জ্বর কেন হয় - জ্বর কি বা জ্বর কাকে বলে?

শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায়জ্বর কেন হয় বিষয়টি জানতেই এখানে এসেছেন তাই না? জ্বর শরীরের একটা তাপ যেটি নির্দিষ্ট মাপ অতিক্রম করলে জ্বর হিসেবে আখ্যায়িত হয়। জ্বর অনেক ধরনের হয় যেমন ভাইরাস জনিত জ্বর, টাইফয়েড জ্বর, ডেঙ্গু জ্বর ইত্যাদি। 

জ্বর-কেন-হয়

ইসলাম ধর্ম জ্বর সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলেছে এ বিষয়গুলো এখানে আলোচনায় আসবে ইনশাআল্লাহ। তো চলুন জ্বর সম্পর্কে সম্পৃক্ত বিষয়গুলো আলোচনা করি।

পেজ সূচীপত্রঃ জ্বর কেন হয় সম্পর্কিত বিষয়টি জানুন

জ্বর কেন হয়

জ্বর যে কারণে হয় তার নানা সাইড রয়েছ। একেক জনের জ্বর একেক কারণে হয়। সবচেয়ে সাধারণ যে কারণগুলো সেগুলো হচ্ছে ভাইরাস, ছত্রাক, পরজীবী এবং ব্যাকটেরিয়া এসব সংক্রামন জনিত ব্যাপার জড়িত। আর এগুলো খুব জেনারেল বা সাধারণ কারণে জ্বর হয়ে থাকে। আরো যে কারণগুলো আছে তা নিম্নরুপ।

অ্যালার্জি জনিত কারণঃ অনেক খাবারে অনেকের অ্যালার্জি থাকে যা সে সহ্য করতে পারেনা, হয় শরীর চুলকায় বা চোখ লাল হয়ে যায় কিংবা দেহে গোটা গোটা কিছু দেখা যায়। একেক খাবারে একেক জনের অ্যালার্জি হয়। তো এই অ্যালার্জির জন্য জ্বর হয়ে থাকে। আবার কিছু ঔষধে অ্যালার্জি থাকে। আবার কখনো পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গের দংশন বা কামড়ের জন্য অ্যালার্জি হয়ে থাকে। আর এই অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ায় জ্বর হয়ে থাকে।

ক্যান্সার সংশ্লিষ্ট কারণঃ শরীরের কোনো অঙ্গ পঁচে গেলে বা অকেজো বা নষ্ট হয়ে গেলে সেটি ক্যান্সার নামে পরিচিত। তো কিছু কিছু ক্যান্সারের জন্য জ্বর হয়ে থাকে।

ঔষধের সাইড ইফেক্ট বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জনিত কারণঃ বিভিন্ন ঔষধের বিভিন্ন সাইড ইফেক্ট বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। কোনোটায় পেট ব্যথা করে, কোনোটায় মাথা ব্যথা করে, কোনোটায় পাতলা পায়খানা হয় এবং কোনোটার কারণে জ্বর হয়ে থাকে। 

পরিশ্রমের অতিরিক্ততা জনিত কারণঃ অতিরিক্ত পরিশ্রম কোনো সময় শারীরিক সমস্যা হয় আবার কোনো সময় মানসিক সমস্যা হয়। অনেক সময় পরিশ্রমের অতিরিক্ততায় শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। যার ফলে জ্বর হয়।

ডিহাইড্রেশন বা শরীরে পানির অভার সম্পৃক্ত কারণঃ শরীরে দিনে রাতে কম্পক্ষে দুই লিটার বা ৮ গ্লাস পানি খেতে হবে। কিন্তু শরীরে পানির পর্যাপ্ততা অপ্রতুল হয়। যার কারণে অপর্যাপ্ত পানির কারণে কিংবা পর্যাপ্ত পানির ঘাটতিতে জ্বর হয়ে থাকে।

অটোমিউন রোগ সংশ্লিষ্ট কারণঃ মানুষের শরীরে যে ইমিউন সিস্টেম আছে তা রোগ প্রতিরোধ করে আর অটোইমিউন মানুষের শরীরকে দুর্ঘটনাক্রমে আক্রমণ করে বসে, আর এটি অটোইমিউন। অটোইমিউন জনিত বেশ কিছু রোগ রয়েছে যথা- রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, লুপাস ক্রোন'সের মত একাধিক রোগ রয়েছে। আর এই রোগগুলোর কারণেও জ্বর হয়ে থাকে।

জ্বর কি বা জ্বর কাকে বলে 

জ্বর এর পরিচিতি জানাচ্ছি। প্রত্যেক মানুষের শরীরের একটা স্বাভাবিক তাপমাত্রা রয়েছে যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলেই সেটি জ্বর বলে আখ্যায়িত। মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক তাপমাত্রা এটি ফারেনহাটে ৯৮.৬ হওয়া আর সেলসিয়াসে ৩৭ ডিগ্রি থাকা। আর এটি স্বাভাবিক এর চেয়ে বেশি ৯৯ ফারেনহাট এবং ৩৭.২ ডিগ্রিতে হলেই তখন তাকে জ্বর বলা হয়।

ভাইরাস জ্বর কি 

ভাইরাস জ্বর কি ব্যাপারটি বলছি। ভাইরাস এক ধরনের ছোট্ট জীব। তো এই ছোট্ট জীব যেটা সংক্রামক, যার ফলে নানা রোগ হতে পারে। ভাইরাস মানবদেহের কোষগুলোকে প্রথম অ্যাটাক করে এবং কোষে একটা জায়গা নিয়ে নেয়। আর কোষে এই ভাইরাসের বাস থাকায় বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে। আর এই জ্বরই ভারাস জ্বর নামে পরিচিত আবার এটাকে ভাইরাল ফেভারও বলা হয়। 

জ্বরের ঔষধ ও জ্বরের অ্যান্টিবায়োটিক

জ্বরের ঔষধ ও জ্বরের অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে ব্যক্ত করছি। জ্বর যেহেতু সংক্রমণ জনিত রোগ তাই সহজে ঔষধ খাওয়া উচিত নয়। কারণ এটি স্বাভাবিকভাবে শরীরে থাকার জন্য লড়াই করে। এটি এমনিতেও সেরে যেতে পারে। তাই একটু সময় দেন এবং গা মুছ করুন এবং ধৈর্য্য ধরার চেষ্টা করুন। আর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সমস্যা হলে সাধারণ ঔষধ সেবন করুন।

জ্বরের সাধারণ ঔষধঃ অ্যাসিটামিনোফেন যা সকল বয়সী মানুষের জন্য সেফ বা নিরাপদ। আর এরচেয়ে একটু বেশি পাওয়ারফুল ঔষধ আইবুপ্রোফেন যা ১২ বছরের কম বাচ্চাদেরকে খাওয়ানো অনুচিত। নেপ্রোক্সেন এটা আরো একটু শক্তিশালী যা ১৮ বছরের বেশি বয়স এমন মানুষকে খাওয়া যেতে পারে। 

জ্বরের অ্যান্টিবায়োটিকঃ জ্বরের অ্যান্টিবায়োটিক সহজে খাওয়া উচিত নয়। কারণ এগুলো খাইলে শরীর অনেক দুর্বল করে দেয়। আবার খারাপ জীবাণু ধবংস করতে গিয়ে ভালো জীবাণু ও ধবংস হয়ে যায়। সাধারণত একটা জ্বরের নাপা খেলে স্বাস্থবিজ্ঞানীরা বলছেন ১৮ মণ দুধ খেলেও এর ঘাটতি পূরণ হবে না। যাই হোক জ্বর যদি ৩ দিনের বেশি থাকে শরীরে এবং সাধারণ প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খেয়ে ভালো না হলে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করুন। 

এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটক বা জীবাণু বিরোধী ঔষধ খাবেন। আবার অ্যান্টিবায়োটিকের নির্দিষ্ট ডোজ আছে , তো একবার খাওয়া আরম্ভ করলে ডোজ পূরণ করে খেতে হবে আর না হলে ঔষধে কোনো কাজ করবে না। আর অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ হচ্ছে জ্বরেরর মাত্রা অনুসারে ৩ দিন, ৫ দিন, ৭ দিন এবং সর্বোচ্চ বেশি হলে ১০ দিন পর্যন্ত খাওয়া যায়। 

জ্বরের অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ এখানে কিছু দেওয়া হলো- অ্যামোক্সিসিলিন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, ক্লাক্সাসিলিন, লেভোফ্লোক্সাসিন এবং মোক্সিফ্লোক্সাসিন ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে রোগীর জন্য কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক লাগবে এটি দক্ষ ডাক্তার বলতে পারবে। এই জন্য বিষয়টি ভেবে-চিন্তে এবং সাবধানতার সাথে এ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত।

জ্বর কেন হয় ইসলাম কি বলে 

জ্বর কেন হয় ইসলাম কি বলে ব্যাপারটি বলছি। জ্বর আল্লাহর ইচ্ছায় হয় এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আসে। জ্বর হলে ধৈর্য্য ধরে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে, এক্ষেত্রে দুংখ প্রকাশ করা যাবে না এবং রাগ করাও যাবে না। কারণ জ্বর মানব জীবনে আসে মানুষের পাপ মোচন করতে আসে। জ্বর পাপের প্রায়শ্চিত্ত স্বরুপ। বুখারীর হাদীসে আছে জ্বর আসে দোযখ হতে সো পানি দ্বারা জ্বরকে কমাও। বুঝা গেল জ্বর হলে পানির ব্যবহার করতে হবে এবং পানি দ্বারা গতর বা শরীর মুছতে হবে তাহলে জ্বরের প্রশমোন হবে। 

টাইফয়েড জ্বর কেন হয় 

সালমোনেল্লা টাইফি (Salmonella Typhi) ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রামিত দূষিত পানি, খাবার খাওয়ার কারণে টাইফয়েড জ্বর হয়ে থাকে। আবার খাবার ভালোভাবে রান্না না করলে এবং খাবার পেটে গেলে টাইফয়েড জ্বর হয়ে থাকে। টাইফয়েড জ্বর ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাট কিংবা ৩৯.৪ ডিগ্রি পর্যন্ত শরীরে পৌঁছাতে পারে। এই জ্বর হলে সারা শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা, ক্লান্তি, ডায়রিয়া বা ক্রোনিক কোষ্ঠকাঠিণ্য, শুষ্ক কাশি এবং বমি বমি ভাব হতে পারে। এবং জ্বর একজন থেকে আরেক জন পর্যন্ত অতিক্রান্ত হতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বর কেন হয় 

ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে সাধারণত এডিস মশা কামড়ানোর কারণে। প্রধানত দুইটি মশা একটি এডিস ইজিপ্টি এবং অপরটি হলো এডিস এলবোপিক্টাস এরা ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত লোকের রক্ত পান করে এবং এই মশাদ্বয় অন্য মানুষকে কামড়ালে ডেঙ্গু জড় হয়। ডেঙ্গু জ্বড় হলে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাট অথবা ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা হয়ে থাকে। আবার উপরের লক্ষণগুলো ও দেখা দেয় যথা - পুরো শরীর ব্যথা, ডায়রিয়া কিংবা পাতলা পায়খান অথবা কাশি ইত্যাদি হতে পারে। আর মশাগুলো সাধারণত গরম ও ভিজা আবহাওয়ায় এবং অপরিচ্ছন্ন জায়গায় বেশি হয়। তাই পরিষ্কার রাখতে হবে চারিপাশকে এবং মশারির ব্যবস্থা রাখবে হবে।

বাত জ্বর কেন হয় 

বাত মানে ক্রোনিক বা দীর্ঘস্থায়ী। এই বাত টা ব্যথা হয় আবার জ্বরও হয়। বাত জ্বর সাধারণত একটি ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্তের কারণে হয়ে থাকে। এই ব্যাকটেরিয়ার নাম Streptococcus pyogenes। তো বাত জ্বর হলে গলা ব্যথা হয় যাকে স্কার্লেট ফেভার বলা হয়। এই সংক্রমণ বেশি দিন থাকে না, তবে কখনো শরীরে কিছু জায়গায় গোপন থাকে। এবং ৭ দিন বা ৩০ দিন পর জয়েন্ট বা জোড় অঙ্গ, হার্ট কিংবা শরীরের অন্যান্য অঙ্গকে আক্রান্ত করে। 

আর যার কারণে বাত জ্বর বা স্থায়ী জ্বর হয়। এই জ্বর এর টেম্পারেচার ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাট কিংবা ৩৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে। এই জ্বরেও শ্বাস কষ্ট, ত্বকে ফুসকুড়ি, ক্লান্তি, জয়েন্ট ব্যথা, গলা ব্যথা এমনিক হৃদস্পন্দন এর প্রোবলেম হতে পারে। মস্তিষ্কের পর্যন্ত মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এটা থেকে বাঁচতে ব্যাকটেরিয়া থেকে বাঁচতে হবে। এক্ষেত্রে বাড়ীর আশপাশ সহ নানান দিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

জ্বর ঠোঁটো কেন হয়

জ্বর ঠোঁটো ও ভাইরাসের সংক্রমণ এর ফলে হয়ে থাকে। আর ভাইরাসের নাম হচ্ছে এইএসভি১ (HSV-1)। অর্থাৎ একে হার্পিস সিমপ্লেক্স ১ বলা হয়। এই ভাইরাস টা সাধারণত ঠোঁট, ঠোঁটের চারপাশে এবং মুখে ফোসকা পড়ে যায়। জ্বর ঠোঁটে সংক্রামিত বা আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বক, ফোসকা এবং লালা অন্য কেউ ছোঁয়া পেলে এটি ছড়িয়ে যায়। তাই সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরী। 

লেখকের শেষ মন্তব্য

জ্বর কেন হয় বিষয়টির সাথে বিভিন্ন জ্বর সংক্রান্ত ব্যাপার গুলো আলোচনা করেছি এ আর্টিকেলটিতে।প্রিয় পাঠক, উক্ত আর্টিকেলটি পুরোপুরি মনোযোগ দিয়ে পড়লে আমাদের প্রত্যাশা আপনি ভাইরাস জনিত বিভিন্ন জ্বর সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। আরও এরকম নিত্য নতুন আর ব্লগ বা আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন ইনশাআল্লাহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url