১০টি কোরআন হাদিসের বাণীকুরআন তিলাওয়াতের আদব কয়টি বিষয়টি জানতে এখানে এসেছেন নিশ্চয়। প্রিয় পাঠক, কুরআন
মহান আল্লাহর মহিমাময় বাণী যা জিবরাঈল (আ) এর মাধ্যমে মুহাম্মাদ (সা) এর উপর
অবতীর্ণ একটি গ্রন্থ।
তো এটি তিলাওয়াতে যেমন সওয়াব বা পূণ্য রয়েছে তেমন ইহা তিলাওয়াত বা পড়ার কিছু আদব
বা সিষ্টাচার রয়েছে। চলুন দেরি না করে কুরআন তিলাওয়াতের আদবগুলো কি তা জানার
চেষ্টা করি।
পোস্ট সূচীপত্রঃ কুরআন তিলাওয়াতের আদব কয়টি
কুরআন তিলাওয়াতের আদব কয়টি
কুরআন তিলাওয়াতের আদব কয়টি এটি গণনায় না এনে কতিপয় আদব লেখার ট্রাই করব। প্রিয়
উপস্থিতি, কুরআন বা কোরআন তিলাওয়াত মানে পাঠ করা বা আবৃতি করা। যেহেতু কুরআনের
অধিকংশ আয়াতে কবিতার মত মিল বা অন্ত মিল রয়েছে যার কারণে এটিকে তিলাওয়াত বা আবৃতি
করার কথা দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
আরো পড়ুনঃ কুরআন হাদিসের আলোকে জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত জানুন
অর্থাৎ কুরআন তিলাওয়াত মানে যেটা আমরা বুঝি তা হলো কুরআন পড়া। কুরআন আল্লাহ
সুবহানাহু তায়ালার এক সন্দেহমুক্ত কালাম যেটি পড়লে বা তিলাওয়াত করলে দৈহিকভাবে
সুস্থতা অনুভব ও মানসিকভাবে শান্তি পাওয়া যায়, একথাটি আল্লাহর পাক কুরআনে রয়েছে।
নিচে কতিপয় কুরআন তিলাওয়াতের আদব বা পড়ার শিষ্টাচার বা বৈশিষ্ট বা নিয়ম
বলছি।
একনিষ্ঠ নিয়্যাতে তিলাওয়াত
কুরআন তিলাওয়াত ইখলাস তথা একনিষ্ঠভাবে তিলাওয়াত করতে হবে। এটির জন্য অন্তরে
নিয়্যাত বা সংকল্প করতে হবে যে যে আমি কুরআন পড়ছি আল্লাহর সন্তষ্টির
জন্য। কোরআন তেলাওয়াত যেহেতু একটি ইবাদত, আর যে কোন এবাদত কনিষ্ঠ
নিয়ত সহকারে করতে হয়। আল্লাহ তায়ালা সূরাতুয যুমারে বলছেন হে বান্দা,
তুমি আমার সন্তষ্টির উদ্দ্যেশ্যে ইবাদত কর।
অন্যত্রে সূরাতুল বায়্যিনাহ তে রয়েছে, "তাদেরকে আদেশ করা হয়েছে তারা যেন একমাত্র
আল্লাহর এবাদত করে তার জন্য আনুগত্য ও একনিষ্ঠতা সহকারে।" কাজেই কোরআন
তেলাওয়াতে নিয়তটা এমন হতে হবে যেন আপনার এই তেলাওয়াতের দ্বারা বিভিন্নভাবে
ফায়দা হাসিল হয় সেটা দুনিয়াবি হতে পারে এবং উখরাবি বা পারলৌকিক ও হতে
পারে।
পবিত্রতার সাথে তিলাওয়াতে সতর্ক হওয়া
কোরআন তেলাওয়াতের সময় একটি বিষয় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে যেন নিজের দেহ এবং
কাপড়চোপড় পাক-পবিত্র হয়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সর্বদা পবিত্র থাকতেন এবং পবিত্র থাকাকে পছন্দ করতেন এবং পবিত্র অবস্থায় কোরআন
মাজীদ তেলাওয়াত করতেন।কুরআন মাজীদকে যিকর বলা হয় সেহেতু এই জিকির বা
আল্লাহর স্মরনকে পবিত্র অবস্থায় করাটা ঈমানের দাবি।
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা বলেছেন যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন নামক জিকিরকে সর্বদা পবিত্র অবস্থায় করতেন তথা পূত
পবিত্র থেকে আল কুরআনুল হাকিম তিলাওয়াত করতেন। অন্য জায়গায় হাদীসের মধ্যে
(সা) রাসুল বলেছেন যে আমার আল্লাহর স্মরণ অপবিত্র অবস্থায় করাটা
অপছন্দনীয়। তবে কুরআন মাজীদ ওযু ছাড়াও তেলাওয়াত করা যায় কিন্তু অজু
সহকারে তেলাওয়াত করাটাই অধিকতর উত্তম।
উপস্থিত মন বা মনোযোগ সহ তিলাওয়াত
কুরআন তেলাওয়াতের সময় মনকে উপস্থিত রাখতে হবে তথা হৃদয় বা অন্তরকে কোরআনের
সামনে বা কুরআনের সাথেই রাখতে হবে। যেহেতু কুরআন হচ্ছে আল্লাহর বাণী আপনি
কোরআন পড়ছেন মানে মহান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলার বাণী আবৃতি করছেন তার মানে
যেন স্বয়ং আপনি আল্লাহর সাথেই কথা বলছেন।
বিধায়, আল্লাহ তাআলা যিনি মহান শাহেনশা রাজাধিরাজ তার সামনে বা সাথে
কথা বলতে হলে কঠিন ও কঠোর মনোযোগ সহকারে কথা বলতে হবে অর্থাৎ আল কোরআন হাকিম
তেলাওয়াত করতে হবে।এক্ষেত্রে, তো কুরআন পড়তে গিয়ে তার ভাষা বুঝতে
হবে, অর্থ বুঝতে হবে এবং অন্তরের অন্তরস্থলে অনুধাবন ও উপলব্ধি করে ধারণ
করতে হবে।
তিলাওয়াতের শুরুতে তাআউউয বা পূরো আউযুবিল্লাহ পড়া
কুরআন তিলাওয়াতের আদব কয়টি তার আরো একটি হলো যে কুরআন মাজীদ
যখনই তিলাওয়াত করবেন তখনই তাআউউয তথা আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির
রাজিম অর্থাৎ বিতাড়িত মারদুদ শয়তান থেকে আমি আল্লাহর কাছে পানাহ চাচ্ছি বলে
শুরু করতে হবে। যেহেতু কোরআন পাঠ করা হচ্ছে একটা জিকির যথা আল্লাহর স্মরণ এর
অন্তর্ভুক্ত এজন্য শয়তানেই জিকিরে বিঘ্নতা সৃষ্টি করতে পারে।
তাই কুরআন মাজীদ যখনই আপনি পড়া শুরু করবেন তখন আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির
রাজিম বলে শুরু করলে শয়তানের বিভিন্ন কুমন্ত্রণা বা ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্তি পাবেন
ইনশাআল্লাহ। আর আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা তার পাক কুরআনে ইরশাদ করেছেন যে হে
বান্দা যখন তুমি আমার কোরআন পাঠ করবে তখন আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম বা
শয়তানের কাছ থেকে আশ্রয় চেয়ে নেবে আমি আল্লাহর কাছে।
আয়াতগুলোকে বুঝে বুঝে পড়ার চেষ্টা করা
কোরআন তেলাওয়াতের সময় ইহার আয়াতগুলোকে বুঝে বুঝে আপনাকে পড়তে হবে।
কারণ, আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন তার পবিত্র কোরআনের মধ্যে যে তাদের কি হল
যে তারা কুরআন মাজীদ গবেষণা সহকারে পড়ছে না নাকি তাদের অন্তরে তালা লেগে
গেছে? তার মানে কোরআন শুধু তেলাওয়াত করাই নয় আপনি যখন কোরআন পড়বেন তখন
তাদাব্বুর তথা চিন্তা-ভাবনা বা বুঝে, অনুধাবন ও উপলদ্ধি করে পড়ে মানার
চেষ্টা করবেন।
কুরআন মাজীদের অন্য জায়গায় আল্লাহতালা বলেছেন যে আমি এই কোরআনকে বরকত পূর্ণ করে
নাযিল বা অবতীর্ণ করেছি ওই লোকদের জন্য যাদের চিন্তাভাবনা করার যোগ্যতা ও
মন-মানসিকতা রয়েছে এবং ইহার আয়াত বা নিদর্শনগুলোকে তারা চিন্তা-ভাবনার সাথেই
পড়লেই উপলদ্ধি করতে পারে এবং এর থেকে তারা উপদেশ গ্রহণ করে থাকবে। কাজেই কুরআন
তিলাওয়াত করুন পাশাপাশি তা জীবনের প্রত্যকেটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের চেষ্টা
করুন।
মনোযোগ ব্যহতকারী জায়গায় না পড়া
এমন জায়গায় কোরআন মাজীদ তেলাওয়াত করা যাবে না যেখানে মনোযোগ ব্যাহত বা
নষ্ট হয়। তো এক্ষেত্রে, নোংরা বা আবর্জনা পূর্ণ জায়গায় কোরআন
মাজীদ না পড়া উত্তম। কাজেই প্রস্রাব পায়খানা বা তার অনুরুপ
জায়গাগুলোতে কোরআন মাজিদ পড়লে এটিকে অপমান করা হবে বা অপমানের শামিল
হবে।
তাই অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন জায়গাতে কোরআন মাজীদ পড়া ও সমাজ দুটোই খারাপ কাজ
যেটি কোরআন মাজিদের মর্যাদার ক্ষতি হয়। প্রিয় পাঠক, এমন পাক পবিত্র
স্বচ্ছ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গাতে পবিত্র আল কোরআন যেখানে কুরআনের মর্যাদা
ঠিক থাকে। কেননা কুরআন পবিত্র, এটি যার বানী তিনি আল্লাহ ও পবিত্র বিধেয় পড়তে হবে
ও পবিত্র সব অবস্থা, সময় ও জায়গায়।
আয়াত যা বলে তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকা
কোরআন মাজীদের আয়াতগুলো যার নির্দেশ দেয় তা মানার চেষ্টা করতে হবে এবং যেগুলো
থেকে নিষেধ করে সেগুলো থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে আর এটিই হচ্ছে
আল্লাহর ঘোষণা এবং রাসূল (সা) ও তার সাহাবীদের বৈশিষ্ট্য বা আদব। রাসূল (সা)
এর সাহাবা বাস সাথী সঙ্গীরা আল কুরআনুল কারীমের যে কয়টি আয়াত পড়তেন
তার অর্থ, মর্ম এবং উদ্দেশ্য বুঝতেন ও আমল করার চেষ্টা করতেন।
হাদিসে আছে রাসূল (সা) এর সাহাবারা ১০টি আয়াত পড়তেন, মুখস্থ করতেন, অনুধাবন ও
উপলদ্ধি করতেন এবং নিজেদের জীবনে বাস্তবায়নে করতেন, এরপরে সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে
আরো ১০টি আয়াতের প্রতি ও অনুরুপ আচরণ করতেন। সাহাবীদের পরে তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ী
এবং সালাফ ও খালাফগণ ও তাই করতেন। কাজেই আপনাকে ও আমাকে তাই করতে হবে।
সুন্দর আওয়ায বা কন্ঠে তিলাওয়াত করা
কোরআন মাজীদ কে সুন্দর আওয়ায এবং সুললিত কন্ঠে তিলাওয়াত করাটা ঈমানের বৈশিষ্ট্য।
কিন্ত সুন্দর দিতে গিয়ে কোন লৌকিকতা করা বা লোক দেখানোর জন্য সুর দিয়ে তিলাওয়াত
করা যাবে না।হযরত আবু হুরায়রার বর্ণনা রাসূল (সা) বলেছেন যে আল্লাহ তায়ালা
কুরআনকে যতটা সুরে ও স্বরে পড়া শুনেন ততটা অন্য কিছু শুনেন না।
নাবী (সা) উচ্চ স্বরে ও সুন্দর কন্ঠে ও সুললিত আওয়াযে কুরআন পড়েন। বুখারী
মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে যে জুবায়র ইবনে মুত্বয়িম (রা) বলেন যে তিনি নাবীকে
মাগরিবের সলাতে সূরা তূর পড়া দেখেছিলেন যা এতটা সুন্দর ছিল যে এতটা সুন্দর অন্য
কাউকে পড়া দেখেন নি ও তিনি শুনেন নি। তবে কুরআন পাঠের ক্ষেত্রে একে অপরের উপর
আওয়ায দেওয়া যাবে না যাতে তার পড়ার বিঘ্নতা ঘটে।
আয়াতে তিলাওয়াতে সিজদা করা
যখন আপনি কুরআন তিলাওয়াত করবেন এবং পড়তে পড়তে সিজদার আয়াত আসবে তখন কুরআন পড়া
থামিয়ে সিজদা করবেন এটিই নিয়ম। তবে সিজদা করলে ওযু থাকতে হবে অবশ্যই। সিজদা করতে
হবে আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে এবং সিজদায় গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা।
আর সিজদা থেকে উঠার সময় কোনো তাকবীর বা অন্য কিছু পড়তে হবে না সোজা উঠে গেলেই
দায়িত্ব শেষ।
তবে নামাজের মধ্যে তিলাওয়াতে সিজদা করলে তাকবির বা আল্লাহু আকবার বলে সিজদা
দিতে হবে এবং সেখানে সিজদার দোয়া সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা বলতে হবে বা সিজদার
বিশেষ দোয়াটি বলতে হবে এবং উঠার সময়ও আল্লাহু আকবার বা তাকবীর বলতে হবে। নবী
(স) সালাতের মধ্যে মাথা উঠা, অবনত করা, দাঁড়ানো ও বসা সব অবস্থায় তাকবীর দিতেন।
তাই তিলাওয়াতে সিজদায় এই হুকুম প্রযোজ্য হবে।
যথাযোগ্য সম্মানের সাথে পড়া
কুরআনের এক নাম হচ্ছে কারীম, আল্লাহর নাম ও কারীম এবং যার উপর আল কোরআন
নাজিল হয়েছে তার একটি নামও কারীম। আর কারীম মানে হল সম্মানিত বা সম্মানের
যোগ্য বা সম্মানের পাত্র বা যাকে সম্মান করা হয় বা করতে হবে। আল্লাহ বলছেন
যে নিশ্চয়ই এটি কারীম বা সম্মানিত কোরআন। আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেছেন যে
আমি এটি কারীম বা সম্মানিত রাসূলের (সা) উপর অবতীর্ণ করেছি।
কাজে প্রিয় পাঠক, কোরআন হচ্ছে সম্মানের পাত্র বা সম্মানিত গ্রন্থ যেটি
সম্মান দাতা মর্যাদাবান মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ একটি গ্রন্থ। অতএব
কোরআনের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা একজন মুমিনের জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ ও ঈমানী কাজ। তাই কুরআন পড়ুন সম্মানের সাথে ও সম্মান নষ্ট হয়ে যায়
এরকম আচরণ আমরা কুরআনের সাথে করবনা।
কিবলামুখী হয়ে পড়া
কিবলামুখী হয়ে কোরআন তেলাওয়াত করা উত্তম কাজ। একজন ওস্তাদ বা শিক্ষকের
সামনে যখন কোরআন তেলাওয়াত করবে বা ওস্তাদকে কোরআন তেলাওয়াত শোনাবে তখন
কিবলামুখী বা পশ্চিম মুখী হয়ে বসবে যেহেতু বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর বা কিবলা
রয়েছে আমাদের পশ্চিম দিকে। তবে কোরআন মাজীদ যে কোন দিকে মুখ করে পড়া
যাবে সমস্যা নেই।
যেহেতু আল্লাহ বলছেন যে যারা আল্লাহর জিকির করে দাড়িয়ে, বসে ও শুয়ে ইত্যাদি
অবস্থায়। সেহেতু যেকোনো অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবেন। হাদিসে রয়েছে
হযরতে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহার কোলে মাথা রেখে আল্লাহর রাসূল কোরআন
তেলাওয়াত করেছেন সেই সময় তিনি হায়েজ রত ছিলেন। কাজেই শুয়ে পড়লে কিবলার ঠিক
থাকেনা। এই জন্য কিবলা ছাড়াও পড়া যাবে তবে কিবলার দিকে মুখ করে পড়াটাই উত্তম।
মিসওয়াক বা ব্রাশ বা মুখ পরিষ্কার করে পড়া শুরু করা
নিশ্চয়ই আল্লাহু তায়ালা পবিত্র আর তিনি পবিত্রতাকে পছন্দ করেন।
কাজেই আল্লাহর পবিত্র কালাম যখন তেলাওয়াত করবেন বা আমরা তেলাওয়াত করব তখন
আমাদের মুখ ব্রাশ করে পরিষ্কার করতে হবে। বিশেষ করে নবীজির সুন্নত অনুসারে
মেসওয়াক করে নিলে মুখের দুর্গন্ধ দূরীভূত হওয়া ও মুখমন্ডল বেশি পরিচ্ছন্ন
হয়ে থাকে। তাই কুরআন যেহেতু আল্লাহর পবিত্র কালাম বা কথা সেহেতু পরিষ্কার হয়ে
কুরআন পড়ুন।
আল্লাহর রাসূল (সা) বলেছেন যে আমাদের মুখ হল কুরআনের রাস্তা তাই আমাদের মুখ্কে
সর্বদা মেসওয়াক করে স্বচ্ছ ও সুন্দর এবং পবিত্র রাখতে হবে। কেননা, সাধারণত
মুখ দিয়েই কোরআন নামক জিকিরকে আমরা তিলাওয়াত করে থাকি।
অন্যত্রে, আল্লাহর নবী বলেছেন যে তোমরা কুরআন পাঠের জন্যই তোমাদের মুখগুলিকে
পবিত্র কর ও পরিচ্ছন্ন রাখো। তাই মেসওয়াক করে মুখ পরিষ্কার রাখতে হবে।
তাআউউযের পর বিসমিল্লাহ পড়া
কুরআন তিলাওয়াতের আদব কয়টি তার আরো একটি হলো তাসমিয়া বা বিসমিল্লাহির
রাহমানির রাহিম পড়াটা সুন্নত। নামাজের ভিতরে বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম,
ছানা ও তার আগে তাআউউয বা আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম ও আমীন পড়া
সুন্নত মানে ওয়াজিব নয় তাই না পড়লে সালাতের কোনো সমস্যা বা ক্ষতি হবে না।
যেহেতু সালাত বা নামাজের ভিতরে বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নত, ওয়াজিব বা আবশ্যক নয়।
কাজেই সালাতের বাইরে কোরআন মাজিদ তেলাওয়াতের সময়ও বিসমিল্লাহ পড়াটা আবশ্যক নয়
সুন্নত। তবে আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম পড়া আবশ্যক। এবং
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম পড়া যেহেতু সুন্নাত আর সুন্নাত বর্জন করা অনুচিত।
কিন্ত সূরা তাউবার সূরাতে যেহেতু বিসমিল্লাহ নেই তাই বিসমিল্লাহ পড়তে হবে না।
তাৎপর্যপূর্ণ আয়াতগুলো ডাবল পড়ার চেষ্টা করা
গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ আয়াতগুলো ডাবল বা বারবার তিলাওয়াত করা এবং এই
আয়াতগুলোর অর্থ ও মর্ম হৃদয়াঙ্গম করার চেষ্টা করুন। আল্লাহর নবী এই রকমটা করতেন।
আর আপনি সৌদী ও অন্যান্য আরব দেশগুলোর কারীদের নামাজের তিলাওয়াত দেখলেও বুঝতে
পারবেন যে তাৎপর্যপূর্ণ আয়াতগুলো বারবার পড়া হচ্ছে।
একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি আয়াত পড়তে দেখার কথা
বলেছেন হযরত আবু যার রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আয়াতটির অর্থ ছিল এই রকম যে "যদি
আপনি তাদের শাস্তি দেন তো নিশ্চয়ই তারা তো আপনার বান্দা আর আপনি যদি তাদের ক্ষমা
করে দেন তাহলে আপনি মহাপরাক্রমশালী ও বিজ্ঞানী।" তাই গুরুত্বপূর্ণ আয়াত বারংবার
পড়ুন ও অনুধাবন করুন।
রহমতের আয়াতে নরম হওয়া ও আযাবের আয়াতে ভীত হওয়া
আল কোরআন তেলাওয়াতের সময় রহমত বা দয়ার আয়াত আসলে আল্লাহর কাছে দয়া বা
করুণা বা অনুকম্পা চাইতে হবে এবং আজাব বা শাস্তির আয়াত আসলে শাস্তি থেকে আল্লাহ
তায়ালার কাছে মাফ চাইতে হবে কিংবা পানাহ চাইতে হবে এটি একটি কুরআন তিলাওয়াতের
আদব।
আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই তিনি কোরআন পড়তেন রহমতের
আয়াতে রহমত চাইতেন এবং শাস্তির আয়াতে শাস্তি থেকে আশ্রয় চাইতেন। একদিন নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক নামাজে সূরা বাকারা পড়ছেন তো বর্ণনাকারী
সাহাবী মনে করছেন হয়তো তিনি একশো আয়াত পড়বেন, এরপর তিনি তা অতিক্রম করে ২০০
আয়াত পড়লেন,
বর্ণনাকারী মনে করছেন হয়তো তিনি সূরা বাকারা শেষ করবেন এমনকি তিনি সূরা নিসা
পর্যন্ত পড়লেন আর আয়াতের ভিতরে যেখানে যা বলা হয়েছে তা তিনি চেয়েছেন।
এক্ষেত্রে, কোনো জায়গায় তাসবীহ পড়েছেন,কোনো জায়গায় ইস্তিগফার করেছেন এবং কোনো
জায়গায় রহমত বা জান্নাত চেয়েছেন ও কোনো জায়গায় জাহান্নাম থেকে মুক্তি চেয়েছেন
এভাবে তিনি প্রভৃতি কাজ করেছেন।
বিনয়ের সাথে তিলাওয়াত করা
কুরআন মাজীদ তেলাওয়াতের সময় বিনয় নম্রতার সাথে তা তিলাওয়াত করতে
হবে। এক্ষেত্রে, অন্তর বিগলিত করে কান্না মাখা বা কান্না জড়িত
কন্ঠে কোরআন হাকিম তেলাওয়াত করাটা কোরআন মাজীদ তেলাওয়াতের একটা বৈশিষ্ট্য
বা আদব। এক্ষেত্রে, অর্থ বুঝে ও হৃদয়াঙ্গম করে এবং বুকের
ভিতর ধারণ করে কোরআন মাজিদকে তিলাওয়াত করুন।
আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তিনি কোরআন মাজীদ তেলাওয়াত
করতেন কান্না জড়িত কন্ঠে তিলাওয়াত করতেন। এক বর্ণনায় রয়েছে যে
রাসুল কোরআন মাজীদ তিলাওয়াতের সময় তার বুকের ভিতরে চাকরির আওয়াজের
নেই আওয়াজ বা শব্দ হত। বিশেষ করে সালাতের ভিতরে কোরআন তেলাওয়াতের সময়
মনোযোগ ও বিনয় নম্রতার সাথে নিয়ে কোরআন পড়তেন। আমাদের ও চেষ্টা করতে
হবে কান্না না আসলেও কান্নার ভান করুন।
হায়তোলার সময় তিলাওয়াত না করা
কোরআন তেলাওয়াতের সময় যখন হাই উঠবে তখন কোরআন পড়া থামিয়ে দিতে হবে বা বন্ধ
করতে হবে এটি একটি কোরআন তেলাওয়াতের আদব বা শিষ্টাচার। আল্লাহর নবী বলেন
যখন তুমি কোরআন পড়বে আর এমন অবস্থায় হাই উঠবে তখন তুমি কোরআন তিলাওয়াত করা
থামিয়ে দিবে যতক্ষণ না হাই দূর হয়ে যায়।
হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু কোরআন তেলাওয়াতের সময় কখনো কথা বলতেন না
এমনকি যখন তিনি কোরআন পড়া শেষ করতেন তখন প্রয়োজনে কথা বলতেন। তাই আমাদেরকে
কোরআনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রদান করতঃ তেলাওয়াতের সময় হাই উঠলে কোরআন পড়া
থামিয়ে দিয়ে কোরআনের আদব রক্ষা করতে হবে।
তিলাওয়াত নষ্টকারী জিনিস দূরে রাখা
তিলাওয়াত করার সময় তিলাওয়াতে মনোযোগ নষ্ট করে এমন জিনিস থেকে নিজেকে দূরে
রাখতে হবে। যেমন কুরআন পাঠের সময় খেলাধুলা করা, মোবাইল
টেপা, অনর্থক মাঝেমধ্যে পড়তে পড়তে কথা বলা, হাতে জিনিস নিয়ে
নাড়াচাড়া করা, হাসাহাসি করা এবং আরো অন্যান্য এমন জিনিস করা যেটি কোরআন
তেলাওয়াতের মনোযোগ কে নষ্ট করে সেগুলো থেকে বিরত থাকা ঈমানের দাবিপূর্ণ কথা ও
কাজ।
তাজবীদ ও তারতীল সহ তিলাওয়াত করা
কুরআন তিলাওয়াতের আদব কয়টি তার আরো একটি হলো কুরআন মাজীদ পড়তে হবে তাজবীদ
তথা অত্যন্ত সুন্দর ও তারতীল বা ধীরে সুস্থে ও সুন্দরভাবে। নবীজির তিলাওয়াত
বা কোরআন পড়া কেমন ছিল এটি জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে বলা হয়েছে যে তিনি অত্যন্ত
লম্বাকরে এবং থেমে থেমে এমনভাবে কোরআন পড়তেন যেন একটি আয়াত এর ভিতরে আর
একটি আয়াত এর পার্থক্যটা স্পষ্ট বুঝা যেত এবং শব্দগুলিরও পার্থক্য বুঝা
ঝেত।
আল্লাহ তায়ালা সূরা মুজাম্মিল এ বলেছেন হে বান্দা তুমি কোরআন পড়ো তারতীল তথা
সুন্দর ও ধীরস্থিরতার সঙ্গে ও থেমে থেমে। আর তাজবীদ মানে মদ ও মাখরাজ এবং সিফাত
যেখানে যতটা শুদ্ধতার ব্যাপার রয়েছে সবগুলো কাজে লাগিয়ে। তাই কুরআন তিলাওয়াতে
আমাদের তাজবীদ ও তারতীলের সাথে গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে।
তন্দ্রা বা ঝিমুনি অবস্থায় তিলাওয়াত বন্ধ দেওয়া
কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত করার সময় যদি তন্দ্রা বা ঝিমুনি আসে বিশেষ করে রাতে তাহলে
কুরআন না পড়ে ঘুমিয়ে যাওয়াটাই বেটার বা উত্তম। হাদিসে রয়েছে যে যদি কেউ
ঘুম থেকে রাতে উঠে কোরআন তেলাওয়াত করে এবং মুখ থেকে সঠিক আয়াত বের হয়
না এবং সে কি পড়ছে তা বুঝতে পারে না তাহলে কোরআন না পড়ে তাকে ঘুমিয়ে যেতে
হবে এটিই আদব।
আজনাসে কাবীরাহ বা বড় নাপাকী অবস্থায় কুরআন না ধরা
আজনাসে কাবিরা বা বড় নাপাকী অবস্থায় কোরআন পড়া বা কোরআন তেলাওয়াত করা যাবে
কিন্তু তা ধরা বা স্পর্শ করা যাবে না। বড় নাপাকি বলতে গোসল ফরজ হয়েছে এমন
অবস্থা, হায়েজ বা নেফাস অবস্থা। তবে এগুলো ছাড়া অর্থাৎ ছোট নাপাকি অবস্থায়
মানে অযু না থাকলে কোরআন ধরে বা স্পর্শ করে পড়া যাবে।
সূরা ওয়াকিয়া এর মধ্যে আল্লাহতালা বলছেন পবিত্র গুণ ব্যতীত অন্য কেউ যেন কোরআন
স্পর্শ না করে। এখানে পবিত্র গুণ বলতে ফেরেশতাগণকে বলা হয়েছে। তাই ওযু
না থাকলে বা ছোট নাপাকি অবস্থায় কোরআন স্পর্শ করে তিলাওয়াত করা যাবে কিন্তু বড়
নাপাকি বা জুনুবী বা গোসল ফরজ অবস্থায়, হায়েয বা নেফাস হয়ে গেলে কোরআন স্পর্শ
করে তিলাওয়াত করা যাবে না তবে স্পর্শ না করে তেলাওয়াত করা যাবে।
তিলাওয়াতে অন্যের বিরক্তির কারণ না হওয়া
তিলাওয়াতের সময় যেন আপনার তিলাওয়াতির দ্বারা অন্য কেউ বিরক্ত না হয় বা অন্য
কারো আপনার তেলাওয়াত ক্ষতির কারণ না হয়। বিভিন্নজন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত
থাকতে পারে, কেউবা অসুস্থ থাকতে পারে, ছাত্রছাত্রীরা তাদের শিক্ষা
দীক্ষায় রত থাকতে পারে এবং অন্য কেউ সালাত বা নামাজ এর মত বিভিন্ন জিকির আজকার
করতে পারে।
এক্ষেত্রে আপনার উচ্চ স্বরের তিলাওয়াত উল্লেখিত ব্যক্তিদের বিরক্তির কারণ
হতে পারে। আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে কারো
কোরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ যেন অন্যের কানে না যায় যাতে বিরক্ত হতে পারে। তাই
কুরআন তিলাওয়াত নিশ্চয় ভালো কাজ কিন্ত ইহার দ্বারা কারো ডিস্টার্ব করা যাবেনা।
তিলাওয়াতে কষ্ট হলে ধৈর্য্য ধরা
কুরআন তিলাওয়াতে পারদর্শী বা এক্সপার্ট না হলে তিলাওয়াতে কষ্ট হতে
পারে, সে ক্ষেত্রে ধৈর্যের সাথে কোরআন তেলাওয়াত চালিয়ে যাওয়া একজন
বুদ্ধিমান মুমিনের কাজ। এক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল এক হাদিসে বলেছেন যে কোরআন
তিলাওয়াতে পারদর্শী ব্যক্তি সম্মানিত ফেরেশতাগণের সাথে থাকবে এবং যাদের কোরআন
পড়তে কষ্ট হয় এরপরেও ধৈর্যের সাথে পড়ে যায় তার জন্য ডাবল সওয়াব রয়েছে। তাই
কষ্ট হলেও কুরআন তিলাওয়াত চালিয়ে চাওয়াটাই আদব।
রুকু' ও সিজদায় তিলাওয়াত না করা
রুকু ও সিজদায় কোরআন তেলাওয়াত করা নিষিদ্ধ একটি বিষয়। হযরত আবু বকর
রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর বর্ণনা তিনি বলেন যে আমাকে রুকু ও সিজদাতে কোরআন
পড়তে বারণ করা হয়েছে তবে বেশি বেশি রবের শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্ব ঘোষণা
করতে বলা হয়েছে এবংতাসবীহ ও বেশি বেশি দোয়া করতে বলা হয়েছে
কারণ সিজদারত অবস্থায় দোয়া বেশি কবুল হয়ে থাকে।
তাই রুকু ও সিজদায় কুরআন না পড়াটাই আদব। তবে রুকু ও সিজদায় কুরআনের যে আয়াতগুলো
দোয়া সেগুলো পড়া যায় কোনো বাধা নেই। তবে কারো মতে না পড়া ভালো। তবে জুমহুর বা
অধিকাংশ গ্রহনযোগ্য বিদ্বানের মতে পড়লে কোনো দোষ নেই।
৩ দিনের কমে কুরআন খতম বা শেষ না করা
তিন দিনের কবে কোরআন মাজীদ খতম বা শেষ করা ঠিক নয়। হাদিসের ব্যাখ্যা হচ্ছে
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরের বর্ণনা যিনি আল্লাহর রাসূলকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন
আল্লাহর রাসূল (সা) কে যে তিনি কত দিনে কোরআন খতম করতে পারবেন তখন উত্তরে রাসূল
বলেছিলেন এক মাসে, তিনি এর পরে বললেন এর চেয়েও বেশি শক্তি রাখেন তখন আল্লাহর
রাসূল বললেন তাহলে যেন ৭ দিনে খতম করবে,
এরপরে তিনি আবার বললেন যে তিনদিনের কম সময়ে কোরআন মাজিদ খতম করলে কুরআনের
কিছুই বুঝা যাবে না। এ ব্যখ্যাটা আবূ মূসা আশয়ারী (রা) বলেন। তাই ৩ দিনের কম সময়ে
কুরআন মাজীদ শেষ করা অনুচিত।
উচ্চস্বরে ও ধীর আওয়াযে তিলাওয়াত করা
কুরআন তিলাওয়াতের আদব কয়টি তার আরো একটি হলো কুরআন মাজীদ সশব্দে এবং নীরবে
উভয় ভাবে পড়া যায়। তবে ক্বারী বা কোরআনে পাঠককে পরিবেশ, পরিস্থিতি ও
সময় অনুপাতে পড়াটা বুদ্ধিমানের ক্বারীর পরিচায়ক।
আরো পড়ুনঃ কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াত - কুরবানী সম্পর্কে হাদিস সুস্পষ্টরুপে
জানুন
হাদীসে বলা হয়েছে যে সশব্দে কোরআন তেলাওয়াতকারীর অবস্থা প্রকাশ্যে দানকারীর
মত আর নীরবে কোরআন তেলাওয়াতকারীর অবস্থা গোপনে দানকারী মত। তবে লৌকিকতার ভয়
থাকলে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াতে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এক্ষেত্রে, তাকে
পরিস্থিতি অনুসারে জোরে বা আস্তের পড়তে হবে যেন রিয়া সৃষ্টি না হয়।
লংটাইম ধরে কুরআন শেষ বা খতম না করা
লং টাইম বা দীর্ঘ সময় ধরে কোরআন তেলাওয়াত করা উপযুক্ত নয়। যুক্ত হযরত
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরের বর্ণনা, তাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ সময় ধরে কোরআন তেলাওয়াত করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন তিনি
যেন পারলে চল্লিশ দিনে কোরআন খতম করে বা শেষ করে। তাই ৪০ দিনে কুরআন তিলাওয়াত খতম
করাটা ও এক আদব।
আয়াতের মধ্যখানে তিলাওয়াত বন্ধ না দেওয়া
কোরআন তেলাওয়াত করতে করতেআয়াতের মধ্যখানে কুরআন তিলাওয়াত থামিয়ে দেওয়া
বা বন্ধ করা ঠিক নয়। যে কোন প্রয়োজনে কোরআন তেলাওয়াত করতে করতে আয়াতের
মাঝখানে তেলাওয়াত থামিয়ে দেওয়া অনুচিত। কারণ কুরআনের মাঝখানে তিলাওয়াত করলে
কুরআনের চেয়ে অন্য কাউকে বা কিছুকে প্রাধান্য দেওয়া হয় যা কুরআনের মর্যাদার হানি
হয়।
নাফে' এর রেওয়ায়েত রয়েছে যে উমর (রা) হাজারো বড় কাজে কোরআন তিলাওয়াত করতে গিয়ে
আয়াতের মাঝখানে থামতেন না। তিনি কুরআন সেই আয়াতের আগে শেষ করতেন এর পরে প্রয়োজনে
অন্য কাজ করতেন।
কুরআন নিয়ে বিতর্কে না জড়ানো
কুরআন তিলাওয়াত নিয়ে তর্কে জড়ানো অনুচিত। রাসূল (সা) বলেছেন যে কুরআন নিয়ে তর্ক ও
বিতর্ক করা কুফরী কাজ। পূর্বের লোকেরা তাদের উপর অবতীর্ণ আসমানী গ্রন্থ নিয়ে তর্ক
করার কারণে ধবংস হয়েছে।
এইজন্য কুরআন নিয়ে তর্কে না জড়িয়ে কুরআনের হালালকে হালালা বলে মেনে নেওয়া এবং
হারাম কে হারাম বলে স্বীকার এবং সন্দেহহীন বিষয়গুলোকে বিশ্বাস করার ঈমানদারদের
আদব।
লেখকের শেষ কথা
কুরআন তিলাওয়াতের আদব কয়টি ব্যাপারটি এখানে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। প্রিয়
পাঠক, কুরআনের আদব এর প্রতি খেয়াল রেখে কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত। তাহলে কুরআন
আমাদের জন্য কাল কিয়ামতে সুপারিশ করবে ও ভালো সাক্ষী দিবে ইনশাআল্লাহ। কাজে কুরআন
তিলাওয়াত করুন এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করুন এই কুরআন দ্বারা। এ রকম বিষয় আরো
জানতে সাথেই থাকুন।
অধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তরঃ FAQ
কোরআন তিলাওয়াত কত প্রকার?
কুরআন তিলাওয়াত তিন প্রকারঃ হদর, তাদবীর এবং তারতীল।
কোরআন তিলাওয়াত শুনলে কি সওয়াব হয়?
কুরআন তিলাওয়াত করলে অবশ্যই সওয়াব হয়।
কুরআন পাঠের নিয়ম কয়টি ও কি কি?
কুরআন পাঠের নিয়ম ৩টি দ্রুত পড়া, খুব দ্রুত ও নয় খুব আস্তে নয় এভাবে পড়া এবং
একিবারে ধীরে ধীরে যেখানে যে টান ও মাখরাজ রয়েছে সে অনুযায়ী পড়া।
তাজবীদ অনুসারে কুরআন তিলাওয়াতের হুকুম কি?
তাজবীদ তথা মদ, গোন্নাহ, মাখরাজ ও সিফাত অনুসারে কুরআন তিলাওয়াত করা ওয়াজিব বা
আবশ্যক কিংবা ফরজের কাছাকাছি।
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url