বেশি বেশি ইস্তেগফার এর ফজিলত ব্যাপারটি মানুষের অবিচ্ছেদ্য অংশ
নফল রোজার ফজিলত এর যত আলোচনাবেশি বেশি ইস্তেগফার এর ফজিলত বিষয়টি আজকের ব্লগটিতে জানানোর জন্য এসেছেন তাই না প্রিয় পাঠক। ইস্তেগফার বিষয়টি মানব জীবনের জন্য একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করা জরুরী। কারণ এই ইস্তেগফারের মাধ্যমে অনেক বড় বড় বিপদ-আপদ কেটে যায় এবং রুজির দরজা খুলে যায়।
কোনো মানুষ বা জ্বীন পাপ করে বসে না থেকে আল্লাহর কাছে তওবা ও ইস্তেগফার করলে জীবনে এমন কিছু ফলাফল এবং বরকত নেমে আসবে যা সে কল্পনা করতে পারবেন। তো চলুন বিষয়টি বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক!
পেজ সূচীপত্রঃ বেশি বেশি ইস্তেগফার এর ফজিলত ব্যাপারটি যে মানুষের অবিচ্ছেদ্য অংশ বিষয়টি জানুনবেশি বেশি ইস্তেগফার এর ফজিলত
বেশি বেশি ইস্তেগফার এর ফজিলত বিষয়টি এই জায়গায় আপনার সামনে পেশ করছি। সম্মানিত পাঠক সর্ব প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে যে ইস্তিগফার মানে কি? তো শুনুন, ইস্তেগফার শব্দটি আরবি গ্রামার বা ব্যাকরণ অনুপাতে বাবে ইস্তিফআল এর মাসদার। ইস্তেগফার শব্দটির আক্ষরিক বা আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থ হচ্ছে ক্ষমা চাওয়া বা ক্ষমাপ্রার্থনা করা।
আর পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে নিজের কৃত পাপের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে অনুনয়-বিনয়ের সাথে করজোরে মাফ চাওয়া বা ক্ষমা চাওয়া। এবার ইস্তেগফারের ফজিলত সংক্রান্ত আলোচনা করছি। ইস্তেগফারের নানাবিধ ফজিলত বা তাৎপর্য ও গুরুত্ব রয়েছে। আল্লাহ তাআলা সূরা মুহাম্মদ এর মধ্যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে বলছেন,
হে নবী ও রাসুল আপনি আপনার পাপের জন্য এবং বিশ্বাসী পুরুষ মহিলার জন্য আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলার কাছে ক্ষমা চান বা ক্ষমা প্রার্থনা করুন! (মহাম্মাদ-১৯)। আল্লাহ অন্য জায়গায় আল্লাহর রাসূলকে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে বলেছেন আর বলেছেন যে তিনি হচ্ছেন ক্ষমাশীল দয়ালু। হাদিসের ভিতরে আবু হুরায়রা বর্ণনায় রয়েছে,
আল্লাহর রাসূলের বাণী যে তিনি আল্লাহর শপথ করে বলছেন যার হাতে তার প্রাণ এ বলে, যে মানুষ্য জাতি যদি পাপ না করত তাহলে আল্লাহ তা'আলা এ জাতিকে দুনিয়ার বুক থেকে মুছে ফেলতেন। এবং এমন এক জাতি সৃষ্টি করতেন যে জাতি পাপ করত এবং ছোট হয়ে আল্লাহর কাছে মাফ চাইত আর আল্লাহ তাদের মাফ করে দিতেন।
আরো পড়ুনঃ যাকাতের গুরত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে যত মর্মকথা বিস্তারিত জানুন
হাদিসটি মুসলিমে রয়েছে। বুঝাই যাচ্ছে যে ইস্তেগফারের কি ফজিলত। ইবনে আব্বাস এর বর্ণনায় রয়েছে, আল্লাহর রাসূলের কথা যে, যে মানুষ সদা সর্বদা আল্লাহর কাছে মাফ চাইবে আল্লাহ তাআলা তার সকল ধরনের উত্তরণের পথ খুলে দিবেন। শুধু কি তাই এগুলো ক্ষান্ত হন নাই, আবার বলছেন সকল সব ধরনের চিন্তা-ভাবনা, দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনা প্রভৃতি থেকে মুক্ত করবেন।
আরো বলছেন আল্লাহর রাসূল যে তাকে অসংখ্য অকল্পনীয় রুজির বরকত দিবেন। ইমাম তিরমিজি এবং ইমাম হাকেম এর বর্ণনা, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের বর্ণনায় রয়েছে, যে বলবে চিরঞ্জিব চিরস্থায়ী আল্লাহর কাছে মাফ চাই এবং ফিরে যাই, তাহলে যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে আসার মত পাপ করলেও আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। হযরত আয়েশার বর্ণনায় রয়েছে,
যেটি বোখারি ও মুসলিম একত্রে বর্ণনা করেছেন যে, আলা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ বয়সে এসে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তের সময়গুলোতে বেশি বেশি ইস্তেগফার করতেন। এক্ষেত্রে তিনি বলতেন সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, আর বলতেন আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতুবু ইলাইহি। ইবনে উমার এর বর্ণনায় রয়েছে যেটি ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন,
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মে'রাজ এর রাত্রি থেকে ফিরে এসে মহিলাদের লক্ষ্য করে বললেন যে তোমরা বেশি বেশি দান করো এবং ইস্তেগফার কর কারণ আমি জাহান্নামে অধিকাংশ নারীদেরকেই দেখে আসলাম। বুঝা গেল জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হলে বেশি বেশি ইস্তেগফার এর কোন বিকল্প পথ নেই। কাজেই আল্লাহর কাছে প্রিয় বান্দা হতে চাইলে, এবং দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হতে চাইলে, এবং বেশি বেশি রুজি রোজগার পেতে চাইলে আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করুন অনেক বেশি।
ইস্তেগফার এর বিশেষ আয়াতগুলো
বেশি বেশি ইস্তেগফার এর ফজিলত এর ব্যাপারে অনেক কোরআনের আয়াত রয়েছে যে সম্পর্কে লিখার চেষ্টা করছি। সম্মানিত ও প্রিয় পাঠক, ইস্তেগফার এর সম্পর্কে কোরআন মাজীদের আয়াত জানতে চাইলে এই জায়গাটি ভালো করে পড়ুন যেগুলো বাংলায় আপনি জানতে পারবেন। সূরা নূহ এর আয়াতের ভিতরে আল্লাহ বলছেন, তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল।
অন্য জায়গায় আল্লাহ বলছেন হে বান্দা আল্লাহর কাছে মাফ চাও নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। আবার অন্য জায়গায় আল্লাহ বলছেন, তুমি তোমার রবের প্রশংসার সাথে তাসবীহ বর্ণনা করো এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও, কেননা তিনি হচ্ছেন তাওবা কবুলকারী বা ক্ষমা কারী।
আবার অন্য জায়গায় রাব্বুল আলামিন বলেন, বান্দারা যখন কোন খারাপ কাজ করে এবং নিজেদের প্রতি অন্যায় করে, সাথে সাথে আল্লাহকে স্মরণ করলে এবং তার কাছে ইস্তেগফার বা ক্ষমা চাইলে মহান সৃষ্টিকর্তা তাদের ক্ষমা করে দেবেন। কথাটা তিনি এভাবে বলছেন যে আমি আল্লাহ মাফ না করলে আর কে মাফ করবে?
ইস্তেগফার সম্বন্ধে বিভিন্ন হাদিস
বেশি বেশি ইস্তেগফারের ফজিলত সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস রয়েছে। যেমন হযরতে আনাস এর বর্ণনা, তিনি বলেন আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এই বলতে শুনেছি যে, হাদিসে কুদসির মধ্যে আল্লাহ রাসুল বলছেন, (সম্মানিত পাঠক হাদিসে কুদসি বলা হয় ওই হাদিসকে যে হাদিসটির মধ্যে আল্লাহ বলেছেন যে এমন ধরনের উক্তি উল্লেখ রয়েছে।)
তো এক্ষেত্রে হাদিসটির মধ্যেই আল্লাহ বলছেন, হে আদম সন্তান নিশ্চয়ই তুমি আমার কাছে যতক্ষণ দোয়া করবে চাইবে, এবং আশা করবে আমার কোন পরোয়া নেই আমি তোমাকে মাফ করতে থাকবো অর্থাৎ তোমার যত পাপরাশি থাকবে যত গুনাহ থাকবে তুমি যত অন্যায় করবা আমি সব ক্ষমা করে দেবো মাফ করে দিব।
আবারো হাদিসের ভিতরে আল্লাহ বলছেন হে আদম সন্তান যদি তোমার পাপ আসমান সমপরিমাণ হয় তারপরে তুমি আমার কাছে ইস্তেগফার কর বা মাফ চাও তাহলেও আমার কোন পরোয়া নেই আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেবো। আবার আল্লাহ বলছেন হাদীসটির ভিতরে হে আদম সন্তান যদি তুমি আমার কাছে জমিন সমপরিমাণ পাপ নিয়ে হাজির হও।
অতঃপর তুমি আমার সাথে কাউকে শরিক না করে মৃত্যুবরণ করো তাহলে আমি তোমার কাছে জমিন সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে হাজির হয়ে যাব। সুবহানাল্লাহ। হাদীসটি ইমাম তিরমিজি রহমতুল্লাহি তার সুনানে তিরমিজিতে বর্ণনা করেছেন। হাদিসের মান হাসান। তাহলে এই একটি হাদিস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে আল্লাহর কাছে যে কোন ছোট বড় গুনাহের জন্য মাফ চাইলে আল্লাহ তাআলা মাফ করবেন।
আর এক্ষেত্রে আল্লাহ মাফ করতে গিয়ে কারো কোন পরোয়া করেন না। নিরাশ হতাশ না হয়ে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে। পাপ করে আল্লাহর কাছে মাফ চাইলেই আল্লাহ ভালোবাসেন আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। এক হাদীসে রয়েছে যে পাপীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং উত্তম ব্যক্তি হচ্ছে ওরাই যারা আল্লাহর কাছে মাফ চাই ক্ষমা চাই।
পাপ করে শ্রেষ্ঠ হয়ে যায় মানুষ যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া যায়। সম্মানিত পাঠক, তাই দয়া করে বলছি আপনার পাপ হয়ে গেলে আপনি বসে থাকবেন না আল্লাহর কাছে মাফ চাবেন ইনশাআল্লাহ আল্লাহতালা মাফ দিবেন আপনি শ্রেষ্ঠ মানুষের রূপান্তরিত হবেন আল্লাহর কাছে।
ইস্তেগফার তাওবার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত
ইস্তেগফারের ৭০ বা ১০০ ফজিলত
ইস্তেগফারের ৭০ বা ১০০ ফজিলত এর মানে আমি বুঝাতে চেয়েছি যে দিনে বা রাতে এক দিনে ৭০ বার বা ১০০ বার করে ইস্তেগফার করতে হবে। কারণ আল্লাহর নবী বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার ব্যাপারে সূরাতুল ফাতহির ভিতরে বলা হয়েছে যে তার আগের এবং পরের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে তারপরও তিনি দিনে রাত্রে ৭০ বার বা ভিন্ন বর্ণনা মতে ১০০ বার তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন।
বিষয়টি হাদিস এভাবে এসেছে হযরতে আবু হুরায়রা বর্ণনা, তিনি বলছেন যে তিনি আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকে শুনেছেন, আর আল্লাহর রাসুল আল্লাহর শপথ করে বলেছেন যে, তিনি দিনে ৭০ বারেরও বেশি আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা ও ইস্তেগফার করতেন।
আর আমরা আল্লাহর পাপী বান্দা তাহলে আমাদের কতবার আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া লাগবে? ইবনে ওমরের বর্ণনায় রয়েছে তিনি বলছেন যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জায়গায় বসে থেকেই ১০০ বারেরও বেশি আল্লাহর কাছে তওবা ও ইস্তেখার করতেন। হাদী স্ত্রী ইমাম তিরমিজি এর গ্রন্থে রয়েছে।
সাইয়েদুল ইস্তেগফারের ফজিলত
বেশি বেশি ইস্তেগফার এর ফজিলত বিষয়টির সাথে সাইয়েদুল ইস্তেগফার বিষয়টি সম্পৃক্ত। খোলাসা করে বলার প্রয়াস করছি। তো চলুন ব্যাখ্যা করি। শাদ্দাদ ইবনে আওসের বর্ণনা যে তিনি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বরাত দিয়ে এইভাবে বলছেন যে, যে বা যারাই ইয়াক্বীনের সাথে সাইয়েদুল ইস্তেগফারের যে দোয়া এটা বলবে আর এটা যদি হয় দিনের বেলায়, আর সন্ধ্যার আগেই সে মৃত্যুবরণ করছে তাহলে সে জান্নাতি মানুষ হিসেবে গণ্য হয়ে যাবে।
আবার রাত্রের শুরুতে অর্থাৎ সন্ধ্যার সময় খুব দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে সাইয়েদুল ইস্তেগফারের দোয়াটা বলে এবং ফজর পর্যন্ত রাতের যেকোনো সময় সে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতি মানুষ হিসেবে পরিগণিত হয়ে যাবে সুবহানাল্লাহ। চলুন দেখে নেই সাইয়েদুল ইস্তেগফার দোয়াটার মধ্যে এমন কি হয়েছে যে সেটা বললে দিনে অথবা রাত্রে মরলে সে জান্নাত পেয়ে যাবে।
দোয়ার অর্থটা হচ্ছে এই হে আল্লাহ আপনি আমার প্রভু আপনি ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, আপনি আমার সৃষ্টিকর্তা আর আমি আপনার দাস। আর আমি আপনার ওয়াদা ও অঙ্গীকারের ওপরই থাকবো যতক্ষণ আমার দেহের শক্তি থাকবে। আমি আমার কৃত পাপ থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। আর আমার ওপরে যে আপনার নেয়ামত এর মাধ্যমে আমি আপনার কাছে সর্বদাই ফিরে আসি।
আর আমি আমার পাপের স্বীকারোক্তি করছি। সুতরাং হে প্রভু তুমি আমাকে ক্ষমা করো, তুমি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নেই। এই হলো সুন্দর একটা অর্থ যার কারণে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সাইয়েদুল ইস্তেগফারের বলার মাধ্যমে বান্দাকে জান্নাত দিয়ে থাকবেন। তাই আমরা সাইয়েদুল ইস্তেগফারটা সর্বদা বলার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। সাইয়েদুল ইস্তেগফারের হাদিসের বর্ণনাটি ইমাম বুখারি রহমতুল্লাহি আলাইহি তার সহীহ বুখারিতে বর্ণনা করেছেন।
তাওবা ও ইস্তেগফার এর দোয়া
তাওবা ও ইস্তেগফারের বিভিন্ন দোয়া রয়েছে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং তওবা করার যে দোয়াগুলো রয়েছে সেগুলো এখানে বলছে। কোরআন মাজীদের মধ্যে যে দোয়া রয়েছে সেগুলোর একটি হচ্ছে, রব্বানা জলম না আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফির লানা, লানা কু নান্না মিনাল খাসিরিন। দ্বিতীয় দোয়া হচ্ছে, রব্বিগ ফির অরহাম অআন্তা খাইরুর রাহিমীন।
আর তৃতীয় দোয়া হচ্ছে রাব্বিগ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা আনতাত তাওয়াবুর রাহীম। আর হাদিসে বর্ণিত তওবা ও ইস্তেগফারের দোয়া হচ্ছে এইগুলো। যেমন সবচেয়ে ছোট ইস্তেগফার হচ্ছে আস্তাগফিরুল্লাহ। এর চেয়ে একটু বড় হচ্ছে আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়াআতুবু ইলাইহি। এর চেয়ে আর একটু বড় হচ্ছে, আস্তাগফিরুল্লাহ আল্লাযি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম ওয়াআতুবু ইলাই।
এরপরে আরেকটি ইস্তেগফার হচ্ছে যেটি বিপদ-আপদে পড়লেও পড়তে হয় এবং হযরতে ইউনুস আলাইহিস সালামের দোয়া নামেও পরিচিত, লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমীন। এরপরে সবচেয়ে বড় এবং উত্তম দোয়া হচ্ছে সাইয়েদুল ইস্তেগফার।
যেমন- আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খলাকতানী ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা, ওয়া ওয়া'দিকা মাসতাত'তু আউজুবিকা মিন শাররি মা সনা'তু আবুউলাকা বিনি'মাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবূউ বি যানবি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আন্তা।
ইস্তেগফার এর উপকারিতা
ইস্তেগফারের বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে যেগুলো এখানে উল্লেখ করছে। কুরআন এবং হাদিস দ্বারা রিসার্চ করে যেগুলো খুব উল্লেখযোগ্য এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী এখানে লিখার চেষ্টা করছি। একটা আয়াতে বলা হয়েছে যে কেউ যদি ইস্তেগফারের মত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও দুয়ার কাজটা আদায় করতে পারে তাহলে তার জন্য পাঁচটি উপকারিতা রয়েছে। যেগুলো পর্যায়ক্রমে লিখছি।
- সর্বপ্রথমে আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিবেন
- এরপরে আল্লাহ তাআলা তার ক্ষেত খামারে প্রচুর রহমতের বারিধারা বর্ষণ করবেন
- এর পরে আল্লাহ তা'আলা তাঁর সম্পদ বৃদ্ধি করে দিবেন
- এরপর আল্লাহ তাআলা তাকে সন্তান-সন্ততি দান করে খুশি করবেন
- এরপরে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'য়ালা অসংখ্য দুনিয়াবী ও ফলমূলের বাগান এবং ঝর্ণাধারা দান করবেন
- আর আল্লাহ তাআলা তাকে পরকালে জান্নাত দিবেন এবং এমন নাজ নিয়ামত দান করবেন সে কল্পনাও করতে পারবে না যেগুলো কোত্থেকে আসলো।
আরো পড়ুনঃ হজ্জের নিয়ম সম্পর্কে যত বিষয় আছে বিস্তারিত জানুন
আর হাদিসে ইস্তেগফারের উপকারিতা এই ভাবে রয়েছে যে ইস্তেগফার তথা আল্লাহর কাছে মাফ চাইলে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তাআলা তাকে-
- সকল সংকীর্ণতা থেকে মুক্তি দান করবেন।
- এরপরে বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন।
- এরপর দুশ্চিন্তা এবং হতাশা মুক্ত করবেন।
- এরপর তার অকল্পনীয় জীবিকার ব্যবস্থা করে দিবেন।
- আর তাকে মুস্তাজাবুদ দাওয়া বানায়ে দিবেন অর্থাৎ সে যেটাই দোয়া করবে সেটাই আল্লাহতালা কবুল করে নিবেন। (সুবহানাল্লাহ)।
তাওবা ও ইস্তিগফারের পার্থক্য
তাওবাও ইস্তেগফারের পার্থক্য রয়েছে। তাওবা মানে হচ্ছে আল্লাহর কাছে বিনয়ের সাথে লজ্জিত অনুশোচিত হয়ে ফিরে আসা। আর ইস্তিগফার মানে হচ্ছে আল্লাহ তাআলার কাছে মাফ চাওয়া বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহর কাছে যেকোনো সময় ক্ষমা চাইলেই সেটা ইস্তেগফার বলে গণ্য হবে। আর তাওবা করার জন্য বিশেষ কিছু শর্তসাপেক্ষে আল্লাহর দিকে ফিরে এসে অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে আল্লাহর কাছে গভীরভাবে মাফ চাইতে হয়।
যেটা সাধারণত কাবীরা গুনাহ বা বড় পাপ হয়ে গেলে আল্লাহর কাছে বিশেষ ভঙ্গিমায় ক্ষমা চাওয়া লাগে সেটি হচ্ছে তওবা। তাওবা ও ইস্তেগফারের শব্দগত ও ব্যাকরণগত পার্থক্য রয়েছে। তাওবা শব্দটির মূল অক্ষর হচ্ছে তা, ওয়াও এবং বা। আর ইস্তেগফার শব্দের মূল অক্ষর হচ্ছে গইন, ফা এবং র। আর পারিভাষিক অর্থগত দিক থেকে তো ভিন্নতা রয়েছেই।
যাই হোক পার্থক্য যেটাই হোক না কেন, তাওবা এবং ইস্তিগফার দুইটা বিষয় একটা আরেকটার সাথে খুবই অঙ্গাঙ্গিভাবে ভাবে জড়িত ও সম্পৃক্ত। যেকোনো সময় তাওবার সাথে ইস্তেগফার করা যায় এবং ইস্তেগফারের সাথে তওবা করা যায়। তবে আবার শুধুমাত্র যেকোনো সময় শুধু ইস্তেগফার করতে হয়।
আর তাওবার জন্য বিশেষ মুহূর্তে সময় নির্ধারণ করে বিশেষ করে রাতের যে সময়টাতে সারা পৃথিবীর মানুষ ঘুমিয়ে রয়েছে সে সময়ে ঘুম থেকে উঠে আসমান জমীনের মালিক অধিপতি মহান শাহেনশা রাজাধিরাজ আল্লাহ তাহার কাছে বলতে হয় খুবই করজোড়ে বিনয়ের সাথে যে,
আল্লাহ আমার ভুল হয়েছে অন্যায় হয়েছে আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও এই হচ্ছে তাওবা। আর তাওবা করার মাধ্যমে মানুষ নিষ্কলুষ হয়ে যায় অর্থাৎ তার মায়ের পেট থেকে যেমন জন্ম নিলে যেমনটি নিষ্পাপ হয়ে থাকে সেরকম হয়ে যায়। শর্ত হলো যদি ওই তওবাটা আল্লাহর কাছে সত্যিকার অর্থে কবুল হয় তাহলে।
আব্দুন নূর আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url