গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার অজানা উপকারিতা

গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতাগুলো কীগর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা বিষয়টি জানতে এই পোস্টটি ক্লিক করেছেন তাই না? প্রিয় পাঠক, গর্ভাবস্থায়ী কি খাওয়া যাবে আর কি খাওয়া যাবেনা এবং কোন ফল গুলো হওয়ার কি উপকারিতা কিসের গুলো ধারাবাহিকভাবে এই পোস্টে লিখার চেষ্টা করব। 

গর্ভাবস্থায়-খেজুর-খাওয়ার-উপকারিতা

আপনি যদি প্রতি মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে খেজুর খেলে কি উপকারিতা গর্ভকালীন সময়ে বিষয়টি সহ অন্যান্য আরো বেশি তথ্য জানতে পারবেন ইনশাআল্লাহ্‌! গর্ভাবস্থায় খাওয়ার উপকারিতা পড়তে থাকুন!!

পেজ সূচীপত্রঃ গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সহকারে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো জানুন

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করছি। খেজুর অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবারের নাম। খেজুর ধর্মীয়ভাবেও খুবই প্রসিদ্ধ একটি খাবার। খেজুর ফল বিশেষ করে সৌদি আরবে বেশি বিখ্যাত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুর খাওয়ার প্রতি খুবই গুরুত্ব দিতেন। সিয়ামের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত অনেক সময় তিনি খেজুর খেয়েই সেহরির কার্য সম্পন্ন করতেন। প্রতি ইফতারের সময় ইফতারিতে খেজুর থাকতো। 

এছাড়া বর্তমান পুষ্টিবিদ এবং স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে খেজুর অত্যন্ত গুনাগুন ও পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি ফল ও খাবারের নাম। যেটি গর্ভাবস্থার মায়েদের জন্য আরও বেশি উপকারী। এক্ষেত্রে ইন্ডিয়ান পুষ্টিবিদ ডাক্তার রুহিনি খেজুর যে গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা ও গর্ভে থাকা শিশুর বিভিন্নভাবে সুস্থ থাকা ও শরীর বৃদ্ধির জন্য অত্যাধিক উপকারী। এই খেজুরে রয়েছে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা। 

আরো এতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন বা লৌহ, এবং একাধিক ভিটামিন যেমন ভিটামিন কে এবং ভিটামিন বি ইত্যাদি। গর্ভবতী নারীদের শরীরে শক্তির উৎস হিসেবে খেজুর ব্যবহৃত হয়, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা রয়েছে। আর শর্করা গর্ভাবস্থায়ী শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়ায় শক্তি যোগাতে খুবই সহায়ক। এক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার মা যেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত না হয়। কারণ ডায়াবেটিস শর্করায় আরও বৃদ্ধি পায় তাই। 

আরো পড়ুনঃ Carrot: গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতাগুলো কী বিস্তারিত জানুন

খেজুর আয়রন বা লৌহের জন্য খুবই প্রসিদ্ধ খাবার। আর গর্ভাবস্থায় নারী আয়রন বা লোহের ঘাটতির জন্য রক্তস্বল্পতায় হবে। এক্ষেত্রে আয়রন রক্তের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। খেজুরে খুব বেশি পরিমাণ ফাইবার বা আঁশ থাকায় গর্ভাবস্থায় মায়েদের পেট পরিষ্কার রাখতে এবং খুব কষ্ট কাঠিন্য থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। কারণ গর্ব অবস্থায় পেটে খুব বেশি পরিমাণ গ্যাস হয়ে যায় যার কারণে সে কোষ্ঠকাঠিন্যতে ভোগে আর আঁশ যুক্ত খেজুর তার মুক্তি দেয়। 

খেজুর অত্যন্ত শক্তির উৎস, কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন কে ও ভিটামিন বি এবং আরো রয়েছে শক্তি বৃদ্ধিকারক উপাদান ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম ইত্যাদি, যার কারণে গর্ভাবস্থায় মা খেজুর খেলে শরীরে প্রচুর শক্তি পায়। খেজুর খাওয়ার কারণে মা ও সুস্থ থাকে শিশু ও সুস্থ থাকে, এক্ষেত্রে গর্ভধারণ এবং গর্ভপাত দুটোই অত্যাধিক সহজ হয় এবং কষ্ট লাঘব হয়। আশা করছি গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা বুঝতে পেরেছেন।

গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা বিষয়টি এখানে সুস্পষ্ট করছি। হ্যাঁ একজন গর্ভবতী মাকে অনেক বড় দায়িত্ব নিতে হবে, কারণ তার গর্ভের ভিতরে যে আরো একজন রয়েছে সে হচ্ছে তার কলিজার টুকরা অনাগত সন্তান। এ সময় খুব বেশি সচেতন থাকতে হয় একজন গর্ভবতী নারীকে। এজন্য খেয়াল খুশি যা ইচ্ছা তা খেলে চলেনা। কোন খাবার ক্ষতির কারণ এবং কোন খাবার উপকারে ভরা বিষয়গুলো সচেতনতার সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হয়। 

গর্ভে সন্তান থাকা অবস্থায় অনেক সচেতন পরিবার একজন অভিজ্ঞ গাইনি ডাক্তার বা একজন পুষ্টিবিদ বা স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ রাখেন সবসময়। এটি খুবই চমৎকার এবং চিন্তনীয় একটা ব্যাপার যেটা প্রত্যেক সন্তান সম্ভবা মা এবং তার স্বামী বা পরিবারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জানার চেষ্টা করি যেমন একটি উপকারী ফল কলা নিয়ে। কলাই প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যেটা একদিন গর্ভবতী নারীর জন্য অত্যন্ত উপকারী। 

গর্ভবতী নারীর এই সময় তার ব্লাড বা রক্তের মাত্রা ঠিক থাকে না। রক্তের মাত্রা ঠিক রাখতে এই কলা গর্ভবতী নারীর জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কলাই রয়েছে খুব বেশি পরিমাণ ভিটামিন বি। যেটি গর্ভবতী নারীর জন্য শক্তি যোগাবে। একজন গর্ভবতী নারী প্রায় সময়ই দুর্বলতা অনুভব করে বিশেষ করে ঘুম থেকে উঠার সময় চলাফেরা বা হাঁটার সময়। এই সময় কলা নিয়মিত খেলে শক্তির আধার হিসাবে কাজ করবে। 

কলাতে আরো রয়েছে লৌহ যেটা গর্ভবতী নারী হিমোগ্লোবিনের উপকার করবে। গরবস্থায় মায়েদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় কলা খাওয়ার মাধ্যমে এটা দূর হতে পারে। কলাই রয়েছে ফলিক অ্যাসিড, এটি শিশুর ব্রেইন বিকাশে সহায়ক হবে। গর্ভবতী নারীর অনেক সময় এসিডিটি বা অম্লত্য দেখ বা গ্যাস লক্ষ্য করা যায় কলা খাওয়ার মাধ্যমে এটি পরিমাণে কম হয় এবং বুকপুড়া বা বুক জ্বলা কমে যায়। কলা খাওয়ার মাধ্যমে আরো নানান উপকারিতা রয়েছে। 

কলা বিশেষ করে রাতে খাবারের পর বা যেকোনো ভারি খাবার গ্রহণের পরে খাওয়াটা বেশি ভালো। এক্ষেত্রে হজমে সাহায্য করবে এবং খাবার চাহিদা ভালো থাকবে। খাবার চাহিদা ভালো থাকলে, শরীরের শক্তি হবে এবং কাজকর্ম করতে ভালো লাগবে। গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা জানতে পারলেন তো?

গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বলছি। প্রিয় পাঠক, গর্ভাবস্থায় আপনি আপেল খাবেন কেন? গর্ভাবস্থায় আপিল খাওয়ার নানা উপকার সম্পৃক্ত কথা রয়েছে। এই  আপেল খাওয়ার মাধ্যমে মা যেমন ভালো থাকে গর্ভের শিশুটিও অনুরূপ ভালো থাকে। শিশুর মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে, মায়ের শরীরের শক্তি ভালো থাকে, হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে, ফুসফুস সুস্থ থাকে, হৃদরোগ থেকে মুক্ত থাকে এবং হজম প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করে ইত্যাদি। 

আপেলে যেহেতু খাদ্যগত তন্তু বা আঁশ রয়েছে বিধায় হজম ক্রিয়া ঠিক থাকে এ ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না। আপেলে এক ধরনের কোয়ারসেটিন থাকে যেটি শিশুর মস্তিষ্কের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। আপেলে রয়েছে ক্যালসিয়াম, এটি মায়ের হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে। আপেলে রয়েছে ফাইবার বা খাদ্যগত আঁশ যেটি হজম প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করে এবং পেট ঠিক রাখে। তবে এক্ষেত্রে বেশি খেয়ে নিলে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হতে পারে। 

তাই দৈনিক দুইটির বেশি নয়। আপেলে আরো রয়েছে আয়রন যা লোহিত রক্তকণিকার সাথে মিশে হিমোগ্লোবিন উৎপন্ন করে এবং রক্তশূন্যতা দূর করে। যেহেতু মায়েদের পেটে বাচ্চা থাকা অবস্থায় রক্ত সংক্রান্ত সমস্যায় খুব ভুগতে হয়। এক্ষেত্রে আপেল খুব সক্রিয় ভূমিকা রাখে। আপেলে রয়েছে নিম্নমানের গ্লুকোজ, সুক্রোজ এবং ফ্রোক্টোজ জাতীয় শর্করা যেগুলো শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। আপেলে রয়েছে ভিটামিন সি যেটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হেল্প করে।

গর্ভাবস্থায়-আপেল-খাওয়ার-উপকারিতা

আপেলে আরো রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেটা হৃদরোগ থেকে বাঁচায়, এক্ষেত্রে হৃদরোগের ধমনী গুলোতে কোলেস্টেরল জমা থেকে বিরত রাখার মাধ্যমে। আপেলের আরো নানাবিধ উপকার রয়েছে যেগুলো গর্ভাবস্থায় নারীদের জন্য খুবই উপকারী। যেমন আপেলের ভিনেগার বা রস প্রতিদিন খেলে শরীর থেকে যাবতীয় টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ দূর হয় ইত্যাদি। তবে আপেল খাওয়ার সময় একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে বিচি খাওয়া যাবে না, কারণে বিচিতে রয়েছে ছায়া নাইট যেটা বিষাক্ত একটা পদার্থ। এ ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। গর্ভাবস্থায় আপেল খাওয়ার উপকারিতা বুঝলেন?

গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে সংক্ষেপে লিখছি। গর্ভ অবস্থায় কি খাওয়া যায় কি খাওয়া যাবেনা এ নিয়ে নানান সন্দেহ পোষণ করা হয়। পেয়ারা খাওয়ার ব্যাপারটাও সন্দেহ থেকে মুক্ত নয়। কেউ বলেন যে খাওয়া যাবে কেউ বলেন যে খাওয়া যাবে না নানান প্রশ্ন এবং নানান উত্তর। তবে এটাই সত্য যে পেয়ারা অত্যন্ত স্বাস্থ্য উপযোগী এবং সুস্বাদু একটা ফল যেটা গর্ভ অবস্থায় খেলে আরো উপকারী হয়ে থাকে গর্ভবতী মায়ের জন্য। 
 
কারণ পেয়ারায় রয়েছে অত্যাধিক ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ই, বি ৩, ৬, ও ৯ ইত্যাদি। যেগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় যেমন ভূমিকা রাখে, প্রচুর শক্তি উৎপাদন করে এবং মা ও শিশুর দৃষ্টিশক্তি অবদান রাখে। মেটাবলিজম বা হজম ক্রিয়ায় সাহায্যকারী পেয়ারা। পেয়ারা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে কারণ এতে রয়েছে পটাশিয়াম। গর্ভবতী স্ত্রীলোকের কর্টিসোল হরমোন ক্ষরণ হয় এ ক্ষেত্রে পেয়ারায় ম্যাগনেসিয়াম থাকায় মস্তিষ্ককে শান্ত আরাম রাখে এবং মস্তিষ্কের বিকাশে সহযোগিতা করে। 
 
পেয়ারায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় গর্ভবতী নারীকে ক্যান্সার হতে দেয় না, যদিও গর্ভবতী নারীর খুব একটা ক্যান্সারের সম্ভাবনা দেখা যায় না। লাইকোপিন নামে এক ধরনের উপাদান থাকায় গর্ভবতী স্ত্রীর শরীরে রোগ এবং সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখে। পেয়ারা খাওয়ার মাধ্যমে আরো যে উপকার গলো পাওয়া যায় সেগুলো হচ্ছে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদরোগের ঝুঁকি সহ আরো একাধিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমায়। 
 
পেয়ারার বিচি দই এর মিশিয়ে খেলে গ্যাস বা অম্বল থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পেয়ারায় প্রচুর ফাইবার থাকায় বেশি পরিমাণ খাওয়া যাবে না এক্ষেত্রে ডায়রিয়ার মত সমস্যাই ভুগতে হতে পারে। আবার কাঁচা পেয়ারা অর্ধ পাকা না খাওয়াই ভালো। স্বাস্থ্য সচেতন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা পুরা পাকা পেয়ারা খাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। আর লাল পেয়ারার চাইতে সাদা পেয়ারা খাওয়া বেশি উপকারী। গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা জানলেন কি না?

গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কি হয়?

মুড়ি খেলে কি হয় বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করছি। গর্ভাবস্থায় মুড়ি খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে অপকারিতাও কিছু রয়েছে। গর্ভাবস্থায় মুড়ি খাওয়া যাবে যেহেতু মুড়ি চাল থেকে তৈরি হয়। আর চাল যদি লাল চাল হয় তাহলে তো কথাই নেই নির্দ্বিধায় খাওয়া যাবে। কারণ লাল চাল ন্যাচারাল বা প্রাকৃতিক খাবার হিসাবে গণ্য। মুড়ি খেলে উপকার গুলো হয় গর্ব অবস্থায় সেগুলো যথাক্রমে এগুলো। মুড়িতে সোডিয়াম থাকায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। 
 
 
ফাইবার বা আঁশ রয়েছে মুড়িতে বিধায় হজমে সহায়ক। আবার এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম বিধায় এটি শরীরের হাটু, মাজা এবং আঙ্গুলের যে হাড় গুলো রয়েছে সেগুলো শক্ত করে। মুড়িতে প্রচুর পুষ্টি থাকায় এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মুড়ি ভিজিয়ে খেলে এসিডিটি বা গ্যাস-অম্লের সমস্যা দূর করে। তবে মুড়ির কিছু অপকারিতা রয়েছে যেমন মুড়ি চানাচুর এর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যাবেনা এক্ষেত্রে গ্যাস বা গ্যাসিডিটির জোর দেয়। 
 
আর সাধারণত গর্ব অবস্থায় নারীদের গ্যাস বা এসিডিটি সমস্যা বেশি হয়। গর্ভাবস্থায় মুড়ি খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়, এক্ষেত্রে মা ও বাচ্চার হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে মুড়ি খেলে সুগার বেড়ে যায় ফলে মায়েদের ডায়াবেটিস রোগে ভোগার সম্ভাবনা থাকে এবং আস্তে আস্তে শরীরের ওজন কমে যায় যেটা গর্ভবতী নারীদের জন্য ক্ষতির কারণ। এক্ষেত্রে মুড়ি খুব বেশি না খাওয়াই ভালো। 
 
যদিও অনেক সময় বিশেষ করে বৃষ্টির সময় বা কোন কাজ না থাকলে মুড়ি খেতে মন চায়। এক্ষেত্রে হালকা শুধু শুধু মুড়ি খেতে হবে বা ভিজিয়ে খেতে হবে কিন্তু এর সাথে তেল, চানাচুর ও পেঁয়াজ ইত্যাদি মেখে খুব বেশি পরিমাণে খেলেই উপকারের চাইতে অপকার বেশি হবে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরী। যেহেতু গর্ভবতী মাকে কি খাওয়া যাবে, কি খাওয়া যাবেনা, কতটুকু খেতে হবে এই ব্যাপারগুলো তার পেটের সন্তানটির জন্য হলেও সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে।

গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবেনা?

গর্ভাবস্থায় যা যা খাওয়া যাবেনা বিষয়টি এখানে আলোকপাত করছি। গর্ভাবস্থায় অনেক কিছু খাওয়া যায় আবার অনেক কিছু খাওয়া যায় না। তাই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অনেক ক্ষেত্রেই অনেক কিছু খেতে বলেছেন আবার বাছ বিচার করেও খেতে বলেছেন। গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ধরনের ফলমূল শাক-সবজি এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করার কথা স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন। কিন্তু এই ফল, শাকসবজি, এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে গিয়ে সচেতন হতে হবে। 

কারণ এগুলো খাওয়ার কথা আছে বলেই বেশি পরিমাণে খাবেন তা চলবে না। সবকিছুতেই একটা স্ট্যান্ডার্ড বা আদর্শ মাপ রয়েছে। আদর্শ মা অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার সহ ইত্যাদি খাবার খেলে শরীরের রোগ ব্যাধি বাসা বাঁধবে না এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। তাই আপনি যদি একজন গর্ভবতী মা পাঠিকা হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য নিচের বিষয়গুলো সতর্কতার সাথে পরিহার করতে হবে খাওয়া যাবেনা। 

প্রথমত চা কফি পান করার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে দৈনিক ২০০ গ্রাম এর বেশি খাওয়া যাবেনা। অ্যালকোহল খাওয়া মোটেও ঠিক হবে না কারণ এক্ষেত্রে আপনি মা সহ আপনার পেটের বাচ্চার খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি হয়ে যাওয়ায় হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। যেকোনো মাছ মাংস ডিম খেতে গিয়ে ভালোভাবে রান্না করে খেতে হবে এক্ষেত্রে কাঁচা বা হাফ সিদ্ধ করে খাওয়া যাবে না। 

কারণ কাঁচা বা অর্ধ বয়েল সিদ্ধ করে খেলে বিভিন্ন রোগ জীবাণু কাঁচা মাছ মাংস ডিমের সাথে শরীরে অনুপ্রবেশ করতে পারে। যেমন লিস্টেরিয়া, টোক্সোপ্লাসমা, ই কোলি ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু শরীরে ঢুকে একাধিক ক্ষতি করতে পারে। যেমন ডিম হাফ বয়েল খেলে জ্বর, পাতলা ও পায়খানা বমি বমি ভাব ইত্যাদি হতে পারে। মাংস অর্ধ-বয়েল খেলে নার্ভের সমস্যা, মৃগী রোগ এবং চোখের অবনতি ইত্যাদি হতে পারে। 

মাছ অর্ধ সিদ্ধ খেলে নোরো ভাইরাস এবং কোভিড নাইন্টিন ইত্যাদি হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি মায়ের যেমন সমস্যা, আপনার পেটের বাচ্চার ও তদ্রুপ সমস্যা ঘটতে পারে। বিষয়গুলো সাবধানতার সাথে মেনটেন করা উচিত।

গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা বিষয়টি আলোকপাত করছি। কিসমিস সাধারণত আঙ্গুর ফল থেকে তৈরি হয়। আঙ্গুর ফল প্রথম শুকানো হয় এবং সেটি একটা পর্যায়ে কিসমিস হয়ে যায়। কিসমিসের একাধিক উপকারিতা রয়েছে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীর জন্য কিসমিস প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখাটা অত্যাধিক পুষ্টিকর চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। 

এই কিসমিসের ভিতরে প্রচুর ফাইবার উপাদান থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য হতে দেয় না পেটকে আরাম রাখে। এতে রয়েছে প্রচুর এনার্জি বা শক্তি যেটি শরীরের অবসাদ বা ক্লান্তি দূর করে। এক ধরনের কালো কিসমিস রয়েছে যেটি মেটাবলিজমে ভূমিকা রাখে। আবার এতে রয়েছে পটাশিয়াম, খনিজ পদার্থ, আয়রন ইত্যাদি যেগুলো পর্যায়ক্রমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, পুষ্টি বৃদ্ধিতে, এবং অন্ত্রের সমস্যা দূর করতে কার্যকরী পদক্ষেপ রাখে। 

বাট এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি যেটা শরীরে ওজন বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করে। বিদায় বেশি পরিমাণ খেলে গর্ভবতী নারীর উপকারীর চাইতে ক্ষতি বেশি করে। আবার কিসমিসে রয়েছে পরিবারে বেশি মিষ্টি যেটা কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার একটা উপাদান। এক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে খেলে গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা এবং ভ্রূণের টাইপ ২ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা থাকে। তো অবশ্যই এজন্য বেশি পরিমাণ যেন খাওয়া না হয় এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। দিনে এক দুই কাপের বেশি খাওয়া যাবেনা। গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা কতটুকু বুঝতে পেরেছেন মনে করছেন?

গর্ভাবস্থায় কমলা খেলে কি হয়?

গর্ভাবস্থায় কমলা খেলে কি হয় বিষয়টি আলোকপাত করছি। গর্ভাবস্থায় যেমন অন্যান্য ফল খাওয়া যায়, তদ্রুপ কমলালেবুও খাওয়া যায়। কমলালেবু প্রচুর পুষ্টিগুণ ও উপকার সমৃদ্ধ একটি ফল। ভিতরে রয়েছে ভিটামিন b6, ভিটামিন সি, জিংক, আয়রন এবং পটাশিয়াম সহ অন্যান্য খনিজ উপাদান। গর্ভাবস্থায় এই কমলা ফলটা খেলে গর্ভবতী নারী যেমন উপকৃত হবে অনুরূপ গর্ভস্থ ভ্রূণ টাও ভালো ও সুস্থ থাকবে। 

গর্ভাবস্থায়-কমলা-খেলে-কি-হয়

যেহেতু এর ভিতরে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি বিধায় এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আবার এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম যেটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে রয়েছে জিংক এবং আয়রন যেটি গর্ভবতী নারীর জন্য খাওয়ার নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য এক্সপার্টগন। কমলা লেবু গর্ভ অবস্থায় গর্ভবতী নারীর ত্বক, চুল, চোখ এবং স্বাস্থ্যের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ টানটান করে রাখে যেহেতু এর ভেতরে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। 

তবে অন্যান্য ফলগুলোর নেই খুব বেশি পরিমাণ খাওয়া যাবে না। সবকিছুর একটা মাত্রা রয়েছে, মাত্রা অতিরিক্ত হলেই উপকার না হয়ে ক্ষতি হয়ে যাবে। কাজেই দিনের বেলায় একটি বা দুইটি গর্ভাবস্থায় কমলালেবু খান এবং নির্দিষ্ট উপকার গুলো গ্রহণ করুন।

গর্ভাবস্থায় মালটা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় মালটা খাওয়ার উপকারিতা আলোকপাত করছি। মালটা হচ্ছে কমলালেবুর মতোই একটি ফল। আর মালটার ও উপকার গুলো প্রায় কমলালেবুর মতোই। যেহেতু এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি এবং আরো অন্যান্য ভিটামিন। তাই এটি খেলে শরীরের যেমন শক্তি বাড়বে অন্যান্য পুষ্টির ও যোগান দিবে। পাশাপাশি এতে রয়েছে বিভিন্ন খনিজ উপাদান যেমন পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, আয়রন এবং আরো একাধিক উপাদান। 

আরো পড়ুনঃ শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় জেনে রাখুন

মাল্টা কমলালেবুর মতোই দৈনিক দুই একটা করে গর্ভবতী নারীকে খাওয়া উচিত। তাহলে কমলালেবুর মতই বিভিন্ন উপকার পাবে। যেমন চামড়া বা ত্বকের উপকার, চুলের উপকার এবং চোখের উপকার ইত্যাদি। পাশাপাশি যেহেতু এর ভেতরে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সেহেতু শরীরকে নানার উপায়ে ডিটক্সিফাই করবে। আবার এটি শরীরের উপকারী পানি যোগান দিতে সাহায্য করবে অর্থাৎ শরীরকে হাইড্রেট করবে ডিহাইড্রেশন দূর করবে। গর্ভাবস্থায় মালটা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে মোটামুটি আইডিয়া পেয়েছেন তাই কি না?

লেখকের শেষ মন্তব্য

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সহ ও সংশ্লিষ্ট আরো বিষয়গুলো আলোকপাত করেছি উল্লেলিখিত আর্টিকেলটিতে। প্রিয় পাঠক আপনি যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি করে কিঞ্চিত উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আমাদের সাথে থাকবেন। আর মন্তব্যের জায়গায় মন্তব্য করবেন যে আমাদের এই আর্টিকেলটির দ্বারা আপনার কি কি অজানা জানা হয়ে গেছে এবং আপনি আপনার জ্ঞান সমৃদ্ধ করতে পেরেছেন। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা যদি উপকৃত হন অবশ্যই আপনি আমাদের পাশে থাকবেন আরও এরকম সুন্দর সুন্দর আর্টিকেল পেতে ইনশাআল্লাহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url