কাল কিয়ামতে একটি নেকীর জন্য যখন মানুষ সমস্যায় পড়ে যাবে তখন বুঝবে যে এ আমলের
কি পাওয়ার। তাই নেকির ফজিলত ও আমলগুলো সর্বদা জ্ঞাত হওয়া অত্যাধিক
হুঁশিয়ারি মুমিনের কাজ।তাহলে চলুন বিষয়টি আরম্ভ করি।
জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত সম্পর্কে লিখছি। জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন সম্পর্কে আল কুরআনুল কারীমে স্পষ্ট ঘোষণা এসেছে। আল কুরআনুল হাকিমের সূরাতুল ফাজির এর মধ্যে যেটি ৩০ পারায় অবস্থিত আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সুন্দর করে বলেছেন "ওয়া লায়ালিন আশর" যেখানে আল্লাহ তা'আলা 10 রাত্রের কসম করেছেন। দশ রাত্রি দ্বারা আরবি ভাষায় দিনরাত্রি উভয়কেই বুঝানো হয়েছে।
আর আল কুরআনের মুফাসসিরিন বা সম্মানিত ব্যাখ্যা কারীগণ এই ১০ সংখ্যার দ্বারা জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন কে বুঝিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা যে জিনিসটার শপথ করেন এটার দ্বারা সেই জিনিসটার গুরুত্ব বুঝানো হয়। যেমন মানুষ কোন জিনিস গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে শপথ করে অনুরূপ আল্লাহ তাআলা যে জিনিসটার বেশি গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে সেই জিনিসটা শপথ করেন।
অতএব বুঝাই যাচ্ছে যে জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের ফজিলত বা গুরুত্ব অত্যাধিক। আবার আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদের সূরাতুল বুরুজের মধ্যে বলেছেন "ওয়া শা-হিদিও ওয়া মাশহুদ" এখানে আল্লাহ তায়ালা আরো দুইটা জিনিসের কসম করেছেন, একটি হচ্ছে শাহেদ আর আরেকটি হচ্ছে মাশহুদ। শাহেদ দ্বারা বুঝানো হয়েছে আরাফার দিনকে আর মাসুদ দ্বারা জুমার দিনকে বুঝানো হয়েছে।
আর আরাফার দিন যেহেতু জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের মধ্যেই রয়েছে বাংলাদেশের হিসাব অনুসারে ৯ তারিখ সৌদি আরবের হিসাব অনুসারে ৮ তারিখ আরাফার দিন। সুতরাং বুঝা গেল যে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন এর গুরুত্ব ও ফজিলত আল্লাহর কাছে খুবই বেশি যেটি আমরা অনেকেই জানিনা। এই ১০ দিনে গুরুত্ব এই জন্য বেশি এই দশ দিনে বেশি বেশি আল্লাহর স্মরণ মনে ধারণ করতে হবে।
আল্লাহ তাআলার বেশি বেশি এই ১০ দিনে জিকির আজকার তাসবিহ তাহলিল তাকবীর এবং পড়তে হবে। জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ফজিলতের ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা স্পষ্ট করে বলেছেন কুরআন মাজীদের অন্য জায়গায় ফ্রি আইয়ামিম মা'দুদাত বলে, বুঝানো হয়েছে যে বছরের অন্যান্য মাছগুলোতে যত বেশি ইবাদত করা হয় তার চেয়ে বেশি এই ১০ দিনে ইবাদতের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
জিলহজ ফজিলত এই জন্য বেশি যে এ মাসে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ বা খুঁটির বা পিলারের পাঁচটি রয়েছে অর্থাৎ ঈমান বা শাহাদাত অর্থাৎ আল্লাহ আল্লাহর রাসূলের প্রতি ঈমানের সাক্ষ্য দেওয়া এ ব্যাপারটি যে কোন সময় বলা যায়, আবার এই মাসে রয়েছে বেশি বেশি সালাত পড়ার কথা, এই মাসের প্রথম ৯ দিন সিয়াম রাখার কথা বলা হয়েছে, এই মাসে দান সাদাকা বেশি করা যায় বা ফরজ যাকত ও দেওয়া যায়।
আমার এই মাসে যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের হজ্জ করার কথা বলা হয়েছে। তাহলে বুঝাই যাচ্ছে ইসলামের যে পাঁচটি খুঁটির উপরে দাঁড়িয়ে আছে সে পাঁচটি এই মাসে আদায় করার কথা স্পষ্ট বলা হচ্ছে। পাঁচটি খুঁটি যথাক্রমে শাহাদাত বা ঈমান, সালাত, সিয়াম, হজ্জ ও যাকাত। কাজেই জিলহজ্জ মাসের ফজিলত সবচেয়ে বেশি।
এই জন্য এ মাসে আবার বেশি বেশি আমল করার কথা বলা হচ্ছে। যে আমলগুলো করতে হবে সেগুলো হচ্ছে তাসবীহ বা সুবহানাল্লাহ বেশি বেশি পড়া, তাহমিদুল আলহামদুলিল্লাহ বেশি বেশি পড়া, তাহলিলব লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বেশি বেশি পড়া, তাকবীর বা আল্লাহু আকবার বেশি বেশি পড়া ইত্যাদি। আবার এই মাসে জিকির আজকার বা বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে।
মুখে যেমন আল্লাহ তাআলার নাম যপতে হবে তদ্রূপ অন্তরেও আল্লাহ তাআলার কথা স্মরণ রেখে সকল ধরনের পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকতে হবে এবং নেকীর কাজ বা সওয়াবের কাজ বেশি বেশি করতে হবে। এজন্য এ জিলহজ্জ মাসের ফজিলত আমলের বিষয়টি বেশি করে করতে বলা হচ্ছে।
কোরআন ও হাদিসের আলোকে জিলহজ মাসের আমল সম্পর্কে এখানে স্পষ্ট করে আলোচনা করছি। আমরা ইতিমধ্যে কোরআন মাজিদের কথা এবং সামান্য হাদিসের কথা উপরের শিরোনামটিতে আলোচনা করেছি। আবারো এখানে কিছু বিষয় আনয়নের চেষ্টা করছি। কোরআনে কারীমের দুই নম্বর সূরা সূরা বাকারার মধ্যে দ্বিতীয় পারায় অবস্থিত আয়াতের মধ্যে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট করে ঘোষণা করেছেন।
ঘোষণাটা হচ্ছে এরকম যখন তোমরা আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হবে বা পৌঁছবে তখন তোমরা বেশি বেশি আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করবে আল্লাহ তায়ালার জিকির-আজকার করবে। এখানে আল্লাহ তা'আলা বিশেষ করে হাজীদের লক্ষ্য করে বলছেন যারা হজ করার সমর্থ্য রাখে তারা যখন আরাফাতের ময়দানে পৌঁছবে তখন বেশি বেশি আল্লাহ তাআলার জিকির করবে আল্লাহতালাকে স্মরণ করবেন।
মুখ দিয়ে যেমন উচ্চারণ করে আল্লাহ তার আগে স্মরণ করবে বেশি বেশি তালবিয়া ও তাকবীর পড়ার মাধ্যমে অনুরূপ অন্তরেও আল্লাহ তায়ালার স্মরণ রাখতে হবে ধ্যান রাখতে হবে। এরপরে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'য়ালা আল কুরআনুল মাজীদের সূরা তাওবার মধ্যে বলেছেন যে জিলহজ মাসের এই নির্দিষ্ট ১০ টি দিনের আমল আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলার কাছে অধিক বেশি গ্রহণযোগ্য হয়।
কাজেই জিলহজ মাসের এই প্রথম ১০ দিন বেশি বেশি আমল করতে হবে। এই দশ দিনে বিশেষ করে প্র্যাকটিস করতে হবে বা জামাত সালাত আদায় করার। জামাতের সাথে সালাত আদায় করার সাথে সাথে ১২ রাকাত যে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আছে এগুলো আদায় করতে হবে। এক রাকাত ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ছাড়া যাবে না।
এ দশ দিন এর প্রথম ৯ দিন ১ তারিখ থেকে 9 তারিখ পর্যন্ত সাধারণ সিয়াম রাখতে হবে যেটি আল্লাহর নবী নির্দেশ করেছেন। এ মাসে বিশেষ করে আরাফার দিন সিয়াম রাখতেই হবে যার ফজিলত অনেক বেশি। এ দশ দিন দান সাদাকা করার কথা বলা হচ্ছে। এ মাসে যাদের সামর্থ্য রয়েছে যারা হজ্জ এবং ওমরা করার কথা হাদিসে বলা হয়েছে।
হাদিসে এভাবে বলা হচ্ছে যে আল্লাহ তাআলর কাছে এই দশ দিনের আমল যতটা বেশি প্রিয় অন্য মাসের অন্য দিন গুলোর আমল এত বেশি প্রিয় নয়। আল্লাহ তায়ালা কি দশদিনে যত বেশি আমলের মাধ্যমে সন্তুষ্ট করা যায় অন্য মাসে অন্য দিনগুলোতে তত বেশি সন্তুষ্ট করা যায় না। আল্লাহর নাবীকে প্রশ্ন করা হলো যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার চেয়েও বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে।
তখন আল্লাহর রাসুল উত্তরে বলেছিলেন যে তার কথা ভিন্ন যে তার জান মাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বের হয়ে গিয়েছে এরপর আর বাড়িতে ফিরে আসিনি শহীদ হয়ে গিয়েছে। কাজেই এই দিনগুলিতে বেশি বেশি আমলের মাধ্যমে আমরা আমাদের আমলনামা গুলো ভারী করতে পারি।
কারণ কাল কিয়ামতের ময়দানে একটি নেকির জন্য মানুষ কত ছুটাছুটি দৌড়াদৌড়ি করবে তার ইয়ত্তা বা সীমা থাকবে না। তাই আমরা বেশি বেশি এই দিনগুলিতে আমল করে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করি।
জিলহজ্জ মাসের ক্যালেন্ডার ২০২৪
২০২৪ সালের জিলহজ মাসের ক্যালেন্ডার ব্যাপারটি আলোকপাত করছি। ক্যালেন্ডার বলতে দিনপঞ্জিকা বাট এখানে সময়সূচী যে জিলহজ মাসের এই 10 দিনের কোন সময় কোন আমলগুলো করতে হবে এই ব্যাপারগুলো এখানে বর্ণনা করছি। সুপ্রিয় দর্শক ও পাঠক, জিলহজ্জ প্রথম ৯ দিন সাধারণ সিয়াম বা রোজা আদায় করতে হবে।
কারণ এই নয় দিন এর রোজা নফল রোজা। আর নফল রোজা হচ্ছে নফল ইবাদত। আর নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহকে অনেক বেশি সন্তুষ্ট করা যায়, আর এই ১০ দিনে করলে তো আরো বেশি সন্তুষ্ট করা যাবে। কারণ এই ১০ দিনে প্রথম ৯ দিনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নফল রোজা আদায় করতে বলছেন। এরপরে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতের সাথে আদায় করতে হবে।
এক ওয়াক্ত জামায়াত ছাড়া যাবে না। যদি কোন ঘটনাক্রমে বা কোন ওযর বসত জামাতের সাথে নামাজ আদায় করা না যায় তাহলে টাইমলি বা ওয়াক্ত মত নামাজটা আদায় করে নিতে হবে। এরপর এ ১০ দিনের প্রতিটি সময় দিনে হোক রাতে হোক যেকোনো সময় আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ঘোষণা করতে হবে। অর্থাৎ যে তাকবীরের কথা বলা হয়েছে সেই তাকবীর বলতে হবে।
বলতে হবে এভাবে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ। মাঠে-ঘাটে বাজারে রাস্তায় যে কোন সময় সশব্দে তাকবীর পড়তে হবে। আর মেয়েরা বাড়িতে ধীরে ধীরে তাকবীর পড়বে। তাকবীরের ধ্বনিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে যাবে প্রকম্পিত হবে।
আজ সমাজে মানুষ গাফেল হয়ে গেছে আল্লাহ স্মরণ থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছে। আপনাকে উদ্যোগ নিতে হবে যে কোন জায়গায় যারা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রয়েছে তাদের সামনে গিয়ে জোরে জোরে তাকবির পড়া। হয়তো আপনাকে মানুষ পাগল বলবে কিন্তু আল্লাহ তায়ালা আপনাকে অনেক চালাক এবং অনেক বুদ্ধিমান বলেছেন।
এই তাকবীর পড়ার মাধ্যমে মানুষদেরকে সজাগ করতে হবে যে তুমিও তাকবির পড়ো আমি যেমন পড়ছি। আর মানুষ যখন আপনাকে পাগল বলবে একটি কথা স্মরণ করবেন যে হাজারো গাফেলের মধ্যে একজন যখন জাকের পড়ে যাবে তখন সাধারণত মানুষ পাগল বলতেই পারে। আপনাকে বুঝাতে হবে যে ভাই আর কত?
এই ১০ দিন যেহেতু আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল বলেছেন আল্লাহকে স্মরণ করতে তাই আল্লাহকে স্মরণ করি না সমস্যা কি। আল্লাহর জিকির করলে তো আর আমাদের কোন সমস্যা আসছে না, বরঞ্চ আল্লাহর জিকির করলে অন্তর তৃপ্তি এবং প্রশান্তি লাভ করে। কাজেই দশদিন আল্লাহ তায়ালার বেশি বেশি জিকিরের মাধ্যমে এমন প্রস্তুতি নিতে হবে যেন সামনের দিনগুলো এই অভ্যাস থেকে যায়।
জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ফজিলত
জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ফজিলত ব্যাপারটি ইতিমধ্যেই আলোকপাত করেছি। এখানে আরও কিছু লিখার চেষ্টা করছি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন ইনশাআল্লাহ অনেক কিছু বুঝতে পারবেন। জিলহজ মাসের প্রথম 10 দিনের গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস এসেছে।
যার মধ্যে একটি হাদিসর বোঝ এ রকম হচ্ছে যে এই দশ দিনে এবাদত করে এবং আমল করে আল্লাহ তাবারকা ওয়া তায়ালাকে যত বেশি রাজি খুশি করা যায় অন্য কোন দিনে এত বেশি রাজি খুশি করা যায় না। যে আমলগুলো করতে হবে বিরিয়ানি লেখার চেষ্টা করছি।
১. গুনা ছাড়তে হবে বা পাপ করা যাবে না।
২. আল্লাহকে ভয় করতে হবে এক্ষেত্রে আল্লাহর অর্থাৎ আদেশগুলোকে মানতে হবে এবং আল্লাহর নিষেধ গুলোকে বর্জন করতে হবে।
৩. এ দশ দিন বেশি বেশি আল্লাহ তায়ালার জন্য তাকবীর পড়তে হবে যে তাকবীরের কথা হাদিসে এসেছে যেই সিস্টেমে সেই ভাবে। অর্থাৎ বলতে হবে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ। অর্থাৎ এখানে তাকবীর রয়েছে তাহলিল রয়েছে এবং তাহমিদ রয়েছে। তাকবির মানে আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করা, তাহলিল মানে আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই এই ঘোষণা দেওয়া, এবং তাহমিদ মানে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করা।
৪. এ দশ দিন যত বেশি পারা যায় ফরজ ইবাদত যেমন সালাত কে জামাতের সাথে গুরুত্ব সহকারে আদায় করা।
৫. এবং সুন্নতগুলোকে বিশেষ করে ফরজ নামাজের আগে পরে যে সুন্নতগুলো রয়েছে যেগুলো কে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলা হয় সেগুলো না ছাড়া। এই সুন্নাতের ব্যাপারে হাদিসে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি ফরজ সালাত পাঁচ ওয়াক্ত এর আগে পরে যে ১২ রাকাত সুন্নত রয়েছে সুন্নতে মুয়াক্কাদা যে এগুলো আদায় করবে তার জন্য জান্নাতে একটা করে বালাখানা নির্মাণ করা হবে বা সুন্দর প্রাসাদ তৈরি করা হবে যেখানে সে আনন্দের সাথে থাকবে। তারমানে বুঝা গেল যে জান্নাতে প্রাসাদ তৈরি করা হবে মানে জান্নাত তার জন্য অবধারিত হবে।
৬. এই দশ দিনের প্রথম নয় দিন নফল সিয়াম আদায় করতে হবে। যে সিয়ামগুলো হচ্ছে সাধারণ সিয়াম বা সিয়ামে মুতলাক।
৭. আর বিশেষ করে আরাফার দিনে সিয়াম আদায় করতে হবে। যেই সিয়াম রোজা যারা হজ্জ করতে যাইন তারা আদায় করবে। আর হাজিরা যারা হজ করতে গিয়েছে তারা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতে লিপ্ত থাকবে। আর আরাফাত দিনের সিয়ামের কথা বলা হয়েছে হাদিসের মধ্যে যে আগের এবং পরের এক বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে সুবহানাল্লাহ।
৮. এরপরে এই দশ দিনে বেশি বেশি জিকির আজকার তাসবিহ তাহলিল করতে হবে যেগুলো বারবার বলা হয়েছে।
৯. এরপরে দশ দিন যারা হজ্জ করতে যাওয়ার জন্য সমর্থ্যবান তারা হজ্জ করবে।
১০. আর এই ১০ দিনে বেশি বেশি দান সাদাকা খয়রাত করতে হবে।
কুরআনের আলোকে জিলহজ্জ মাস এর ফজিলত
কোরআনের আলোকে জিলহজ মাসের ফজিলত এর ব্যাপারটি আমরা ইতিমধ্যেই ব্যক্ত করেছি আবারো স্পষ্ট করার চেষ্টা করছি। সুপ্রিয় পাঠক, আল কোরআনে জিলহজ মাসের ফজিলতের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে হে উম্মতে মোহাম্মদী তোমরা বেশি বেশি জিলহজ মাসে আল্লাহ তাআলাকে ডাকো, স্মরণ করো, জিকির করো ইত্যাদি।
এই মাসে তোমরা যারা হজ করতে যাবে তারা বায়তুল্লাহ বা আল্লাহর ঘরকে সামনে রেখে মনোযোগ সহকারে খুঁযূ খুশূ সহকারে সালাত আদায় কর। কারণ আল্লাহ তায়ালাকে ডাকার বা স্মরণ করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে সালাত। আর এই কথাটি আল কুরআনুল কারীমে ২১ পারার শুরুতে বলা হয়েছে।
আল্লাহর ঘরের সামনে হাত তুলে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করো দোয়া করো ব্যাপারগুলো বলা হয়েছে। এবং হজের মধ্যে যতগুলো রুকন আরকান হুকুম আকাম রয়েছে সেগুলো যত্ন সহকারে আদায় কর।
হাদীসের আলোকে জিলহজ্জ মাসের আমল
হাদিসের আলোকে জিলহজ্জ মাসের আমল ব্যাপারটি ও ইতিমধ্যে ব্যক্ত করেছি আবারও এখানে কিছু বিষয় উল্লেখ করছি। যারা হজ্জ করতে যাইনি বা যাদের হজ করার সামর্থ্য হয়নি তারা আল্লাহকে বেশি বেশি ডাকবে, স্মরণ করবে বাড়িতে বসে থেকে, চলাফেরায়, শুয়ে বসে, যে কোন ক্ষেত্রেই যেকোনো জায়গায়।
শুধু অপবিত্র জায়গা গুলো ছাড়া। এক্ষেত্রে মসজিদে আল্লাহ তায়ালাকে বেশি বেশি স্মরণ করতে হবে। বিশেষ করে মসজিদে সালাত আদায় করতে হবে। এবং দিনের বেলায় সিয়াম আদায় করতে হবে। এবং রাতের বেলায় পারলে জেগে আল্লাহতালার জন্য নামাজ পড়া, জিকির করা, তাসবিহ তাহলিল করা ইত্যাদি।
বিশেষ করে সবচেয়ে বড় জিকির এবং সবচেয়ে বড় ইবাদাত বা গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত সম্পন্ন আমল হচ্ছে কোরআন পড়া বা কোরআন তেলাওয়াত করা। যেহেতু এই মাসে আল্লাহ তায়ালার বেশি নৈকট্য লাভ এবং সন্তুষ্ট করা যায় বেশি বেশি আমল করার মাধ্যমে। কাজেই হাদীসের ভাষ্য অনুসারে সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ ইবাদত বা আমল হচ্ছে কোরআন তেলাওয়াত করা সেটি যতটুকু পারা যায় সময় করে নিয়ে পড়তে থাকতে হবে দিনে রাতে।
জিলহজ্জ মাসের রোজা কয়টি
জিলহজ্জ মাসের রোজা যতগুলো সে ব্যাপারটা আলোচনা করছি। জিলহজ মাসে কয়টি রোজা রাখতে হবে এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা আলোচিত হয়েছে। এরপরও এখানে আবারও স্মরণ করি সম্মানিত পাঠ্যবৃন্দ কে। প্রিয় পাঠক, জিলহজ্জ মাসের রোজা হল দুই ধরনের একটা সাধারণ আর একটা হচ্ছে বিশেষ। সাধারণ সিয়াম বা রোজা হচ্ছে জিলহজ মাসের প্রথম ৯ দিন টানা আদায় করা।
আর বিশেষ করে আরাফাতের দিনে রোজা রাখা হচ্ছে বিশেষ ইবাদত এবং ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। বলা হয়েছে যে আরাফাত দিনে রোজা রাখলে আগের এবং পরের এক বছরের গুনাহ মাফের কাফফারা হয়ে যাবে অর্থাৎ গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
আর এক্ষেত্রে ছগিরা বা ছোট গুনাহ গুলো মাফ হবে। আর বড় গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হবে তাহলে আল্লাহ তায়ালা মাফ দিবেন ইনশাআল্লাহ। আর এক্ষেত্রে আরাফাতের দিনটি বাংলাদেশের হিসেবে কোন তারিখ হবে এটি নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। কে বলছেন ৮ তারিখ কেউ বলছেন ৯ তারিখ।
বিশ্বের হিসাব অনুসারে বা সৌদি আরবের হিসাব অনুসারে ৮ তারিখ আর বাংলাদেশের হিসাব অনুসারে ৯ তারিখ। যেহেতু দুই দিনের হিসাবের ব্যাপারটা ইখতিলাফ বা মতানৈক্য রয়েছে সেহেতু দুই দিনেই রোজা রাখাটা একজন বুদ্ধিমানের জন্য কাজ হবে। এক্ষেত্রে যেদিন আরাফার দিন হবে সেদিনটিও পাওয়া গেল এবং বাড়তি আরেক দিনের সওয়াব ও পাওয়া গেল। অতএব সম্মানিত পাঠক দুইদিন রোজা রাখাটাই আপনার আমার জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
জিলহজ্জ মাসের তাকবীর
জিলহজ্জ মাসের তাকবীরের ব্যাপারে এখন আলোচনা করছি। জিলহজ মাসের তাকবীর যেভাবে আদায় করতে হবে সেটা আমরা ইতিমধ্যে দুই জায়গাতে বলেছি আবারও এখানে বলছি। প্রিয় পাঠক প্রথমে তাকবীর নিয়ে একটু বিশ্লেষণ করি। তাকবীর শব্দ হচ্ছে আরবি শব্দ যেটি আরবি গ্রামার বা ব্যাকরণ অনুসারে বাবে তাফঈলের মিসদার।
আরো পড়ুনঃ শ্রেষ্ঠ জিকির - সর্বদা জিকিরের ফজিলত যা সকল মুসলিম মুমিনের জানা উচিত
আর এর অর্থ হচ্ছে বড়ত্ব ঘোষণা করা বা বড় বলে স্বীকার করা। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে বলছেন যে জিলহজ্জ মাসের এই নির্দিষ্ট দিনগুলোতে তোমরা বেশি বেশি তাকবীর পড়। সাধারণত জিলহজ মাসের শুরু থেকে 9 তারিখ পর্যন্ত যে তাকবীর পড়তে হবে এটি হচ্ছে সাধারণ তাকবীর বা তাকবীরে মুতলাক।
আর জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজরের পর থেকে আইয়ামে তাশরিকের দিনগুলো অর্থাৎ ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ মানে ১৩ তারিখের মাগরিব পর্যন্ত নির্দিষ্ট তাকবীর পড়তে থাকতে হবে। আর এই তাকবীরকে বলা হয় তাকবীরে মুকায়্যাদ। ঈদুল আযহার দিনে ফজরের সময় জামাতের সাথে সালাত আদায় করে ১৩ তারিখ পর্যন্ত নির্দিষ্ট তাকবীর পড়তেই থাকতে হবে।
আর এই তাকবীর পড়তে থাকতে হবে ঘাটে-ঘাটে বা মাঠে বাজারে যত্রতত্রে। তাকবীরের ধ্বনিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হবে বাজবে। তাকবীর পড়তে হবে এইভাবে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার (দুইবার করে চারবার ) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু (তাহলীল) আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার (দুইবার করে দুইবার) ওয়ালিল্লাহিল হামদ (তাহমিদ) এই সম্পূর্ণটাই এখানে তাকবীরের সাথে পড়ার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে তাকবীর তাহলীল এবং তাহমীদ রয়েছে।
জিলহজ্জ মাসের করণীয়
জিলহজ মাসের করণীয় যেগুলো করতে হবে সেগুলো আমরা ইতিমধ্যে আলোকপাত করেছি আবারও এখানে স্পষ্ট করে লিখার চেষ্টা করছি। সম্মানিত পাঠক, জিলহজ মাসে বিভিন্ন ভালো ভালো কাজ করতে হবে। মানুষকে সাহায্যে সহযোগিতা করতে হবে, দান সদাকা করতে হবে, যাকাত আদায় করতে হবে যদি রমজান মাসে না আদায় করা হয়। এ মাসে হজ করতে হবে।
বেশি বেশি জিকির আজকার তাসবি তাহলিল পাঠ করতে হবে। কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে। এ মাসে জামাতের সাথে সালাতগুলো আদায় করতে হবে। সুন্নাতগুলো আদায় করতে হবে ছাড়তে হবে না। এ মাসে মানুষকে পারলে কর্জে হাসানা দিতে হবে যে কর্জে হাসানার ফেরত আল্লাহতালা ডাবল দিবেন বা বউ বলে বাড়িয়ে দিবেন বলে ওয়াদা করেছেন।
আবার এই মাসে পরস্পর পরস্পরকে ভালো কাজে সহযোগিতা করতে হবে এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে। এ মাসে যতবেশি পারা যায় দাওয়াতি কাজ করতে হবে। এই মাসে পারলে রমজান মাসের লাইলাতুল কদরের ন্যায় রাত জেগে ইবাদত বা জিকির আজকার তাসবিহ তাহলিল এবং নামাজ আদায় করতে হবে।
এক কথায় যত বেশি ভালো ভালো আমল করা যায় আর এই ভালো আমলগুলো দিয়ে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা যায় তাই সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে। এইতো আল্লাহ তায়ালা বলছেন যে তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে সাধ্যমত ভয় কর এবং বুকের ভিতরে ভয়টা ধারণ করে আল্লাহর নির্দেশকে মানো এবং নিষেধকে বর্জন করো।
কাজেই প্রিয় পাঠক বেশি বেশি আমল করুন এবং আমলনামা ভারী করুন। আর কিয়ামতের দিন মিজানের পাল্লায় এ আমলনামার ভারী হওয়ার মাধ্যমে জান্নাত লাভ করুন যেটা একজন মুসলিম এবং মুমিন এর জন্য সবচেয়ে কাঙ্খিত এবং সকলতম বিষয়।
লেখকের শেষ মন্তব্য
জিলহজ্জ মাসের আমল ও ফজিলত বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আর ও বিভিন্ন বিষয় সহকারে আলোচনা করেছি। প্রিয় পাঠক উক্ত বিষয়টি বা আর্টিকেলটি আপনি যদি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আমরা আশা করছি যে জিলহজ মাসে যে সমস্ত আমল গুলো করা হয় সেগুলো স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছেন। আর আমল করলে আল্লাহ তায়ালাকে যে রাজি খুশি করা যায় এ বিষয়টিও বোঝার চেষ্টা করেছেন। কাজেই বেশি বেশি আমল করুন আর আমাদের সাথেই থাকুন এক্ষেত্রে অচিরেই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেয়ে যাবেন ইনশাল্লাহ।
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url