিষয়ে ৫টি ভাবসম্প্রসারন লিখব আজকের ব্লগে। প্রচুর অর্থ
থাকলে উলটা পালটা খরচের মাধ্যমে অনেক মানুষ মাদকাসক্ত বা অন্য ধবংসাত্বক বস্তু
দ্বারা শেষ হয়ে গেছে-
এমন নজির হাজারো রয়েছে। বর্তমানে একটি ইউটিউব চ্যানেল ভিডিওতে লক্ষ্য করলাম একজন
প্রক্ষাত শিল্পির বিপথে যাওয়ার কারণেই এই অর্থ যা সে নিজেই স্বীকার করেছে। নিচে
অর্থ যে অনর্থের মূল সম্পর্কে ভাবসম্প্রসারণগুলো লিখছি।
অর্থই অনর্থের মূল
অর্থই অনর্থের মূল ব্যাপারটি নিয়ে ভূমিকায় বলছিলাম যে দেশের একজন নাম করা শিল্পির
সাক্ষাৎকার শুনছিলাম যেখানে তিনি বলছেন যে, আমি মিডল ক্লাস ফ্যামিলি থেকে উঠে
এসেছে। বছরে অনেকগুলো গানের শো করেন। যার ফলে, মোটা বছরে দেড় কোটি টাকা আয় হয়।
হঠাৎ এত টাকা করবে কী? অর্থাৎ টাকা বা অর্থ খরচের বৈধ আর কোনো পথ না পেয়ে তা
কুপথে বা অসৎ পথে ব্যয় করেন।
আরো পড়ুনঃ ২টি ভাবসম্প্রসারণঃ পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি এ প্রবাদটি ঘিরে
এতে সে এক সময় পুরাপুরি মাদকাসক্ত হয়ে যায় এবং এমনকি এক স্টেজ শোতে মাদক গ্রহণ
করে স্টেজে উঠে। এবং যার কারণে গানের রিলিক্সে সমস্যা হয় এবং সুর তাল লয়ের
ক্ষেত্রে বারবার ভূল করে। এবং এক সময় দর্শক সারি থেকে বোতল চালিয়ে তাকে মারাও হয়।
অবশেষে তার পরিচিত পুলিশ ফ্রেন্ড বা বন্ধুরা তাকে তাকে স্টেজ থেকে আরো আক্রমণ
থেকে সন্তর্পণে নামিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
এখানে বুঝা গেল সেই শিল্পি অর্থের প্রাচুর্য্যের জন্য লাইন চ্যুত হয়। এমনকি তাকে
রিহাবে পর্যন্ত যেতে হয়েছে। এবং সেখানে তাকে এক বছর থেকে এখন মোটামুটি সুস্থ
হয়েছে। নিম্নে ভাবসম্প্রসারণগুলো পড়ে আপনি একজন ছাত্র বা ছাত্রী হিসেবে পরীক্ষার
খাতায় লিখতে পারেন। ৫টি ভাবসম্প্রসারণ থেকে যেকোনোটি দিতে পারেন। অর্থ বা ভাবগত
দিক থেকে প্রায় সব একই। শুধু বাক্যের বিন্যাসগত পার্থক্য রয়েছে।
ভাবসম্প্রসারণঃ অর্থই অনর্থের মূল ১
অর্থই অনর্থের মূল
মূলভাবঃ
অর্থ মানব জীবনের অত্যাবশ্যকীয় একটি উপাদান। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে
অর্থের প্রয়োজন হয়। কিন্তু অর্থের সঠিক ব্যবহার না হলে তা মানুষের জীবনের
নানা অনর্থ ডেকে আনে। অর্থ যদি মানুষের নীতি ও নৈতিকতার বাইরে ব্যবহৃত
হয়, তবে তা সমাজ ও ব্যক্তি জীবনে অকল্যাণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সম্প্রসারিতভাবঃ
অর্থ ছাড়া মানুষের জীবন অসম্পূর্ণ। প্রতিদিনের জীবনের প্রয়োজনীয় চাহিদা
মেটাতে অর্থ অপরিহার্য। জীবনের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ও উন্নতির জন্য অর্থের
ভূমিকা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু এই অর্থ যদি নৈতিকতার পথ ছেড়ে
অন্যায় উপায় উপার্জিত হয় কিংবা অপব্যবহার হয় তবে তা সমাজে বিশৃঙ্খলা, অশান্তি
ও নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত অর্থলোভ মানুষের বিবেক বুদ্ধি লোপ করে
এবং তাকে নীতিহীন পথে চালিত করে। ফলে মানুষ অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে
পড়ে, এতে করে সমাজে দুর্নীতি, অপরাধ এবং শ্রেণিবৈষম্যের প্রাধান্যতা
বিস্তার পায় এবং এগুলোর মূল কারণ হলোই অর্থের অপব্যবহার।
অর্থের জন্য মানুষ যখন তার নীতি ও মূল্যবোধ বিসর্জন দেয়, তখনই
তা অনর্থের মূল হয়ে ওঠে। ধনীদের সীমাহীন লোক ও ক্ষমতার অপব্যবহার দরিদ্রদের
ওপর চাপ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, অর্থের কারণে সৃষ্টি হয়
প্রতিযোগিতা, হিংসা এবং হানাহানি ইত্যাদি। ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির
জন্য অনেকেই ভেজাল পণ্য উৎপাদন, পরিবেশ ধ্বংস, এমনকি নিরপরাধ মানুষকে
ক্ষতিগ্রস্ত করতেও পিছপা হয় না।অতএব, অর্থ তখনই আশীর্বাদ হয়ে
ওঠে, যখন তা সৎ ও যথাযথ উপায়ে উপার্জিত হয় এবং তার সদ্ব্যবহার হয়।
মন্তব্যঃ
অর্থের প্রয়োজনীয়তা যেমন অনস্বীকার্য, তেমনি তার যথাযথ ব্যবহারে মানুষকে
সচেতন হতে হবে।অন্যথায় অর্থই অনর্থের মূলে মূল কারণ হয়ে
দাঁড়াবে। তাই, সৎ উপায়ে উপার্জিত অর্থ এবং তার সদ্ব্যবহারী সমাজের
শান্তি ও সমৃদ্ধি আনতে পারে। অতএব, আমাদের মনে রাখা উচিত, অর্থই
অনর্থের মূল নয় বরং তার অপব্যবহারই অনর্থের মূল কারণ।
ভাবসম্প্রসারণঃ অর্থই অনর্থের মূল ২
অর্থই অনর্থের মূল
মূলভাবঃ
অর্থ মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তবে এর প্রতি অতিমাত্রায়
আসক্তি বা এর অপব্যবহার জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে। অর্থ যখন মানুষের আদর্শ ও
মানবিকতার ঊর্ধ্বে স্থান পায়, তখন তা অনর্থ্যের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সম্প্রসারিতভাবঃ
অর্থ ছাড়া মানুষের দৈনন্দিন জীবন কল্পনাও করা যায় না। এটি জীবনের
অপরিহার্য একটি
অংশ। শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য, বস্ত্র এবং বাসস্থানের মত
মৌলিক প্রয়োজন পূরণের অর্থ অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ করে। তবে যখন মানুষ অর্থকে
জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং তা অর্জনের জন্য সবকিছু ত্যাগ
করে, তখন তার সর্বনাশ ডেকে আনে। অতিরিক্ত অর্থলোভ মানুষকে অসৎ পথে
পরিচালিত করে। ফলের সমাজে দুর্নীতি প্রতারণা এবং নৈতিক অধঃপতন বৃদ্ধি
পায়।
অর্থলোভ মানুষের অন্তর্নিহিত মানবিক গুণাবলী কে ধ্বংস করে দেয়। অতি
ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই অর্থের অহংকারে অন্ধ হয়ে অন্যদের প্রতি
নির্দয় হয়ে ওঠে। অর্থের জন্য মানুষ কখনো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক
নষ্ট করে, কখনো অন্যের ক্ষতি সাধন করে। একমাত্র অর্থের পেছনে ছুটতে
গিয়ে মানুষ ভুলে যায় সুখ শান্তির প্রকৃত উৎস।
মন্তব্যঃ
অর্থের সঠিক ব্যবহার জীবনে সমৃদ্ধি আনে, তবে এর অপব্যবহারই সমাজে অনর্থ
সৃষ্টি করে। তাই অর্থ উপার্জনের সততা এবং তার ব্যবহারেও সতর্কতা অবলম্বন করা
উচিত। অর্থ জীবনের সহায়ক, কিন্তু এটি যেন কখনো জীবনের একমাত্র লক্ষ্য
না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ভাবসম্প্রসারণঃ অর্থই অনর্থের মূল ৩
অর্থই অনর্থের মূল
মূলভাবঃ
অর্থ জীবনের প্রয়োজনীয় উপকরণ হলেও, এটি যখন লোভ ও স্বার্থপরতার জন্ম
দেয়, তখন তা বিপর্যয়ের কারণ হয়ে ওঠে। অর্থের প্রতি অসীম আসক্তি
মানুষকে ভুল পথে প্রদর্শন করে।
সম্প্রসারিতভাবঃ
অর্থ মানুষকে সম্মান, আরাম এবং সামাজিক মর্যাদা দিতে পারে। কিন্তু
জীবনে অর্থের গুরুত্ব যতটুকু থাকা উচিত, তা অতিক্রম করলেই সমস্যার সৃষ্টি
হয়। অতি লোভে মানুষ কখনো অসৎ পথে অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে মানবিক মূল্যবোধ
হারিয়ে ফেলে। ধনসম্পদের প্রতি মাত্রা অতিরিক্ত মোহ কখনো পরিবারের দ্বন্দ্ব
সৃষ্টি করে, আবার কখনো বন্ধু-বান্ধব বা সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট
করে।
অর্থের জন্য মানুষ এমন অনেক কাজ করে যা তার নিজের ও সমাজের জন্য
ক্ষতিকর। অসৎ উপায়ে উপার্জিত অর্থ কখনো প্রকৃত সুখ এনে দিতে পারে
না। বরং এটি অশান্তি, মানসিক অস্থিরতা এবং একঘেয়েমি এর জন্ম
দেয়। ইতিহাস সাক্ষী, অর্থের জন্য যুদ্ধ, ষড়যন্ত্র এবং মানবতার
প্রতি চরম অবহেলা ঘটেছে।
মন্তব্যঃ
অর্থ প্রয়োজন, কিন্তু তা উপার্জন ও ব্যবহার করতে হবে সৎ এবং মেয়ে সঙ্গত
উপায়ে। জীবনের সুখ শান্তি টিকিয়ে রাখতে অর্থকে শুধুমাত্র জীবনের একটি অংশ
হিসেবে রাখা উচিত, মূল লক্ষ্য হিসাবে নয়। অর্থলোভ ত্যাগ করাই প্রকৃত
শান্তির পথ হতে পারে।
ভাবসম্প্রসারণঃ অর্থই অনর্থের মূল ৪
অর্থই অনর্থের মূল
মূলভাবঃ
অতিরিক্ত অর্থলোভ মানুষের নৈতিকতা এবং মানবিক মূল্যবোধকে নষ্ট করে। অর্থের
জন্য অযাচিত আসক্তি জীবনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়।
সম্প্রসারিতভাবঃ
অর্থ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি ছাড়া মানব জীবনের দৈনন্দিন প্রয়োজন
মেটানো অসম্ভব। তবে যখন অর্থ উপার্জন এই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে
দাঁড়ায়, তখনই নানান সমস্যার সৃষ্টি হয়। অর্থলোভ মানুষের মনের শান্তি
কেড়ে নেয় এবং তাকে অস্থির করে তোলে। অনেক সময় মানুষ অর্থের পেছনে ছড়তে
গিয়ে নিজের নৈতিক আদর্শ ভুলে যায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে ভুলেই
থাকে। পরিবার, বন্ধুত্ব বা সামাজিক সম্পর্কে মূল্য এক্ষেত্রে কমে যেতে
থাকে।
অতিরিক্ত অর্থের প্রতি আসক্তি মানুষকে অমানবিক করে তোলে। লোভের বশবর্তী হয়ে
মানুষ অন্যের ক্ষতি করতে দ্বিধা করে। না এমনকি নিজের ক্ষতি করেও সম্পদ
জমানোর প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে।জীবনের সুখ-শান্তি অর্থ দিয়ে কেনা যায় না বরং
মানুষের শান্তি আসে সততা এবং সংযোমের মাধ্যমে।
মন্তব্যঃ
অর্থ উপার্জন করা জরুরি, তবে তা হতে হবে সৎপথে এবং সীমার মধ্যে। অর্থ
জীবনের হাতিয়ার হতে পারে লক্ষ্য হতে পারে না। অতএব, অর্থের জন্য
অযাচিত লোভ ত্যাগ করাই প্রকৃত জীবনের সাফল্যের চাবিকাঠি।
ভাবসম্প্রসারণঃ অর্থই অনর্থের মূল ৫
অর্থই অনর্থের মূল
মূলভাবঃ
অতিরিক্ত অর্থলিপ্সা মানুষের জীবনে দুঃখ-দুর্দশা ডেকে আনে এবং সত্যিকারের সুখ
থেকে তাকে বঞ্চিত করে।
সম্প্রসারিতভাবঃ
অর্থ মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয়
চাহিদা পূরণের মাধ্যম। তবে, যখন অর্থ আমাদের জীবনের লক্ষ্য হয়ে
দাঁড়ায়, তখনই তা অনর্থকে ডেকে আনে। অতিরিক্ত অর্থ লিপসার কারণে মানুষ
প্রায় নৈতিকতা বিসর্জন দেয় এবং নিজেরও অন্যের ক্ষতি করে চলে।
অতিরিক্ত অর্থের প্রতি আকর্ষণ মানুষকে লোভী, স্বার্থপর এবং নিষ্ঠুর করে
তোলে। একপর্যায়ে সে সৎ পথ পরিত্যাগ করে এবং অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত
হয়। এমনকি কখনো কখনো পরিবার, বন্ধু এবং প্রিয়জনদের উপেক্ষা করে
শুধুমাত্র অর্থ সংগ্রহের নেশায় মত্ত থাকে। ফলাফলস্বরূপ, জীবনে মানসিক
শান্তি ও সম্পর্কের বন্ধন হারিয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড সম্পর্কে ৫টি ভাবসম্প্রসারণ
মানুষ প্রায় ভুলে যায় যে সুখ অর্থে নয়, বরং জীবনের ভারসাম্যপূর্ণ
পরিচালনায় সুখ বিদ্যমান।অপ্রয়োজনীয় অর্থের পেছনে ছুটে মানুষ নিজেকে ক্লান্ত
করে তোলে এবং প্রকৃত সুখ থেকে দূরে সরে যায়।
মন্তব্যঃ
অর্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য, তবে এর প্রতি অতিমাত্রায় আসক্তি জীবনে অনর্থ
ডেকে আনে। তাই সততা এবং সংযম বজায় রেখে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে জীবনের আসল
উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
লেখকের শেষ মন্তব্য
অর্থই অনর্থের মূল সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন বাক্যবিন্যাসে ৫টি ভাবসম্প্রসারণ লিখেছি। প্রিয় পাঠক, আমাদের ধারনা যে, আপনি একজন ছাত্র বা ছাত্রী, তাই আপনার পরীক্ষার খাতায় উপরোক্ত ভাবসম্প্রসারণগুলো যেকোনো একটি লিখতে পারেন। অথবা, উপরের ৫টি ভাবসম্প্রসারণ পড়ে নিজের মত করে একটি ভাব ভেবে একভাবে লিখতে পারেন। আরো এমন আর্টিকেল বা ব্লগ পেতে সাথেই থাকুকন ইনশাআল্লাহ।
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url