অধ্যাবসায় রচনাস্বদেশ প্রেম রচনা সম্পর্কে জানতে এখানে এসেছেন তাইনা? স্বদেশ প্রেম অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এটি এমন একটি অনুভূতি যা প্রতিটি দেশের নাগরিকের দেশের
প্রতি এক সুপ্ত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা সৃষ্টি করে।
এটি দেশের প্রতি দেশের মানুষকে দেশের হিফাজত, উন্নতি এবং মঙ্গলের অবদান রাখে। দেশ
প্রেম জাতীয় চেতনার বহিঃপ্রকাশ এবং দেশের সব মানুষকে এক করে রাখে। নিম্নে স্বদেশ
প্রেম নিয়ে লিখতেছি।
পেজ সূচীপত্রঃ স্বদেশ প্রেম রচনা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আর্টিকেলটিতে যা
থাকছে
স্বদেশ প্রেম রচনা
স্বদেশ প্রেম রচনা একটি স্কুল-বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মহা বিদ্যালয় এবং
বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখতে হয়।
স্বদেশ প্রেম বিষয়টি বিদ্যালয়ের ক্লাশ ৩, ক্লাশ ৪, ক্লাশ ৫, ক্লাশ ৬, ক্লাশ ৭,
ক্লাশ ৮, ক্লাশ ৯ এবং ক্লাশ ১০ এর ব্যাকরণের রচনা থাকে। স্বদেশ প্রেমের সাথে
যে ব্যাপারগুলো সম্পৃক্ত সেগুলো হচ্ছে দেশের স্বাধীনতা, জাতীয়তা, আত্মত্যাগ,
স্বাধীনতা সংগ্রাম, জাতীয় পতাকা, মুক্তিযুদ্ধ, ঐক্য, সংস্কৃতি এবং উন্নয়ন। নিম্নে
হেডিং আকারে দেশের সাথে সংশ্লিষ বিষয়গুলো পেশ করছি।
স্বাধীনতা
স্বদেশ প্রেম রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে স্বাধীনতা।
স্বাধীনতা দেশপ্রেমের বিশেষ বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ। কেউ যদি নিজের
দেশকে ভালবাসতে চায় এবং দেশের প্রতি প্রেম অখুন্ন রাখতে চায় তাহলে তাকে দেশের
স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে প্রাণপণ ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। স্বাধীনতা হলো
যেকোনো জাতির সার্বভৌম রক্ষা করায় একটি প্রধান মাধ্যম। এর মাধ্যমে জাতির পরিচয়,
সম্মান এবং গৌরব টিকে থাকে।
এটি অর্জনের জন্য বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সংগ্রাম করতে হয়। একটা দেশে মানুষকে
সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য স্বাধীনতা রক্ষা করার বিকল্প কোন পথ নেই। কথায়
আছে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করাটা অত্যন্ত কঠিনতম
বিষয়। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষ তাদের নিজেদের বিভিন্ন কৃষ্টি-কালচার,
সংস্কৃতি, জাতির সম্ভাবনা এবং উন্নয়নের বিভিন্ন পথ প্রশস্ত করতে পারে।
জাতীয়তা
স্বদেশ প্রেম রচনার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে
জাতীয়তা। জাতীয়তা হচ্ছে একজন মানুষের সামাজিক সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক
পরিচিতি। এই বিষয়টি মানুষকে তার আত্মমর্যাদা, গর্ব এবং ঐক্যবদ্ধ হতে
অনুপ্রেরণা যোগায়। একটা জাতির জাতীয়তা সাধারণত গঠিত হয়ে থাকে
ইতিহাস, ভূগোল, সংস্কৃতি এবং ভাষার সমন্বয়ে। এটি মানুষকে একটি
সুনির্দিষ্ট জাতি হিসেবে পরিচিত করে এবং বড় একটি সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে গড়ে
তোলে।
আরো পড়ুনঃ ২০২৪ সালের বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো ১০টি মোবাইল কোনগুলো পড়ুন
মূলত জাতীয়তা একটা জাতিকে তাদের নিজেদের দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং
স্বদেশপ্রেমের প্রতি অনুভূতি জাগ্রত করে এবং বিশেষ করে জাতির উন্নতি ও
সমৃদ্ধির জন্য কাজ করতে উৎসাহিত করে।এটি যেমন একটা সমাজের সামাজিক বন্ধন
কে অটুট রাখে এবং একটি স্বাধীন দেশের সমাজের এবং রাজনৈতিক বিষয়ের প্রতি
স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সুনিশ্চিতভাবে ভূমিকা প্রদান করে।
আত্মত্যাগ
স্বদেশ প্রেম রচনার আরো একটি ফল অনস্বীকার্য দাবী হচ্ছে আত্মত্যাগ। যদি
আপনি আপনার দেশকে জ্ঞানপ্রাণ দিয়ে ভালবেসে থাকেন এবং দেশের প্রতি খাঁটি প্রেম
থাকে তাহলে দেশের প্রয়োজনে যেকোনো সময় আত্মত্যাগ বা নিজের জীবন দিতে প্রস্তুত
থাকবেন। মানুষ সাধারণত যে কোন জিনিস বা অন্য মানুষের প্রতি প্রেম বা ভালবাসা
থাকলে প্রয়োজনের তাগিদে নিজের জীবনকে যেকোনো ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে দ্বিধাবোধ
করে না।
এক্ষেত্রে, আপনিও দেশের প্রতি নিজের হৃদয়ের অতল গভীরে ভালোবাসা রেখে দেশের
যেকোনো বিপদ-আপদে, দেশের মানকে অক্ষুন্ন রাখতে, বহিঃশত্রু আক্রমণ থেকে দেশকে
বাঁচাতে আত্মত্যাগ করা অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার। একটি দেশকে দেশের সামাজিক
উন্নয়ন এবং মানবতার সেবায় অসাধারণ সাহস ও দায়িত্ববোধের সাথে এগিয়ে নিতে সজাগ
দৃষ্টি রাখা স্বদেশ প্রেমের দাবীর প্রকাশ।
স্বাধীনতা সংগ্রাম
স্বদেশ প্রেম রচনার আরও একটি অসম্ভাব্য দাবি হচ্ছে স্বাধীনতা
সংগ্রাম। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম একটি জাতির সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা
অর্জনে জীবন দেওয়া বা জীবন দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা করা। এটি
দীর্ঘ সময় ধরে নিজের দেশের মধ্যে অত্যাচার-অনাচার, শাসন শোষণ বিভিন্ন
বঞ্চিত বিষয় থেকে প্রতিরোধের একটি অপ্রিয় সত্য বিষয়।
যেকোনো দেশের ইতিহাসে স্বাধীনতা সংগ্রাম অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি অধ্যায় যা
জাতির সম্মান ও গৌরবের প্রতীক। আর এই জাতীয় সম্মান ও গৌরবকে ফিরিয়ে আনতে
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগ্রাম করে। যেই স্বাধীনতা যুদ্ধে
লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছে এবং অনেক মানুষ যুদ্ধ করে স্বাধীন একটি মজবুত দেশ
বাংলাদেশ এর রুপ দিয়েছে।
জাতীয় পতাকা
স্বদেশপ্রেম রচনা আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রিয় প্রতীক হচ্ছে জাতীয়
পতাকা। যে দেশ স্বাধীন হয়েছে এবং বিশ্ব মানচিত্রে তার নাম কি গৌরবের সাথে
ফুটিয়ে তুলেছে তার একটি নির্দিষ্ট রং ও সাইজের পতাকা রয়েছে। যেটি বিভিন্ন
সময়ে দেশের বিভিন্ন অঙ্গনে পত পত করে উড়তে দেখা যায়। এই জাতীয় পতাকাকে
কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় রাস্তা ঘাটে সংঘর্ষ তৈরী হয় জাতীয় পতাকার প্রতি
অসম্মানের কারণে।
একটা দেশের জাতীয় পতাকা দেশটির ঐক্য গৌরব ও সার্বভৌমত্বের পরিচায়ক। দেশের
সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং জাতীয় চেতনার মতো বৈচিত্র্যময় বিষয়
জড়িয়ে থাকে জাতীয় পতাকার মাঝে।জাতীয় পতাকার রং ও নকশা প্রতিকী অর্থে একটা
দেশের বিশেষ ঘটনা, সংগ্রাম এবং মূল্যবোধের সমন্বয়ে তৈরী। বাংলাদেশের
জাতীয় পতাকার রং সবুজ ও লাল। এক্ষেত্রে, লাল রংটি স্বাধীনতার
সময় অনেক রক্ত ঝরা এবং সবুজ রংটি একটি সুন্দর স্বাধীন ভূমির প্রতীক।
মুক্তিযুদ্ধ
স্বদেশপ্রেম রচনার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে
মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ মানে একটি দেশকে তার মধ্যে ঘটা অনাচার, উৎপীড়ন,
শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্ত বা স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধ করা। মুক্তিযুদ্ধ সাধারণত
জাতীয়ভাবে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব পেতে অস্ত্র, ইট-পাটকেল ও লাঠি-সোঠা দিয়ে
সংগ্রাম করার মহান একটি বিষয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দেশের বিভিন্ন
স্তরের মানুষ যেমন মুক্তিযোদ্ধা, কৃষক, শ্রমিক, মজুর, ছাত্র এবং
নারীরা পর্যন্ত অংশগ্রহণ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য মানুষ জীবন দেয় এবং অনেক মানুষ শরণার্থী হয়।
দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করার পর ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে এবং
একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে
তোলে। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী স্বাধীন দেশের প্রতি স্বদেশ প্রেম বা
নিজের দেশের প্রতি ভালোবাসা, ঐক্য ঠিক রাখা এবং দেশের বিভিন্ন উন্নয়নে
এগিয়ে আসা একজন নাগরিকের আত্মিক দাবী হওয়া উচিত ও জরুরী।
ঐক্য
স্বদেশপ্রেম রচনার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ঐক্য। যে কোন
ক্ষেত্রে ঐক্য বা একতা বজায় রাখলে খুব সহজেই বিষয়টিতে সফল হওয়া যায়। ঐক্য
হচ্ছে একটি সমাজ, গোষ্ঠী, জাতি বা সম্প্রদায়ের পরস্পরের মাঝে
সমঝোতা, সংহতি এবং সহযোগিতার একটি মাধ্যম। ঐক্যের মাধ্যমে একে অপরের
প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা বজায় রাখা যায় এবং সমাজের উন্নতি ও স্থিতিশীলতা ঠিক
রাখা যায়।
নিজের দেশকে ভালবাসতে ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। সবাই মিলে একসাথে থাকার
মাধ্যমে বিভিন্ন ভিতর এবং বাহিরের শত্রুর সাথে অত্যন্ত দক্ষতার সহিত
মোকাবেলা করা যায়। এক্ষেত্রে, নিজের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব
এবং অগ্রগতিকে অটুট রাখতে ভীষণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের
সময় মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়ে ঐক্য বিশাল ভাবে কাজে লেগেছে। ঐক্যের
মাধ্যমে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং উন্নতি নিশ্চিত করা যায়।
সংস্কৃতি
স্বদেশ প্রেম রচনার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে
সংস্কৃতি। সংস্কৃতি মানে আরবি ভাষায় যাকে বলে তাহজিব-তামাদ্দুন আর বাংলা
ভাষায় যার অর্থ দাঁড়ায় কৃষ্টি-কালচার। সংস্কৃতি একটা জাতির বিভিন্ন
বিশ্বাস, সাহিত্য, সংগীত, আচার-আচরণ, অনুষ্ঠান, নৃত্য, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস এবং
আরো নানান বিষয়ের প্রকাশিত ও প্রতিফলিত বিষয়গুলো। একটা জাতিকে
সাধারণত তাদের নিজেদের সংস্কৃতির মাধ্যমে চেনা ও জানা যায়।
আরো পড়ুনঃ ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব - শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে বক্তব্য
আর এই স্বদেশপ্রেম বিষয়টি জাতির সংস্কৃতির মাধ্যমে জীবনের বিভিন্ন
ক্ষেত্রে বিকশিত হয়। সংস্কৃতির মাধ্যমে একটা
জাতির জাতীয়তাবাদ, একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, একটা সমাজের
সামাজিকতা এবং মানুষের মন বা মানসিকতা পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশের অনেক ধরনের
সংস্কৃতি রয়েছে যেমন মুসলিমদের দুইটা ঈদ যথা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল
আযহা, হিন্দুদের বিভিন্ন পূজা-অর্চনা এবং আরো পহেলা বৈশা উদযাপন ও
বিভিন্ন অঞ্চলের রকমারি খাবার গ্রহণের উৎসব।
উন্নয়ন
স্বদেশ প্রেম রচনার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি হচ্ছে উন্নয়ন। নিজের
দেশকে ভালোবাসার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় দেশের মানুষদের
সম্মান, সামাজিক পরস্পরে কিভাবে মিলবন্ধন রাখা যায় সেদিকে খেয়াল রাখা
এবং দেশের পরিবেশকে কিভাবে ফ্রেশ, সুন্দর এবং অগ্রগতি করা
যায় বিষয়টিতে দৃষ্টি রাখা উন্নয়নের অনস্বীকার্য দাবী।
এক্ষেত্রে আরো যে বিষয়গুলোর নজরে রাখতে হবে সেগুলো হচ্ছে দেশের
অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক অব
কাঠামো। উন্নয়নের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে একটি স্থিতিশীল, টেকসই এবং
সমৃদ্ধশালী সমাজ গঠন এবং সেখানকার প্রত্যেকটি মানুষকে তাদের নিজেদের অধিকার
প্রতিষ্ঠিত করা এবং যৌন জীবনের মান উন্নতি করা।
উপসংহার
স্বদেশ প্রেম রচনা আর্টিকেলটি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষার সময়
রচনা হিসাবে কাজে দিবে।প্রিয়
পাঠক, উক্ত আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করছি নিজের
দেশের প্রতি দেশ প্রেমের বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ কি কি করতে হবে বিষয়গুলো প্রকাশ
পেয়েছে এটাই বুঝতে পেরেছেন। আরো এরকম নিত্যনতুন আর্টিকেল পেটে তোমাদের
ওয়েবসাইটটি সাথেই থাকুন ইনশাআল্লাহ।
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url