ঈদুল আজহার সুন্নত সমূহ - ঈদুল আযহার দিনের আমল

কোরবানি সম্পর্কে কোরআনের আয়াতঈদুল আজহার সুন্নত সমূহ আমল হিসাবেও সাব্যস্ত। ঈদুল আজহা মানে কোবানির ঈদ বা উৎসব বা আন্দন। ঈদ মুসলমানদের জন্য আনন্দ-উল্লাসের মুহুর্ত। মুসলিমদের ২টি ঈদ ১টি ঈদুল আজহা বা কুরবানির ঈদ, আর ২য় ঈদুল ফিতর বা রমজানের রোজা শেষের ঈদ। 

ঈদুল-আজহার-সুন্নত-সমূহ

ঈদ মো'মীন মুসলমান হৃদয়ে খুশির আমেজ ও বন্যা বইয়ে দেয়। আজকের ব্লগে ঈদুল আজহার সুন্নত বা কোরবানীর ঈদের কি আমল করতে হয় সেগুলো এখানে পেশ করব ইনশাআল্লাহ্‌।

পেজ সূচীপত্রঃ ঈদুল আজহার সুন্নত সমূহ বা আমলগুলো জানুন

ঈদুল আজহার সুন্নত সমূহ

ঈদুল আজহার সুন্নত সমূহ কি কি এখানে সেগুলো স্পষ্ট করে লেখা চেষ্টা করছি। প্রিয় পাঠক, ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদের কিছু আমল বা কাজ রয়েছে যেগুলো আল্লাহর রাসূল করতেন। আর আল্লাহর রাসূল ঈদুল আযহা তথা কুরবানীর ঈদের দিন করতেন বিধায় এই আমলগুলো হচ্ছে সুন্নত। তো ঈদুল আযহার দিনের সুন্নত সমূহ যেগুলো আপনার জানা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এগুলো জেনে রাখার মাধ্যমে আপনি আমলগুলো করতে পারবেন এবং সওয়াব অর্জন করবেন। পাশাপাশি আপনার ইহকালকে শান্তিময় এবং পরকালকে মুক্তির মাধ্যম হিসেবে সুন্নতি আমলগুলোকে পরিচালনা করবেন। তো চলুন নিচে পর্যায়ক্রমে আমলগুলো দেখার চেষ্টা করি। 

আরো পড়ুনঃ যাকাতের গুরত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে যত মর্মকথা বিস্তারিত জানুন

ফজরে ঘুম থেকে উঠাঃ ফজরের আজান হওয়ার সাথে সাথে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে প্রয়োজনীয় প্রয়োজন থেকে প্রয়োজন মিটিয়ে পাকসাফ বা পবিত্রতা অর্জন করতে হবে। এরপর জামায়াতের সাথে হুজুরের সালাত আদায় করতে হবে।দ্রুত গোসল সেরে নেওয়া। এরপরে খুব সকাল সকাল গোসল করতে হবে। আর গোসল করতে হবে আধুনিক জামানার সাবান শ্যাম্পু দিয়ে যাতে করে শরীর ও তো-পবিত্র হয়ে যায় এবং সুন্দরভাবে পরিষ্কার হয়ে যায়। 

সুন্দর ও উত্তম পোশাক পরিধান করাঃ গোসল করার পর ঈদগাহে যাওয়ার জন্য বা নির্দিষ্ট যে জায়গায় ঈদ পড়বেন সেখানে যাওয়ার জন্য সুন্দর ও উত্তম পোশাক পরিধান করতে হবে। এক্ষেত্রে যে নতুন পোশাক করতে হবে ব্যাপারটি এমন নয়। সুন্দর বলতে যে কাপড়টি আপনার রয়েছে সেটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং আপনার কাছে যেটি ভালো এবং ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তম হলেই চলবে। যেমন সাদা পোশাক পরলেন।

আতর, সুরমা ব্যবহার করাঃ যারা পুরুষ তাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন আতর বা ফুলের সুঘ্রান ওয়ালা তরল ব্যবহার করতে হবে। তবে সেই আতর বা খুশবুটি যেন ন্যাচারাল হয় মানে ফুলের হয়। এক্ষেত্রে হাদিসে নিষিদ্ধ কোন আতর ব্যবহার করা যাবে না। মহিলারা ঘ্রাণ ব্যবহার করতে পারবে যেগুলো সাধারণত ফুলের সাথে অন্য কোন উপাদান দিয়ে ঘ্রাণ তৈরি করা হয়।

পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়াঃ আতর যুক্ত পোশাক পরিধান করার পর আপনাকে পায়ে হেঁটে আপনার নির্দিষ্ট মুসল্লা বা ঈদগাহে যেতে হবে, যেখানে আপনি ঈদের দুই রাকাত নামাজ পড়বেন। এক্ষেত্রে খুব মাজুর বা নিরুপায় না হলে গাড়ি বা ঘোড়া কোন কিছুতে না যাওয়াই বেটার। কারণ পায়ে হেঁটে গেলেই যত পদক্ষেপ নেবেন তত সওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ।

ঈদগাহে বাচ্চাদেরকে নিয়ে যাওয়াঃ বাচ্চারা হচ্ছে পরিবারের খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং স্নেহাস্পদ সদস্য। বাচ্চা আছে বলেই পরিবারটা এত সুন্দর। জান্নাতে চিরকাল বাচ্চা থাকবে এমন বাচ্চাদেরকে দিয়ে জান্নাতি ব্যক্তিদের বিভিন্ন খিদমত করানো হবে। বাচ্চারা জান্নাতিদের আশপাশে ঘুরবে এটা দেখতে খুব ভালো লাগবে। তাই এক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই বাচ্চাদের ঈদের নামাজ পড়ার জন্য নিয়ে যাবেন। কারণ ঈদ হচ্ছে আনন্দ সুখের জিনিস এই আনন্দ আপনার বাচ্চাদের সাথেও শেয়ার করবেন।

তাকবির পড়তে পড়তে যাওয়াঃ এরপরে ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবীর পড়তে পড়তে ঈদগাহে যেতে হবে। পুরুষরা উচ্চস্বরে তাকবীর পড়বে আর মহিলারা নীরবে বা নিচু আওয়াজে যাতে পাশের বেগানা পুরুষ না শুনতে পাই। আর তাকবীরগুলো এভাবে বলতে হবে, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, অ লিল্লাহিল হামদ। 

খুতবা শ্রবণ করাঃ এরপরে নির্দিষ্ট ঈদগাহে গিয়ে কোন নফল বা ইত্যাদি নামাজ না পড়ে বসে পড়া নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। এবং সময় হলে ইমামের সাথে দুই রাকাত ঈদের নামাজ পড়ে ইমামের খুতবা স্মরণ করতে হবে। কারণ খুতবা হচ্ছে ঈদের একটা অংশ। ঈদের নামাজ এক অংশ আর খুতবা হচ্ছে আরেক অংশ। কেউ খুতবা না আসলে বাড়ি আসলে বুঝে নিতে হবে, সে পূর্ণ ঈদ পড়ে বাড়ি ফিরল না।

রাস্তা পরিবর্তন করাঃ যে রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যা হয়েছে তার ভিন্ন রাস্তা দিয়ে যথাসম্ভব আসার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবারা এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহ ময়দানে ঈদ করতে যেতেন এবং ভিন্ন রাস্তা দিয়ে এরপরে বাড়ি আসতেন। এবং আসার সময় তাকবির পড়তে পড়তে আসতে হবে। 

কুরবানী করাঃ অবশেষে, অর্থাৎ ঈদ পড়ে আসার পর যেটা সর্বপ্রথম কাজ সেটি হচ্ছে কোরবানির জন্য যে জন্তুটি সেটি জবেহ করা বা কোরবানি করা। কারণ আল্লাহর রাসূলের বর্ণনা রয়েছে যে, ঈদের দিনের কর্তব্য হচ্ছে সর্বপ্রথম ঈদের সালাত আদায় করা এরপরে সালাত আদায় শেষে নির্দিষ্ট কুরবানী করার জায়গায় কুরবানীর পশুটিকে কোরবানি করে দেওয়া।

প্রিয় পাঠক, উল্লেখিত ১০ টি ঈদুল আজহার সুন্নত সমূহ বা ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদের যে সুন্নতগুলো লেখা হলো সেগুলো পালন করার চেষ্টা করুন। আর এই সুন্নতগুলো পালন করার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতকে সুন্দর করুন। ঈদ যেহেতু বৎসরে দুইবার আসে সেহেতু এটা বারবার আসবে না আল্লাহর রাসূলের সুন্নত বা আমলগুলো যথাযথ কর্তব্যের সাথে পালন করুন তাহলে এই ঈদ আনন্দ আরো দ্বিগুণ তিনগুন হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

ঈদুল আযহার দিনের আমল

ঈদুল আযহার দিনের আমল গুলো লিখছি। ঈদুল আযহা কোরবানির ঈদের দিন যে সমস্ত আমল করতে হয় সেগুলো আমরা ইতিমধ্যে লিখে ফেলেছি এরপরও এখানে সংক্ষিপ্ত ভাবে লিখতে যাচ্ছি। ঈদের দিনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশ কিছু আমল করতেন। ঈদুল ফিতর এর দিন আমল করার ধরন এক রকম আর ঈদুল আযহার দিনের আমল ছিল আরেক রকম।

ঈদুল-আযহার-দিনের-আমল

এখানে ঈদুল আযহা তথা কুরবানীর ঈদের দিনে যে আমলগুলো করা হয় সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করছি।
  1. জামায়াতের সাথে ফজরের সালাত আদায় করা 
  2. দ্রুত গোসল করে ফেলা 
  3. সুন্দর উত্তম পোশাক পরিধান করা 
  4. আতর ও সুরমা ব্যবহার করা 
  5. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া 
  6. তাকবীর পড়তে পড়তে ঈদ পড়তে যাওয়া 
  7. বাচ্চাদেরকে ঈদগাহে সাথে করে নিয়ে যাওয়া 
  8. দুই রাকাত ঈদের নামাজ পড়া 
  9. নামাজ পরে ইমামের খুতবা শোনা
  10. ঈদগা থেকে ভিন্ন রাস্তা দিয়ে বাড়ি আসা 
  11. বাড়ি এসে নখ, গোঁফ ইত্যাদি কেটে ফেলা  
  12. এরপরে সামর্থ্যবান হলে কোরবানির ঈদের জন্তু থাকলে সেটি কোরবানি করা ইত্যাদি।

ঈদুল আযহার কুরবানী বা কুরবানীর ঈদ ২০২৪

ঈদুল আযহার কুরবানী বা কুরবানির ঈদ ২০২৪ সম্পর্কে লিখছি। ২০২৪ সালের কোরবানির ঈদ তথা ঈদ উল আযহার জুন মাসের ১৭ তারিখে সংঘটিত। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে যে ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদ আসবে সেটি আজকে থেকে এক বছর পর। ঈদ মানে ফিরে আসা বা ফিরা। যেহেতু মুসলিমদের ঐতিহ্যবাহী দুইটি ঈদ প্রতিবছর বারংবার ফিরে আসে বিধায় এর নাম হচ্ছে ঈদ। 

আর ঈদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বাণীতে আল্লাহ রাসুল (স), যখন তিনি মদিনায় ভিন্ন ধর্মীয় দুইটি উৎসব দেখলেন, এ সময় বললেন যে হে মুসলমানেরা তোমাদের জন্য দুইটি উৎসব দেওয়া হয়েছে তথা ঈদ দেওয়া হয়েছে। আর সেই দুইটি ঈদের হচ্ছে একটি ঈদুল ফিতর আর অপরটি ঈদুল আযহা। ঈদ মানে এখানে তাহলে উৎসব আর আযহা মানে কুরবানী। তাহলে সমন্বিত অর্থ হলো কুরবানীর জন্য যে উৎসব সেটি হচ্ছে ঈদুল আযহা। 

ঈদুল আযহা তে যে জন্তু বা পশুগুলো কুরবানী বা যবেহ করা হয় সেগুলোকে কুরবানীর পশু বা জন্তু বা কুরবানী বলা হয়। কোরবানি মানে নৈকট্য অর্জন করা। অর্থাৎ পরিভাষায় কুরবানী হচ্ছে, আল্লাহর সন্তুষ্ট্রি অর্জনের জন্য বা নৈকট্য অর্জনের জন্য নির্দিষ্ট পশু গুলোকে জিলহজ মাসের ১০ তারিখে উৎসর্গ করা। ইতিমধ্যেই ২০২৪ সালে আরবি মাস জিলহজ্জ এর ১০ তারিখ কুরবানী সম্পন্ন হলো আলহামদুলিল্লাহ।

ঈদুল আযহার তাকবীর

ঈদুল আযহার তাকবীর সম্পর্কে লিখছি। ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে কিছু দোয়া বা বড়ত্বের জন্য কিছু শব্দ রয়েছে সে শব্দগুলো বলতে হয়। যেমন আল্লাহ বলছেন সূরা মুদ্দাসসিরের মধ্যে যে তুমি তোমার প্রভুর বড়ত্ব ঘোষণা করো বা তাকবীর বল। সূরা হজ্জ বলছেন আল্লাহ তায়ালা, নির্দিষ্ট ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদের দিনে তোমরা তাকবীর বা আল্লাহ তায়ালার বড়ত্ব বা মহানত্ব বা বিশালত্ব ঘোষণা করতে থাকো। 

এই তাকবীরগুলো হচ্ছে এরকম- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হাম। এখানে প্রথমে আল্লাহু আকবার চারবার অথবা তিনবারও বলা যায় যেটা হাদিসের মধ্যে একেক জায়গাতে একেক রকম রয়েছে। আর বাকিগুলো একই রকম। অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু একবার আর শেষে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার দুইবার এবং সবশেষে ওয়ালিল্লাহিল হামদ একবার। আরেকটি এর সাথে যুক্ত করা হয় যে বাক্যগুলো সেগুলো হচ্ছে- 

আল্লাহু আকবার কাবিরা আলহামদুলিল্লাহি কাসিরা সুবহানাল্লাহি বুকরাতাও ওয়া আসিলা। তোর শেষের এই শব্দগুলো বা বাক্য গুলোর ক্ষেত্রে যে বর্ণনা রয়েছে সেগুলো কেউ বলছেন দুর্বল, আবার কেউ বলছেন বলা যাবে সমস্যা নেই। তো ঈদুল আযহার তাকবীর গুলো আইয়ামে তাশরিক অর্থাৎ কুরবানীর ঈদের পরের তিনদিন পর্যন্ত বলার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। বললে অজস্র সওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।

ঈদুল আযহার তাৎপর্য ও শিক্ষা

ঈদুল আযহার তাৎপর্য শিক্ষা সম্পর্কে লিখছি। ঈদুল আযহা তথা কুরবানীর ঈদ থেকে যে সমস্ত শিক্ষা পাওয়া যায় আর শিক্ষাগুলো খুবই তাৎপর্য ও গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো এখানে আলোচনায় আসছে। প্রিয় পাঠক, ঈদুল আযহার বিশেষ যে শিক্ষাগুলো সেগুলো এখানে পর্যায়ক্রমে লিখব তবে আপনাকে বুঝতে হবে যে ঈদুল আযহার উদ্দেশ্যটা কি? ঈদুল আযহা তথা কুরবানীর ঈদের উদ্দেশ্য হচ্ছে কুরবানীর পশুটাকে আল্লাহর জন্য জবেহ করা। আল্লাহর জন্য মানে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য বা আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের জন্য বা আল্লাহকে পাওয়ার জন্য। যাইহোক, চলুন নিচে ঈদুল আযহার গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ শিক্ষাগুলো লিখছি।

  • তাকওয়া তথা আল্লাহ ভীতি শিখায়। 
  • ঈদ তথা খুশি শেয়ার করতে শিখায়।
  • পাক পবিত্রতা অর্জন করা শিখায়।
  • সুন্দর সুন্দর পোশাক পরিধান করতে শিখায়। 
  • আতর বা সুরমা ব্যবহার করতে শেখায়। 
  • মেহমানদারী করতে শেখায়। 
  • ত্যাগ করতে শিখায়।
  • অন্যকে সাহায্য করতে শিখায়। 
  • হাসতে শিখায়। 
  • বিসর্জন করতে শিখায়। 
  • সাহস অর্জন করতে শিখায়। 
  • অন্যকে দিতে শিখায়। 
  • সহযোগিতা করতে শেখায়। 
  • আদর করতে শিখায়।
  • জামায়াতবদ্ধতা শিখায়।
  • আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করতে শেখায়। 
  • নামাজ পড়তে শেখায়। 
  • দান করতে শেখায় ইত্যাদি।

ঈদুল আযহা সম্পর্কে কোরআনের আয়াত

ঈদুল আযহা সম্পর্কে কোরআনের আয়াত লিখছি। প্রিয় পাঠক, ঈদুল আযহা তথা কুরবানীর ঈদ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত যেগুলো রয়েছে সেগুলো খুব কম। গবেষণা করে দেখা যায় ঈদুল আযহা তথা কুরবানীর ঈদ সম্পর্কে তথা কুরবানী করা সম্পর্কে যে আয়াতগুলো সেগুলো হাতে গোনা কয়েকটা বললেই চলে। নিম্নে ঈদুল আযহা তথা কোরবানির ঈদ সম্পর্কে বা কুরবানী করা সম্পর্কে কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করছি। চলুন দেরি না করে আয়াতগুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। 

একটি আয়াত হচ্ছে যেটা সূরা কাওসার এ রয়েছে, আল্লাহ বলছেন ফা ছল্লি লি রব্বিকা অনহার অর্থাৎ হে নবী তুমি তোমার রবের জন্য নামাজ পড়ো এবং কুরবানী করো। আয়াতটিতে আল্লাহ তা'আলা প্রথমে বললেন যে নামাজ পড়তে হবে এরপর বললেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তোমার পশুটিকে যবেহ কর তথা কোরবানি করো। অত্র আয়াত থেকে এটাই বুঝা গেল যে কুরবানী কবুল হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে নামাজ পড়তে হবে। 

আপনি যদি নামাজ না পড়েন তাহলে কোন আমলই আল্লাহর কাছে পৌঁছবে না সেটি কুরবানি বা অন্য যে কোন আমল হোক। সূরা হজ্জের মধ্যে আল্লাহ তাআলা বলছেন, আল্লাহর কাছে কুরবানীর জন্তু বা পশুর গোশত এবং রক্ত পৌঁছায় না। আল্লাহর কাছে যেটি পৌঁছায় সেটি হচ্ছে আল্লাহ ভীতি তথা তাকে কে কতটুকু ভয় করছে। আল্লাহর ভয়ের অর্থ হলো তার নির্দেশনা বলি কে গ্রাহ্য করা, মান্য করা, 

এবং নিষিদ্ধ বিষয়গুলিকে অগ্রাহ্য বা অমান্য করা বা সেগুলো থেকে বিরত থাকা বা বেঁচে থাকা বা না করা। যার ভিতরে আল্লাহর ভয় রয়েছে তার দ্বারা কোনো অন্যায় অশ্লীল কাজ হবে না এবং খারাপ কোনো বিষয়ের সাথে জড়িত, সংশ্লিষ্ট হবে না। প্রিয় পাঠক, এই কুরবানীর মাধ্যমে যদি আল্লাহকে পেতে চান তাহলে আল্লাহর ভয়টা সর্ব প্রথম অন্তরে ধারণ করতে হবে। তাহলে এ কোরবানি করার সার্থকতা অর্জন হবে ইনশাআল্লাহ।

ঈদুল আযহা সম্পর্কে রাসূলের হাদিস

ঈদুল আযহা সম্পর্কে রাসূলের হাদিস লিখছি। ঈদুল আযহা তো তা কোরবানির ঈদ সম্পর্কে যে হাদিস গুলো আছে সেগুলোর ভিন্নতা রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (সারমর্ম তথা হাদিসের বুঝটা বলছি) যারা ঈদের নামাজের আগে খুব কুরবানী করবে তাদের কুরবানী কবুল হবে না। আলা রাসুল অন্য জায়গায় বলছেন যারা সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও কুরবানী দেয় না তারা যেন ঈদের নামাজে ঈদগাহে না যায়। 

এখানে আল্লাহর রাসূল কড়া ভাবে নিষেধ করলেন যে যদি কারো সমর্থ্য থাকে তারপরও কুরবানীর না দেয় তাহলে ঈদগাহে যাওয়া সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। অথচ ঈদগাহে গেলে হাজারো মানুষের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হবে মন পরিষ্কার হবে, মন ফুর্তি হবে। এবং অনেক আনন্দ উল্লাস হবে। মানুষের সাথে কথা হবে, দেখা সাক্ষাৎ হবে, কুশল বিনিময় হবে, একদিন আর একজনের বিভিন্ন অবস্থা সম্পর্কে জানা জানি হবে।  

ঈদুল-আযহা-সম্পর্কে-রাসূলের-হাদিস

এ বিষয়গুলো করলে আপনার মনের ভিতর একটা ফুরফুরা অনুভব বা অনুভূতি জাগ্রত হবে। ফলে আপনার দেহে একটা শক্তি আসবে মানসিক শক্তির মাধ্যমে আর মানসিক শক্তিটা আসছে ঈদের আনন্দের কারণে। আর আপনি সামর্থ্যবান অথচ আপনি কোরবানি করছেন না বা দিচ্ছেন না তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূলের ভাষ্য অনুসারে ঈদগাহের মাঠেও যেতে পারবেন না এবং ঈদ সংশ্লিষ্ট আনন্দ ভাগাভাগিও করতে পারবেন না। 

তাই সাবধান সামর্থ্য হলেই কুরবানী করুন। সামর্থ্য থাকার অর্থ হচ্ছে, শরীয়ত প্রণেতাগণ বলেছেন যাকাত বের করতে হলে যেমন সামর্থ্য থাকা লাগে কুরবানী করতে হলেও তেমনি সামর্থ্য থাকা লাগবে ইত্যাদি।

ঈদুল আযহার দোয়া

ঈদুল আযহার দোয়া সম্পর্কে লিখছি। প্রিয় পাঠক, ঈদুল আযহা তথা কোরবানির ঈদে যে দোয়া বলা হয় সেটা হচ্ছে তাকবীর। তাকবীর গুলোই হচ্ছে এক ধরনের দোয়া। অর্থাৎ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ এটা সারাদিন এবং ঈদের পরের তিনদিন পর্যন্ত পড়তে থাকা। এছাড়াও আরো বিভিন্ন দোয়া রয়েছে যেগুলো পড়তে পারা যায়। যেমন আপনি আল্লাহর কাছে তওবা করলেন ইস্তেগফার করলেন, তো ক্ষেত্রে তওবা ইস্তেগফার ও এক ধরনের দোয়া। 

এছাড়াও আপনি আল্লাহর কাছে কিছু চাইলেন, এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেন মাফ চাইলেন, আপনি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন ইত্যাদি। আর এই চাওয়া গুলো আরবিতে হতে পারে বাংলাতে হতে পারে কোন সমস্যা নেই। যদি এই দোয়া নামাজের বাইরে করা হয় তাহলে বাংলা আরবি যেকোনোটাই করা যায়। আর যদি নামাজের ভিতরে করতে হয় তাহলে আরবিতে করতে হবে যদি সেটা ফরজ নামাজ হয়। আর নফল নামাজে বৈঠকে বসে বাংলাতেও দোয়া করা যায় বিশ্লেষকদের মতে। 

ঈদুল আযহার করণীয়

ঈদুল আযহার করণীয় তথা ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদে যে কাজগুলো করতে হবে বা যে সুন্নতগুলো আদায় করতে হবে সেগুলো আমরা ইতিমধ্যেই আলোকপাত করেছি। প্রিয় পাঠক, বিষয়গুলো আবারও সুস্পষ্ট করছি। চলুন জেনে নেওয়া যাক যে ঈদুল আযহার করণীয় তথা কুরবানীর ঈদে কি করতে হবে। কুরবানীর ঈদের সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হবে সেটা হচ্ছে, রাত্রে এশা সলাত জামাতের সাথে আদায় করে দ্রুত শুয়ে যেতে হবে। 

এবার ফজরে অতি দ্রুত উঠে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে পাক পবিত্রতা অর্জন করে জামাতের সাথে সালাত আদায় করতে হবে ফজরের। এরপর দোয়া-দরুদ জিকির-আজকার তাসবিহ তাহলিল তাকবীর পাঠ করে সকাল সকাল গোসল করে নিতে হবে। এরপর উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করে আতর সুরমা ব্যবহার করতে হবে। এরপরে পায়ে হেঁটে ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহ এর উদ্দেশ্যে বের হয়ে যেতে হবে। 

আরো পড়ুনঃ নফল রোজার ফজিলত এর যত আলোচনা বিস্তারিত জানুন

যেতে যেতে তাকবীর পড়তে হবে। ছোট বাচ্চা, শিশু কিশোরদেরকে সাথে করে নিয়ে যেতে হবে। এরপরে নামাজ পড়তে হবে ঈদের দুই রাকাত। এরপর ঈদের নামাজ পর ইমাম বা খতিব সাহেবের মনোযোগ সহকারে খুতবা শুনতে হবে। এরপরে বাড়ি ফিরে আসতে হবে যে রাস্তা দিয়ে যাওয়া হয়েছে তার ভিন্ন রাস্তা যদি থাকে তাহলে সে রাস্তা দিয়ে। আর তাকবীর পড়তে থাকতে হবে এক্ষেত্রেও বাড়ি ফেরার পথে। এবং বাড়ি এসে ঈদের পশু জবেহ করতে হবে। 

এরপরে, সকাল বেলা না খেয়ে কোরবানির গোশত দ্বারা খানা খেতে হবে। যেটাকে হাফ রোজাও বলা হয়। সবশেষে, চুল, নখ ও গোঁফ ইত্যাদি কাটতে হবে। এরপরে, ঈদের গোশত রান্না করে নিজে খেতে হবে এবং গরিব মিসকিন এবং পাড়া প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনকে ডেকে খাওয়াতে হবে। এগুলোই হচ্ছে সাধারণত ঈদুল আযহার দিনের করণীয়।

লেখকের শেষ মন্তব্য

ঈদুল আজহার সুন্নত সমূহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সহকারে লিখার চেষ্টা করেছি। প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করলে বুঝতে পারবেন যে ঈদের দিনে আসলে কি কাজ করা হয় এবং কোন কাজগুলো আল্লাহ রাসূল (সা) এর সুন্নত ছিল সে সম্পর্কে। আরো এরকম নিত্য নতুন উপকারী আর্টিকেল বা ব্লগ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন এবং আমাদেরকে বিভিন্ন উপায়ে সাপোর্ট করুন ইনশাআল্লাহ। যেমন, কমেন্ট করতে পারেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ইত্যাদি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url