রাজশাহী বিভাগের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানুন

সিলেটের দর্শনীয় স্থান জাফলংরাজশাহী বিভাগের দর্শনীয় স্থান জানতে এখানে এসেছেন তাই না? প্রিয় পাঠক, রাজশাহী বিভাগ এর রাজশাহী জেলা শহর অত্যন্ত পরিষ্কার ও স্বচ্ছ একটা শহর। রাজশাহী বিভাগ এর সাথে সংশ্লিষ ছিল রংপুর বিভাগ। 

রাজশাহী-বিভাগের-দর্শনীয়-স্থান

রাজশাহী বিভাগ এখন ৮টি জেলা নিয়ে গঠিত। আর আটটি জেলায় নানান দর্শনীয় স্থান রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলটিতে জানাব ইনশাআল্লাহ্‌ প্রিয় পাঠক। তো চলুন আরম্ভ করি!

পেজ সূচীপত্রঃ রাজশাহী বিভাগের দর্শনীয় স্থান

রাজশাহী বিভাগের দর্শনীয় স্থান

রাজশাহী বিভাগের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে লিখছি। রাজশাহী বিভাগ বাংলাদেশের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত। রাজশাহী বিভাগ এর উত্তরে রংপুর বিভাগ এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিম বঙ্গরাজ্য এবং পূর্বে যমুনা নদী এবং দক্ষিণে ঢাকা বিভাগ। এই বিভাগে নানান সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং আরো কত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এ বিভাগে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে যেগুলো নিম্নে পেশ করছি।

বড়দিঘিঃ এটি বাংলাদেশের বিশালতম একটি কৃত্রিম লেক বা হ্রদ। এটি রাজশাহীর মূল শহর থেকে পায় ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি পিকনিক, নৌকা ভ্রমণ এবং মাছ ধরার জন্য বিখ্যাত ও জনপ্রিয় একটি জায়গা।

কুসুম্বা মসজিদঃ এটি ১৫৫৮ থেকে ১৫৬৯ সালের মাঝে আফগান শাসন আমলে সুলায়মান নামের একজন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায় কুসুম্বা গ্রামে অবস্থিত। এই মাসজিদের সামনে বিশাল দিঘী রয়েছে। এটি বাংলাদেশের পুরানো ৫টাকার নোটে দেখা মিলে।

বাঘা শাহি মসজিদঃ এটি রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় অবস্থিত। এটি ১৫২৩ থেকে ১৫২৪ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সে হিসাবে এটির বয়স এখন হয়েছে প্রায় ৫০০ বছর। এটি বাংলাদেশের ৫০ টাকার আগের পুরাতন নোটে  এবং ১০ টাকার ডাকটিকেটে দেখা যায়।

শাহজাদপুর কাশফুলঃ এই পাবনা জেলায় অবস্থিত যেখানে অনেক কাশফুল রয়েছে এবং কাশফুলের জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয় ও বিখ্যাত। এটি শীতকালে কাশফুলের সাদা ধবধবে ফুলের জন্য শুভ্র সাগরের মত মনে হয় এবং ট্যুরিস্টদের ভীষনভাবে আকৃষ্ট করে।

নিম্নাঞ্চলঃ এটি পাহাড়, জলপ্রপাত এবং লেক বা হ্রদের জন্য জনপ্রিয়। এটি সিরাজগঞ্জ জেলার মনোরম ন্যাচারাল একটি জায়গা। এটি বাংলাদেশের মধ্যে খুব নিচু একটি জায়গা। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে এখানে লিখছি। এটি রাজশাহী উত্তর ও পশ্চিমে অবস্থিত। এটি ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এটি ২য় ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের সরকারের একটি বিশ্ববিদ্যালয় এটি। এটিতে ৫টি অনুষদ, ১টি কেন্দ্র, ১০টি ইনস্টিটিউট এবং ৫৮টি বিভাগ রয়েছে। এখানে প্রায় ১৫শ জন টিচার এবং অনধিক ৩০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিভাগ গুলো রয়েছে সেগুলো যেমন এখান থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়া হয়, বিজ্ঞান, আইন, ব্যবসায় প্রশাসন, কলা, সামাজিক বিজ্ঞান, প্রকৌশল, স্নাতকোত্তর ইত্যাদি। এখানে রিসার্চ বা গবেষণা এবং বিভিন্ন শিক্ষা সম্পৃক্ত বিষয় ডেভলপের সুযোগ রয়েছে। 

এটি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেখান থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, শিল্পী, লেখক, বিজ্ঞানী এবং শিক্ষাবিদ বের হয়ে সাইন করছে বাংলাদেশ সহ বিশ্ব দরবারে।

পুঠিয়া রাজবাড়ী

পুঠিয়া রাজবাড়ী সম্পর্কে এখন লিকছি। এটি রাজশাহী শহরের কেন্দ্র থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে রাজশাহীরই পুঠিয়া উপজেলায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের অত্যন্ত নামকরা খুব বিখ্যাত একটি জমিদার বাড়ী। 

এটি ১৭ সালের সূচনালগ্নে ১৬০৫ থেকে ১৬২৭ খ্রিষ্টাব্দ অনুসারে মুঘল আমলে নীলাম্বর নামে এক ব্যক্তি এই রাজবাড়ীটি প্রতিষ্ঠা করে। নীলাম্বর তৎকালীন রাজা জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে নিজের নাম রাজা উপাধিতে ভূষিত করে নিয়ে সে বাড়ীটে প্রতিষ্ঠা করে সেখানে জমিদারি শুরু করে। 

আর তার এই নামেই এটি পুঠিয়া রাজবাড়ী নামে পরিচিত লাভ করে। ১৮৯৫ সালে শরৎসুন্দরী দেবীর সম্মানে দ্বিতল পুঠিয়া রাজবাড়ী নির্মিত হয়। পুঠিয়া রাজবাড়ীর আশেপাশে মোট ৬টি রাজদিঘী রয়েছে। এ ছাড়াও আরো রয়েছে ৬টি মন্দির। এখানে আরো রয়েছে প্রত্নতাত্তিক সব মাটির ঐতিহ্যবাহী দেয়াল ইত্যাদি।

মহাস্থানগড়

মহাস্থানগড় সম্পর্কে এখানে লিখছি। এটি রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলায় অবস্থিত। প্রসিদ্ধ এই জায়গাটি ইতিহাসের পাতায় পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর নামেও সুপরিচিত ছিল। এটি বাংলাদেশের প্রাচীতম পুরাকীর্তি। মাটি বিশ্লেষকদের কাছে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন একটি নগরী। 

এটি তৃতীয় শতাব্দীর ও পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বৌদ্ধ ধর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা ছিল সেই সময়ে। এখানে রয়েছে দুর্গ, বৌদ্ধ মঠ ইত্যাদি। এখানে কয়েকটি অনেক আগের মন্দির প্রায় শেষ হতে চলেছে। এখানে বিভিন্ন প্রত্নতত্তের জিনিসপত্র ও পাওয়া যায়।

বলিহার রাজবাড়ী

বলিহার রাজবাড়ী সম্পর্কে এখানে লিখছি। এটি রাজশাহী জেলার সদর উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম পুরাতন একটি রাজবারী। আওরঙ্গজেবের সময়ে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত এটি নৃসিংহী চক্রবতী নির্মাণ করেন। এখানে বিভিন্ন মন্দির রয়েছে। 

এখানে একটি চিড়িয়া খানা ছিল যাতে বাঘ, ভাল্লুক এবং বানর সহ নানা প্রজাতির পশু পাখি ছিল। এখান থেকে বিভিন্ন আসবাবপত্র, দরজা এবং জানালা লুটপাট হয়ে যায়। এখানে বিভিন্ন উপায়ে যাওয়া যায় যেমন নওগাঁ থেকে ২০ কি মি দূরে অবস্থিত হচ্ছে বগুড়া। আর বগুড়া বিভিন্ন জায়গায় থেকে আসা যায়। এতে সহজ হয়ে গেল।

চলনবিল

চলনবিল সম্পর্কে এখানে লিখছি। এটি নাটোর, সিরাজগঞ্জ এবং পাবনা জেলা জুড়ে ব্যাপৃত। এটি একটি বিশাল জলাভূমি যেটি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদীর সমন্বয়ে এ বিলের তৈরী। পাশাপাশি ৪৭টি নদী প্রবাহিত হয় এই চলনবিলের মাঝ দিয়ে। 

এটি বাংলাদেশ এর পাখি, বন্যপ্রাণী এবং মাছদের আবাসস্থল। এটি মিঠা পানির অনেক বড় উৎস এবং এখানে ৪০০ থেকে ৬০০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। ৩০০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায় এই চলনবিলে। নৌকা চড়ার সুযোগ রয়েছে। মাছে ধরা দেখা যায় এবং বিভিন্ন রকম পাখি দেখা যায়।

সাফিনাপার্ক

সাফিনাপার্ক সম্পর্কে লিখছি। এটি রাজশাহী বিভাগ ও জেলার গোদাগাড়ীতে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় পার্ক। এটি গোদাগাড়ী থেকে ৯ কি মি দূরে নাচোল রোডে দিগরাম খেঁজুরতলায় রয়েছে। রাজশাহী শহর থেকে বাস অথবা সিএনজি যোগে খুব সহযে যাওয়া যায়। এক্ষেত্রে বাস যোগে প্রথমে গোদাগাড়ী মূল স্টেশনে এবং সেখান থেকে রিক্সা বা অটোরিক্সা যোগে সাফিনাপার্কে যাওয়া যায়। এখানে স্পিডবোর্ড, প্যাডেল নৌকা ইত্যাদির ব্যবস্থা রয়েছে।

চায়নাবাঁধ

চায়নাবাঁধ সম্পর্কে এখানে লিখছি।  এটি সিরাজগঞ্জ ক্রসবার ৩ নামেও সুপরিচিত যা সিরাজগঞ্জ মেইন শহর পার্শ্ববর্তী যমুনা নদীর তীরে অবস্থান করছে। এটি বাংলাদেশে একটি ইতিহাস বিজড়িত বাঁধ। এটি ১৮৯৮ সালে এলিওট যিনি বাংলার গভর্নর ছিলেন তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। এটি ১৯০০ সাল থেকে আরম্ভ হয়ে ১৯০৬ সাল পর্যন্ত কাজটির শেষ হওয়া গড়ায়। অর্থাৎ মোট বাঁধটি শেষ হতে ৬ বছর লাগে। 

গ্রীন ভ্যালী পার্ক

গ্রীন ভ্যালী পার্ক সম্পর্কে লিখছি। এটি রাজশাহী বিভাগের নাটোর জেলার লালপুর উপজেলায় অবস্থিত। এখানে এই পার্কে প্রবেশ করতে প্রতি প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। আর রাইড ভাড়া হচ্ছে ৩০ থেকে ৬০ টাকা মাত্র। আর গাড়ী পার্কিং ১০ থেকে ৩০০ টাকা।  পার্কটি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। গুগলে এর রেটিং ৪.২ রয়েছে। 

সোনা মসজিদ

সোনা মসজিদ সম্পর্কে এখানে লিখছি। ইতিহাসবিদ্গণ এটিকে সুলতানী স্থাপত্যশিল্পের রত্ন বলেছেন।  এটি রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শাহাবাজ ইউনিয়নে অবস্থিত। বাংলাদেশে কয়েকটি মাসজিদ কে সোনা মসজিদ বলা হয়। আর এটিকে ছোট সোনা মসজিদ বলা হয়। বড় সোনা মসজিদ ঢাকার নারায়নগঞ্জে সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত। শাহী সোনা মসজিদ এটি রাজশাহী জেলার সদরে অবস্থিত। এই মসজিদ্গুলো সব অতি প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী এবং প্রত্নতাত্তিক ভিত্তিক।

আলতা দিঘী

আলতা দিঘী সম্পর্কে লিখছি। এটি রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার ধামইরহাটে উপজেলায় অবস্থিত খুব প্রখ্যাত একটি বিশাল দিঘী। এটি পদ্মা নদীর পার্শ্ববর্তী বন্য এলাকায় অবস্থানরত এবং জলাভূমির জন্য প্রসিদ্ধ। এটি ১৮ শতকের শেষদিকে খনন করা হয়েছিল এভাবে যে রাজা রামপালের রাজমাতা পুত্র রাজা সদর পালের কাছে একটি বর চাওয়ায় যে সকালে ঘুম থেকে উঠে যতদূর হাঁটবে ততবড় দিঘি বানায়ে দিতে হবে। 

কথা অনুযায়ী তিনি সকালে হাঁটতে থাকলেন এবং কোনোক্রমে থামছেন না, তাই চালাকি করে তাঁর পায়ে আলতা ঢেলে পা কেটে গেছে বল্লে তিনি থামলেন। এবং সেখান থেকে বিশাল বড় দিঘী খনন করা হলো এবং এই ঘটনার আলোকে সেটি আলতা দিঘী নামে আখ্যায়িত হলো

কুসুম্বা মসজিদ

কুসুম্বা মসজিদ এটি ১৫৫৮ থেকে ১৫৬৯ সালের মাঝে আফগান শাসন আমলে সুলায়মান নামের একজন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায় কুসুম্বা গ্রামে অবস্থিত। এই মাসজিদের সামনে বিশাল দিঘী রয়েছে। এটি বাংলাদেশের পুরানো ৫টাকার নোটে দেখা মিলে।

তোহা খানা

তোহা খানা সম্পর্কে এখানে লিখছি। এটি মুঘল তাহখানা নামেও পরিচিত। এটি ও ছোট সোনা মসজিদের মত রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি প্রত্নতাত্তিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। ১৬ শতকে মুঘল রাজা আকবরের আমলে এটির স্থাপনা হয়েছিল।

এটি সেই সময় একটি কারাগার ও কাঁচারী ছিল এবং ইংরেজদের আমলে এটি একটি জেলা বিচারালয় এবং জেল হিসাবে ব্যবহার হতো। এটি তিন তলা যুক্ত ভবন। চতুর্পাশে উঁচু দেওয়াল এবং স্থাপনার মেইন দরজাগুলো খোদাই করা ছিল এবং অনেক গুলো রুম ও বারান্দা ছিল এর ভিতরে। এটি এখন জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে রুপান্তরিত হয়েছে। 

লেখকের শেষ মন্তব্য

রাজশাহী বিভাগের দর্শনীয় স্থান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো এই আর্টিকেলের মাঝে সুষ্পষ্টভাবে বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। প্রিয় পাঠক, আমরা বিশ্বাস করি যে এই আর্টিকেলটি ধিয়ান্সে পড়লে রাজশাহী বিভাগের আকর্ষণীয় ও চিত্তাকর্ষক দর্শনীয় স্থান গুলো সম্পর্কে আইডিয়া পেয়েছেন। আরো এ রকম নিত্য নতুন ব্লগ বা আর্টিকেল পেতে ওয়েবসাইটটির প্রতি নিয়মিত চোখ রাখুন ইনশাআল্লাহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url