যে সকল রোগের ন্যাচারাল উপকারী হতে পারে কাঁচা আমলকী

কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতাকাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে এই ব্লগে ক্লিক করেছেন? আমলকি বিভিন্ন রোগের ন্যাচারাল বা প্রাকৃতিক চিকিৎসা হতে পারে। আমলকির মধ্যে যেগুলো কাঁচা সেগুলো অত্যন্ত কার্যকরী। 

কাঁচা-আমলকি-খাওয়ার-উপকারিতা

প্রিয় পাঠক, কাঁচা আমলকি যে সকল রোগ বা অসুস্থতা বা ব্যধির জন্য উপকারী সেগুলো চলুন আজকের আর্টিকেলটাতে জানার চেষ্টা করি। দেরি না করে কাঁচা আমলকির উপকারিতা ব্লগটি পড়তে শুরু করুন।

পেজের সূচীপত্রঃ কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে এখানে লিখছি। কাঁচা আমলকি কে ইংরেজিতে বলা হয় ইন্ডিয়ান গুসবেরি(Indian Gooseberry)। কাঁচা আমলকি বিভিন্ন পুষ্টি ও গুণে একটি উপকারী ফল। এটি স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী খেতে তেমনি ও সুস্বাদু। 

আরো পড়ুনঃ সকালে খালি পেটে মধু ও কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা জানুন

নিম্নে ১০টি পয়েন্টে কাঁচা আমলকিতে যে উপকারিতাগুলো রয়েছে যা বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক ও প্রতিকার এবং প্রতিরোধকারী সেগুলোর বর্ণনা দিচ্ছি।

কাঁচা আমলকি ভিটামিন সি সরবরাহকারী উপাদান

কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতার প্রথম উপকার হলো এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ও Vitamin C এর ন্যাচারাল বা প্রাকৃতিক সোর্স বা উৎস। কাঁচা আমলকি ফল রেগুলার খেলে এটি শারীরিক ইমোন সিস্টেম ডিফিসিয়েন্সি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করে এবং ক্রমান্বয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটা বৃদ্ধি করতে থাকে। 

আবার এটি সর্দি ও কাশি এবং অন্যান্য সাধারণ অসুস্থতা বা রোগ থেকে আপনাকে রক্ষা করবে এবং সুরক্ষিত রাখবে। এর ভিতর ভিটামিন বি ও রয়েছে যা শক্তি উৎপাদন, স্নায়ুতন্ত্র এর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে এবং ত্বক, চুল ও নখের স্বাস্থ ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে।

কাঁচা আমলকি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণ সমৃদ্ধ

কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতার আরো একটি উপকারি দিক হলো এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বা টক্সিন বা শরীরের অভ্যন্তরের ময়লা-আবর্জনা দূরভীতকারী পাওয়ার সমৃদ্ধশীল গুণ রয়েছে। এটি আবার শরীরের সেল বা কোষগুলোকে ক্ষতিকর বস্তুর হাত থেকে সুরক্ষা দেয়। যার ফলে বার্ধক্য বা বয়সের ছাপ চেহারায় আসা থেকে চেহারাকে হেফাজত করে এবং অন্যান্য রোগ থেকেও বাঁচায় ও কম হয়।

এন্টি অক্সিডেন্টের উপকারিতাগুলো নিম্নে স্পষ্টকরে লিখা হলো।
  • কোষগুলোকে সুরক্ষা প্রদান।
  • বার্ধক্য বা বয়স কমাতে সহায়তা দান।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • ক্যান্সার বা মৃত্যরোগের রিস্ক কমায়।
  • ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ইত্যাদি।

কাঁচা আমলকি হজম শক্তি বৃদ্ধিকারক

কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতার আরো একটি উপকারি ব্যাপার হলো এটি হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করে। হজম হওয়ার যে প্রক্রিয়া রয়েছে তা উন্নত করে এবং গ্যাসট্রিক বা অ্যাসিডিটি থেকে আপনাকে বাঁচাবে। এতে যে ফাইবার বা খাদ্য আঁ রয়েছে তা ডাইজেস্ট বা হজম শক্তিতে সহায়তা করে এবং দেহের ভিতরের নাড়িভূড়ি স্বাস্থ্য ঠিক ও মজবুত রাখে। এছাড়াও,

  • কাঁচা আমলকি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • বিপাক বা পাঁচন ক্রিয়ার উন্নতি হয়।
  • হজম খুব সহজেই হয়ে যায়। 
  • যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • পেটের সমস্যা দূর করে।
  • এবং রক্তশূণ্যতা কমায় ইত্যাদি।

কাঁচা আমলকি চুলের জন্য উপকারী

কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতার আরো একটি উপকারিতা হলো এটি হেয়ার হেলথ বা চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এটি চুলের ঝরঝরে ভাব দূরীভূত করে এবং চুলের বৃদ্ধি ও শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
কাঁচা-আমলকি-চুলের-জন্য-উপকারী
কাঁচা আমলকিতে আছে মিনারেল, ভাইটামিন এবং ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট যা ব্লাড সার্কুলেশনে ভূমিকা রাখে আর ব্লাড সার্কুলেশন বা রক্ত সঞ্চালন ব্যাপারটি চুল বৃদ্ধি ও কন্ডিশনিং বা ঝলমলে করতে অবদান রাখে। আবার এটির রস চুলের ফলিকগুলোকে মজবুত ও করে এবং টনিক হিসেব কাজ করে।

কাঁচা আমলকি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণকারী

কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতার আরো একটি হলো কাঁচা আমলকি ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করতে হেল্প করে। বিশেষকরে যারা ডায়াবেটিস রোগী তাদের সুগার বা চিনি কমাতে খুবই উপকারী যেটি ডায়াবেটিস হ্রাস করনে কাজ করে। আবার এটি ইনসুলিন এর সেন্সিটিভিটি বা সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

  • এটি অ্যান্টি-অক্সিজেন এর কাজ করে।
  • কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার মাত্রা এর দ্বরা সুনিয়ন্ত্রিত হয়।
  • ন্যাচারাল ইনসুলিন হিসাবে কাজ করে।
  • প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ কন্ট্রোল করে।
  • এছাড়াও, অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি হিসেব কাজ করে।

কাঁচা আমলকি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিকারী

কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতার আরো একটি দিক হলো ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং ব্রাইটফুলনেস বা ত্বকের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করে। এর অ্যান্ট-অক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের বিভিন্ন স্পট বা খারাপ দাগ গুলো দূর করে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ হতে দেয় না। 

এটি আবার নিম্নের ক্ষেত্রগুলিতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। 
  • ত্বকের কোলাজেন উন্নয়নে বৃদ্ধি সাধন করে।
  • ত্বকের ভিতরের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
  • ত্বকের বিভিন্ন প্রদাহ বা ঘা ঘাসড়া কমাতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের সৌন্দর্য্য বাড়ায়।
  • নিয়মিত খাওয়ার ফলে ত্বকের একাধিক রোগ ব্যধির এন্টি-সেপ্টিক হিসেবে কাজ করে।

কাঁচা আমলকি কোলেস্টেরল হ্রাস করতে সহায়ক

কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতার আরো একটি আপনি যেতি পাবেন এতে তা হলো আপনার শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল(LDL) কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল বা চর্বি বাড়ায় মানে এইচডিএল(HDL) যেটি হার্ট বা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকার সাধন করে।

আর খারাপ কোলেস্টেরল কম হওয়া এবং ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাওয়া ব্যাপারটি যে কাজ গুলো করে তা হলো যথাক্রমে নিম্নে পেশ করছি।

খারাপ কোলেস্টেরল না থাকলে বা কমে গেলে
  1. ধমনীতে ফ্যাট জমে যাওয়া কমায়।
  2. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  3. রক্ত সঞ্চালন সহজ করে তোলে।
  4. ব্লকেজ এবং হার্ট অ্যাটাকে ঝুঁকি কমায় ইত্যাদি।
আর ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি হওয়ার ফল
  • শরীর থেকে অতিরিক্ত এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল অপসারণ হয়। 
  • হৃদরোগ প্রতিরোধে এটিও ভূমিকা রাখে।
  • ধমনীর স্থিতিশীলতা বজায় রাখুন।
  • রক্তনালীর স্বাস্থ্য  ও সমানতালে ভালো রাখে।

কাঁচা আমলকি পেটের সমস্যায় উপকারী 

কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতার আরো একটি হলো পেটের সমস্যা যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য বা পায়খানা কষা হওয়া, অ্যাসিডিটি বা গ্যাসট্রিক ইত্যাদি হওয়া থেকে রক্ষা করে। কাঁচা আমলকিতে বিদ্যমান ফাইবার পেটের সমস্যা সমাধানে কার্যকরী হয়ে থাকে। আরো কিছু নিম্নে লিস্টে রইল।
  1. কাঁচা আমলকি আবার ডায়রিয়ার সমস্যা ও দূর করে।
  2. পেটে আলসার দূর করতে ও কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
  3. এর রস এসিডিটি ও বদ হজমের সমস্যা ও দূর করে।

কাঁচা আমলকি অ্যানিমিয়া প্রতিরোধকারী

কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতার আরো একটি হলো এটি আয়রনের উপাদান হিসেবে কাজ করে যেটি আপনার ব্লাড বা রক্তের হিমোগ্লোবিনে মাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয় এবং অ্যানিমিয়া বা রক্ত স্বল্পতার ঝুঁকি কমাবে।

আরো পড়ুনঃ চিয়া বীজ খাওয়ার নিয়ম - how to eat chia seeds

আর ব্লাড পর্যাপ্ত থাকলে বা অ্যানিমিয়া না থাকলে নিম্নের সুবিধাগুলো পাওয়া যায়, 

১। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ রাখে।

২। ব্রেইন ফাংশন ভালোভাবে কাজ করে এটি খেয়ে।

৩। লিভার বা যকৃত এর স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

৪। জন্ডিস সমস্যা দূর করে।

৫। এবং বিশেষ করে হার্ট ভালো থাকে।

কাঁচা আমলকি ওজন কমাতে সাহায্যকারী

কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতার আরো একটি হলো এটি মেটাবলিজম বা হজম প্রক্রিয়া বা পাঁচনতন্ত্রকে ডেভলপ করতে সাহায্য করে। এটি ফিজিক্যাল ব্যাড ফ্যাট বা দৈহিক খারাপ চর্বি বার্ণ বা ক্ষয় করতে ভূমিকা রাখে। যার কারণে ওয়েট বা ওজন কমাতে আপনি চাইলে আপনার জন্য খুব খুব উপকারী হয়ে থাকবে।
কাঁচা-আমলকি-ওজন-কমাতে-সাহায্যকারী
এটি এক গবেষণামতে মেদ ও ভূড়ি কমাতে সাহায্য করে। আবার এটি দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভর্তি রাখতে সাহায্য করে এবং পুষ্টিকর ও প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে খাদ্য যোগান দেয় এবং বিপাকক্রিয়া ও হজমকে ব্যালেন্স রাখতে সহায়তায় কাজ করে। যার ফলে ক্ষুধা কম লাগে এবং বেশি খাবার চাহিদা না থাকার জন্য ওজন ও দ্রুত কমে যায়।

লেখকের শেষ মন্তব্য

কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আর্টিকেল বা ব্লগটি লেখার চেষ্টা করেছি। আপনি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এটি রাখলে খুব স্বাস্থ্যকর হিসেবে উপকার দিবে। এর পুষ্টিগুণ আপনার দেহের বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধক ও প্রতিষধক হিসেব কাজ করবে। আরো এরকম নিত্য ও উপকারী আর্টিকেল বা ব্লগ পেতে আব্দুন নূর আইটি এর ওয়েবসাইটটির সাথেই থাকুন ইনশাআল্লাহ।

প্রায় জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তরঃ FAQ

নিয়মিত আমলকি খেলে কি হয়?

নিয়মিত আমলকি খেলে শারীরিক নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা কমে যায়।

আমলকি কাদের খাওয়া উচিৎ নয়?

যারা রক্ত পাতলা করা ওষুধ খান বা যাদের রক্তের চাপ নিম্নমুখী তাদের আমলকি খাওয়া উচিত নয়।

আমলকি কখন খাওয়া উচিৎ?

আমলকি সকালে খালিপেটে খাওয়া উচিত।

আমলকি খেলে কি ক্ষতি হতে পারে?

অতিরিক্ত আমলকি খেলে পেটের গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে এবং রক্তে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার মাত্রা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

রাতে আমলকি খেলে কি হয়? 

রাতে আমলকি খেলে হজম প্রক্রিয়া উন্নীত হয় এবং দেহের বিষাক্ত পদার্থ দূরীভূত হতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url